Wednesday, December 24, 2014

পাবলিক-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মুখোমুখি:কালের কন্ঠ

সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে ছাড়তে রাজি নয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিপরীতে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি কলেজগুলোকে তাদের অধীনে নিতে চায়। ফলে এ ইস
্যুতে পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। আগে বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলো পরিচালিত হতো। তাদের খুব একটা সাফল্য ছিল না। ফলে সরকারি-বেসরকারি সব কলেজ পরিচালনার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১৯৯২ সালে এ লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। তবে তারাও তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে আজ বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট নিরসন, শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ও বিশেষ সিনেট অধিবেশন বিষয়ে ধানমণ্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, পরিচালনার হাত বদল করে সমস্যার সমাধান হবে না। প্রয়োজনে এ দুইয়ের বিকল্পও চিন্তা করা যেতে পারে। কারণ দ্বিতীয়বার ভুল করলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে সরকারি কলেজগুলোকে। আর সরকারি ও বেসরকারি কলেজকে আলাদা করলে সব ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা উত্তরণে একজন উপ-উপাচার্যের (প্রোভিসি) অধীনে প্রতিটি বিভাগে স্বয়ংসম্পূর্ণ ইউনিট থাকার কথা ছিল; কিন্তু তা হয়নি। সবচেয়ে ভালো হতো সেটা হলে। না হলে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে কলেজগুলোকে ছাড়তে হবে। আগেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলো ছিল। তখন কলেজ ও ছাত্রসংখ্যা কম ছিল। তাই আগের সঙ্গে মেলালে হবে না। সরকার যেহেতু উচ্চশিক্ষাকে মডার্ন সিলেবাস, কারিকুলামের আওতায় আনতে চাচ্ছে, তাই শুধু সরকারি কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নিলে চলবে না; বেসরকারিগুলোকেও আনতে হবে। না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। সে সময় তিনি ৯ দফা নির্দেশনার মধ্যে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের (ভিসি) সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। উপাচার্যরা সরকারি কলেজগুলোকে অধিভুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর জন্য আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ইউজিসি। ইতিমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তাতে ইউজিসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজ- সবাইকে নিয়ে সমন্বিত সভা করে কর্মপন্থা ঠিক করার কথা বলা হয়েছে। সরকারি কলেজের অধিভুক্তির বিষয়ে গঠিত ওই কমিটির প্রধান ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ মোহাব্বত খান বলেন, কাজ শুরু হয়েছে। কাজটা খুবই কঠিন। ইতিমধ্যে একাধিক ফলপ্রসূ সভা হয়েছে। তবে তাড়াহুড়া করে কিছু করা ঠিক হবে না। আপাতত সরকারি কলেজ নিয়ে ভাবনা চলছে। বেসরকারি কলেজের অবকাঠামো ও মান উন্নত নয়। তাদের ব্যাপারে এখন ভাবা যাচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হোক সেটা সরকার চায় না। সরকারি কলেজ অধিভুক্তির বিষয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই সক্ষমতা নেই। তারা নিজেরাও জটিল সমস্যায় রয়েছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের ক্লাসই ঠিকমতো হয় না। এ ক্ষেত্রে পাঁচ-সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। ফলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে ২০-৩০টি কলেজের দায়িত্ব থাকবে। ফলে শুধু তদারকিটুকুই হবে। কলেজের শিক্ষকদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব থাকবে না। তাই অধিভুক্তি সফলতা আনবে কি না সন্দেহ। উপাচার্যরা আরো বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় জনবল রয়েছে। ছয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলেজ কমে গেলে জনবলও কমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাদেরও বড় সমস্যায় পড়তে হবে। নাম প্রকাশ না করে একজন উপাচার্য বলেন, 'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকৃত হয়েছে। এ অবস্থায় কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নেওয়ার আগে আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা উচিত। দ্বিতীয়বার যেন আমরা ভুল না করি। তাহলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আর নানা ক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবে।' জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিলে ফলাফল কী হতে পারে তা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে আঞ্চলিকভাবে বিকেন্দ্রীকৃত করেছি। সেশনজট দূরীকরণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।' বিসিএস শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, 'পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি কলেজগুলোকে নেওয়া হলে ফল কী হতে পারে আগে সেটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। সুবিধা-অসুবিধা দুই দিকই আছে। কলেজগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা যেতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগও নেওয়া যেতে পারে।'    

No comments:

Post a Comment