কিউবার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগের যারা সমালোচক, তাদের যুক্তি, এ পদক্ষেপ দ্বীপরাষ্ট্রটির সরকারকেই পৃরস্কৃত করবে। দেশটির কমবেশি ৮০ শতাংশ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সেখানকার সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার। সমালোচকদের এই যুক্তি প্রায় নিশ্চিতভাবেই সঠিক। অবশ্য এখানে বড় প্রশ্নটা হচ্ছে, ওবামার এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে কিউবার ওপর অধিকতর কার্যকরী প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ক
রে দেবে কি না? বিশেষ করে দেশটির শাসনভার পরিচালনার ক্ষমতা যখন ‘কাস্ত্রো’ নামের কারও হাতে থাকবে না, তখন সেটা ঘটা সম্ভব কি না? বলা হয়ে থাকে, কিউবা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো নীতির লক্ষ্যই ছিল দেশটির কমিউনিস্ট সরকারের ধ্বংস ডেকে আনা। সেটা সত্যি হয়ে থাকলে ওবামার নতুন নীতিতে একটি বিষয়েরই প্রতিফলন ঘটেছে: কিউবায় এ ধরনের অস্থিতিশীলতা কোনোক্রমেই আর মার্কিন স্বার্থের জন্য অনুকূল নয়। নীতি পরিবর্তন প্রশ্নে গত সপ্তাহের ঘোষণার সময় ওয়াশিংটন স্বীকার করেছে, হাভানার মতো তারাও চায়, কিউবায় কাস্ত্রো-পরবর্তী ক্ষমতার পালাবদল সুষ্ঠুভাবে হোক। ওবামার প্রথম মেয়াদে লাতিন আমেরিকাবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আর্তুরো ভ্যালেনজুয়েলা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা কী একটা কঠিন অবতরণ না কোমল অবতরণ দেখতে চাই? বাস্তবতা হচ্ছে, একটা পরিপূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থা দেখা আমাদের স্বার্থের জন্য অনুকূল নয়, কিউবার জনগণের জন্যও নয়।’ বর্তমানে ৮৩ বছর বয়সী রাউল কাস্ত্রো বারবার বলেছেন, তিনি ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে এমন ইঙ্গিতও রয়েছে, তিনি আরও আগে ক্ষমতা ছাড়তে পারেন। যদিও তিনি শারীরিক দিক থেকে অনেক সুস্থ রয়েছেন। তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি যাঁরা হতে পারেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল (৫৪)। কিউবার পার্লামেন্টে গত শনিবার দেওয়া ভাষণে কাস্ত্রো আগামী এপ্রিল মাসে দেশটির ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। অতীতে এ ধরনের সম্মেলনের মাধ্যমেই দেশে সংস্কার বা নেতৃত্ব বদল হয়েছে। সর্বশেষ সম্মেলনটি হয় ২০১১ সালে। সেটাও আগের সম্মেলনের ১৪ বছর পর। রাউল কাস্ত্রোর ভাষণের সময় তাঁর বড় ভাই ও পূর্বসূরি ফিদেল কাস্ত্রো উপস্থিত ছিলেন না। ৮৮ বছর বয়সী ফিদেল অসুস্থ। পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে রাউল কাস্ত্রো বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তবে কিউবার একদলীয় শাসনব্যবস্থা এবং এর সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হবে না বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। সমালোচনা যা-ই হোক, ওবামা যুক্তি দিচ্ছেন, কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে এখনই না হোক, দ্বীপরাষ্ট্রটির ভবিষ্যতের ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়বে। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘তারা যে পদক্ষেপই নিক না কেন, আমরা সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ পাব। যেটা আমরা করে থাকি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে। তারা যখন কোনো কিছু করে, আমরা সেটাকে ভুল মনে করলে তার জবাব দিয়ে থাকি। তার মানে, আমরা কিছু গাজর দেব, হাতে কিছু লাঠিও পাব (ক্যারট অ্যান্ড স্টিক অ্যাপ্রোচ)।’
No comments:
Post a Comment