Friday, December 19, 2014

৭০ লাখ টাকার রহস্য খুঁজতে দুদকের আড়াই বছর পার:নয়াদিগন্ত

সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে পাওয়া সেই ৭০ লাখ টাকার রহস্য এখনো মেলেনি। রহস্যজনক এই বিপুল টাকা নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলেও ঘটনাটি এখন প্রায় অন্ধকারে। টানা আড়াই বছর ধরে অনুসন্ধান-তদন্ত চালিয়ে প্রায় কান্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। উৎস সম্পর্কে এখনো কোনো সঠিক তথ্য জানতে পারেনি এই সংস্থাটি। এমনকি সেই গাড়ির চালক আজমের আজো কোনো সন্ধান মেলেনি।  দুদকের একাধিক
সূত্র জানায়, চাঞ্চলকর এই ঘটনাটি দুদক আমলে নিয়ে গুরুত্বের সাথে অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাঝপথে দুদকের এই তৎপরতা থেমে যায়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার প্রধান সাক্ষী গাড়িচালক আজমের কোনো বক্তব্য না পাওয়ায় দুদক বিষয়টি নিয়ে এগোতে পারছে না। এপিএস ওমর ফারুক ও সাবেক দুই রেলকর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ফল হয়নি। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনের জন্য এপিএস ওমর ফারুকই যথেষ্ট। কেননা যার গাড়িতে এই বিপুল টাকা পাওয়া গেছে, তিনি সে সময় (ওমর ফারুক) গাড়িতেই ছিলেন। সুতরাং টাকার উৎস সম্পর্কে তারই জানার কথা। এ ক্ষেত্রে দুদক ইচ্ছা করলে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ওমর ফারুক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন টাকাগুলো তার। কিন্তু টাকা তার বলে স্বীকার করলেও এ টাকার কোনো উৎস সম্পর্কে জানাননি তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই টাকার সাথে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে মনে করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে তাকে (সুরঞ্জিত) জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়নি। তবে এই টাকা জ্ঞাতআয়বহির্ভূত বলে নিশ্চিত হয়েছে দুদক। সেই রাতে তাহলে গাড়ি কোথায় যাচ্ছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এপিএস ফারুক বলেছেন, টাকা নিয়ে তিনি তার নিজের বাসায় যাচ্ছিলেন এবং এ টাকা তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, এপিএস ফারুকের গাড়িতে টাকা পাওয়ার ঘটনা সত্য এবং এ টাকা জ্ঞাতআয়বহির্ভূত। ৭০ লাখ টাকার বৈধ উৎস এখনো পাওয়া যায়নি। একই সাথে তিনি বলেন, ঘটনার প্রধান সাী সেই গাড়ির চালক আলী আজমকে পাওয়া গেলে অনেক বিষয় পরিষ্কার হতো। উল্লেখ্য ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল গভীর রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতর পিলখানার মূল ফটকে ৭০ লাখ টাকাসহ রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলকর্মকর্তা ইউসুফ আলী মৃধা, রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক এবং এপিএসের গাড়িচালক আলী আজমকে আটক করে বিজিবি সদস্যরা। ওই সময় তারা দাবি করেছিলেন, রেলমন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তাদের অপহরণ করার ল্েয গাড়ির চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবির ফটকের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। এরপর বিজিবির সদস্যরা টাকাসহ সবাইকে আটক করেন। ঘটনার জের ধরে ইউসুফ ও এনামুলকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ওমর ফারুককে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে ১৬ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।  সন্ধান মেলেনি গাড়িচালক আজমের : রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুকের ব্যক্তিগত গাড়িচালক আলী আজম কোথায়? আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও আলী আজমের খোঁজ মিলছে না। ঘটনার পর থেকে আলী আজমের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন এবং এ ব্যাপারে তার পরিবারের পক্ষ থেকেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে এই টাকা নিয়ে নাটকীয়তা এবং ঘটনার দায় চাপিয়ে দেয়া হলো গাড়িচালকের ওপর? গুঞ্জন চলছে জনমনে। ঘটনার পর রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, এ ঘটনা সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। আবার একই সময় তিনি ওই ঘটনার জন্য চালককে দায়ী করেছেন। বলেছেন, চালকই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। গাড়িতে বস্তাভর্তি টাকাগুলো চালক নিজে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছিল। আবার বলেছিলেন চালককে আটক করা হয়েছে। ঘটনা নিয়ে রেলমন্ত্রীর এপিএস এবং রেলওয়ে কর্মকর্তার বক্তব্যও ছিল পরস্পরবিরোধী। ওমর ফারুক বলেছেন, টাকাগুলো তার আত্মীয়ের। তিনি বলেছেন, ঘটনার সময় তার চালক মাদকাসক্ত ছিলেন, এ কারণে ভারসাম্য হারিয়ে সে এই কাজ করেছে। একই সাথে বলেছেন, চালক আলী আজম তার টাকাগুলো আত্মসাৎ করতে চেয়েছিল। তাকে টাকা না দেয়ায় সে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরের গেটে ঢুকে ঘটনা ভিন্ন দিকে নেয়ার চেষ্টা করে। অপর দিকে একই গাড়িতে ছিলেন রেলওয়ের জিএম (পূর্ব) ইউসুফ আলী মৃধা এবং রেলওয়ের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ইউসুফ আলী মৃধা ঘটনার ব্যাপারে বলেছিলেন, ওই টাকার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। এমনকি গাড়িতে টাকা রাখার বিষয়টিও তিনি জানতেন না বলে জানান। আবার পরক্ষণেই বলেছেন, ওমর ফারুক তালুকদার তার আত্মীয়ের টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন গাড়িতে। ঘটনা নিয়ে চালককে জড়িয়ে রেলমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য এবং এপিএস ওমর ফারুক ও রেলওয়ে কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। অনেকের ধারণা, হয়তো ওই টাকাগুলো কোনো অপকর্মের সাক্ষী। যার সাথে মন্ত্রীর এপিএস, রেলওয়ে কর্মকর্তা, রেলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং চালক আলী আজম জড়িত। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হয়তো চালক আলী আজমের সাথে মন্ত্রীর এপিএসের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। এখন এই ঘটনার সব দায় চালক আলী আজমের ওপর দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন, ঘটনার পর চালক আলী আজমকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আলী আজমের গ্রামের বাড়িতে সন্ধান করে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঢাকায় মোহাম্মদপুর এলাকায় আলী আজম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন এমন খবর পাওয়া যায়। কিন্তু ওই এলাকায়ও আজম ও তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুদক টাকার উৎস সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গাড়িচালক আলী আজমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে। এমনকি তাকে পেতে পুলিশের বেতার বার্তায় নোটিশ পাঠানো হয় তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। তবে নোটিশ পেলেও আজমকে এ খবর জানাতে পারেনি তার পরিবার। আজমের কোনো খোঁজ এখনো পায়নি তার পরিবার।

No comments:

Post a Comment