দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বলেছে, চীন ও তুরস্কসহ বিশ্বের দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোতে দুর্নীতি বাড়ছে। তবে ভারতে দুর্নীতি কমেছে। গতকাল বুধবার টিআই প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণার সূচক ২০১৪’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের। বার্লিনভিত্তিক সংগঠন টিআই এবার বিশ্বের ১৭৫টি দেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
মোট ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে করা এই প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে যৌথভাবে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া। এই দুটি দেশ ১০০ পয়েন্টের মধ্যে পেয়েছে ৮ পয়েন্ট। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের সম্মান পেয়েছে ডেনমার্ক। তারা পেয়েছে ৯২ পয়েন্ট। এই প্রতিবেদন তৈরিতে সরকার, পুলিশ বাহিনী, আদালতব্যবস্থা, রাজনৈতিক দল ও আমলাদের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। তবে চলতি বছর বহুজাতিক ব্যাংক ও বিশ্বের আর্থিক কেন্দ্রগুলোর ভূমিকাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কে দুর্নীতি রেকর্ড হারে বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ৬৪তম অবস্থানে থাকা তুরস্ক পেয়েছে ৪৫ পয়েন্ট। যা গত বছরের চেয়েও ৫ পয়েন্ট কম। টিআইয়ের প্রতিবেদনে এটাই তুরস্কের এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন পয়েন্ট। টিআই বলছে, গত বছর তুরস্কে দুর্নীতিবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটিতে ‘বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান’ চালানো হয়েছে। অনেক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন তদন্তে সরকারের ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও ঘুষের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এটি স্পষ্টতই তুরস্কে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে। এদিকে চীনের পয়েন্ট আগের চেয়ে ৪ পয়েন্ট কমে ৩৬-এ দাঁড়িয়েছে। ১৭৫ দেশের মধ্যে চীনের অবস্থান ১০০তম। টিআই বলছে, চীন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালালেও ‘গোপনে অনেক দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে’। গত বছর ফাঁস হওয়া এক নথিতে চীন ও হংকংয়ের অন্তত ২২ হাজার ব্যক্তি দুর্নীতিতে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে অনেক নেতাও আছেন। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য চীনকে অবশ্যই ঘুষ বন্ধ করা, তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে টিআই। দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির অন্য দেশগুলোতে দুর্নীতি বাড়লেও কমেছে ভারতে। প্রতিবেদনের ১৭৫ দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৮৫তম। দেশটি ৩৮ পয়েন্ট পেয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৩ সালের চেয়ে দুই পয়েন্ট বেশি পাওয়াই প্রমাণ করে ভারতে দুর্নীতি কমেছে। ২০১৩ ও ২০১২ সালে ভারতের পয়েন্ট ছিল ৩৬। প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ১৭৫টি দেশের তিন ভাগের দুই ভাগ দেশেরই স্কোর ৫০ পয়েণ্টের নিচে। এবার গড় স্কোর হয়েছে ৪৩। টিআই চেয়ারম্যান হোসে উগাজ ওই প্রতিবেদনে বলেন, বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে বড় ধরনের দুর্নীতি দরিদ্রদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। এটি দেশগুলোতে নানা সংকট ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোর সরকার দুর্নীতি সহ্য করে। ফলে দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাওয়া ও চুরির সংস্কৃতি তৈরি হয়। প্রতিবেদনে দুর্নীতির মূলোৎপাটন ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে টিআই।
No comments:
Post a Comment