Tuesday, December 2, 2014

ওয়ানডেতেও ধবলধোলাই:প্রথম অালো

দুই পাশে ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক। মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার মুখই হাস্যোজ্জ্বল। আর এই আনন্দঘন দৃশ্যে ‘আবহসংগীত’ হয়ে বাজল দর্শকদের ‘বাংলাদেশ...বাংলাদেশ’ ধ্বনি। জিম্বাবুয়েকে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে ‘বাংলাওয়াশ’ করার পরবর্তী ছবিটা এর চেয়ে সুখের যেন আর হতো না! টেস্ট সিরিজ চট্টগ্রামে শেষ হলেও সিরিজ জয়ের ট্রফি তখনই দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ দলের হাতে। ঢাকায় ওয়ানডে সিরিজের পুরস্কার দিতে পা
রেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এই সম্ভাবনা থেকে স্থগিত থাকে টেস্ট সিরিজের ট্রফি প্রদান। কাল সম্ভাবনাটাকে সত্যি করে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকেই ট্রফি নিলেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তবে টেস্ট ম্যাচগুলোয় সাজিয়ে রাখা ট্রফিটা নয়। দুর্বল কাঠামোর কারণে ওই ট্রফি পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আসার আগেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল বলে কাল মুশফিকের হাতে উঠল নতুন নকশার আরেকটা ট্রফি। প্রধানমন্ত্রীর আরেক পাশে দাঁড়িয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও উঁচিয়ে ধরলেন ৫-০-তে জেতা ওয়ানডে সিরিজের রুপালি স্মারক। সিরিজের ফলাফল ৫-০ না বলে ৮-০ বলতে পারেন। ৫-০-তে জেতা ওয়ানডে সিরিজের সঙ্গে টেস্ট সিরিজের ফলাফল যোগ করলে তাই হয়। ওয়ানডেতে এর আগে বাংলাদেশ দল ধবলধোলাই করার স্বাদ নিয়েছে ৮ বার। এর মধ্যে এই জিম্বাবুয়েকেই একবার হারানো গেছে ৫-০-তে। তবে এবারের সিরিজে বাংলাদেশ দলকে যে রকম প্রতাপশালী চেহারায় দেখা গেল, সে রকম আগে কখনো দেখা গেছে কি না সন্দেহ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া কালকের শেষ ওয়ানডেটা যেন গোটা সিরিজেরই প্রতীকী ছবি হয়ে ফুটল। জিম্বাবুয়েকে মাত্র ১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে ১২৮ রানে অলআউট করে দেওয়া, অভিষেক ওয়ানডেতে প্রথম বোলার হিসেবে তাইজুল ইসলামের হ্যাটট্রিক—সবই চিৎকার করে ঘোষণা করল আফ্রিকার দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল পার্থক্য। বলতে পারেন, ১২৮ রানের জবাবে ৫ উইকেটে জিতে অত বড়াই করার কি আছে? কথা সত্যি। যে ম্যাচটা হেসেখেলে জেতা যেত, বাংলাদেশ দল সেটা একটু কঠিন করে জিতল। অত কম রান তাড়া করতে গিয়ে ৯৩ রানে ৫ উইকেটের পতন বেশ দৃষ্টিকটুই। টানা তিন টেস্ট আর চার ওয়ানডে জিতে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে বোলাররা জ্বলে উঠতে পারলেও ব্যাটসম্যানরা পারেননি। শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের ১২৮ রানকে যেভাবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল, সেটা তাঁরা পারেননি। ২৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর অভিষিক্ত সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসানও পারেননি প্রতিরোধের দেয়াল তুলতে। এই সিরিজেই ওয়ানডেতে নিজেদের চার হাজার রান পূর্ণ করতে পারলেন না তামিম ইকবাল আর সাকিব। পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহর ৩৫ রান সাময়িক বাঁধ দিলেও তুলির শেষ টান পড়েছে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে। জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারা হলো মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির রহমানের অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটিতে। মাহমুদউল্লাহর কথাটা একটু আলাদা করেই বলতে হয়। টেস্ট সিরিজ থেকেই ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহর জন্য ওয়ানডে সিরিজটাও কাটল দারুণ। কালকের অপরাজিত ৫১ রানের আগে চতুর্থ ওয়ানডেতে অপরাজিত ছিলেন ৮২ রানে। এর আগে তৃতীয় ওয়ানডেতেও অপরাজিত ৩৩—অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে দলে জায়গা ধরে রাখা মাহমুদউল্লাহ এই সিরিজে যেন নির্বাচকদের আস্থারই প্রতিদান দিলেন। তাইজুল ইসলামই বা কম দিলেন কী! ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট নিয়ে নিজের উজ্জ্বল আবির্ভাবের ঘোষণা দিয়েছিলেন বাঁহাতি এই তরুণ স্পিনার। কাল ওয়ানডে অভিষেকটাও তাঁকে উপহার দিল স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু। অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করবেন, সেটা যে স্বপ্নেও ভাবেননি তাইজুল! মাশরাফি, জুবায়ের আর সাকিবের সামনে অসহায় জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল ১১২ রানের মধ্যে। কিন্তু তখন কি আর দলটা জানত, আরও বিপর্যয় অপেক্ষা করছে তাদের জন্য! ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথম বল হাতে নিলেও ৫ ওভারের ওই স্পেলটা উইকেট ছাড়াই কেটেছে তাইজুলের। জ্বলে উঠলেন দুই ওভারের পরের স্পেলে। ইনিংসের ২৭তম ওভারে ফিরেই উইকেট, প্রথম বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেললেন সলোমন মায়ারকে। ওই ওভারের শেষ বলে স্টাম্প ভেঙে দিলেন তিনাশে পানিয়াঙ্গারারও। হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন নিজের পরের ওভারের প্রথম দুই বলে উইকেট নিয়ে। প্রথম বলে এলবিডব্লু নিয়ুম্বু। হাঁটু গেড়ে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে পরের বলেই বোল্ড টেন্ডাই চাতারা। হ্যাটট্রিক! তাইজুলের এই দুই ওভারে একটি রানও নিতে পারেননি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের হাইলাইটস বলতে আসলে তাইজুল-কীর্তিই। সঙ্গে অবশ্য আরও দু-একটা তথ্য জেনে নিতে পারেন। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (৫২) আর ভুসি সিবান্দা (৩৭) ছাড়া দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি দলটার আর কোনো ব্যাটসম্যানই। বাকি ৯ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল মাত্র ৩৬! ১ উইকেটে ৯৫ রান থেকে তারা শেষ ৯ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৩৩ রানে। তবে টেস্ট-ওয়ানডে মিলে টানা আট ম্যাচ জিতেও বাংলাদেশ দলের উৎসব বাঁধনহারা নয়। হয়তো প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলে, কিংবা এই এক সিরিজেই জয়টা অভ্যাসে পরিণত হওয়ায়। সিরিজ জয়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল ছবি হয়ে থাকল তাই ওটাই—মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দুই পাশে টেস্ট ও ওয়ানডে জয়ের ট্রফি হাতে মুশফিকুর রহিম এবং মাশরাফি বিন মুর্তজা। জিম্বাবুয়ে: ৩০.০ ওভারে ১২৮ বাংলাদেশ: ২৪.৩ ওভারে ১৩০/৫ ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী

No comments:

Post a Comment