চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিঃসরণ কমানোর সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি সামনে রেখে আজ সোমবার পেরুর রাজধানী লিমায় শুরু হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ৪০ ভাগের জন্যই দায়ী এ দুই শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। আগামী বছরে প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বিষয়ে প্রথমবারের মতো যে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে, লিমায় তার খসড়া হবে। এ কারণে লিমা সম্মেলন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটি যুগান্তকারী ঘটনার সাক
্ষী হতে পারে। খবর হাফিংটন পোস্ট ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের। লিমার এই সম্মেলন এমন সময়ে শুরু হচ্ছে যখন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও এর ফলে বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তন আর ধারণা বা দূরের কোনো বিষয় হিসেবে নেই। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘের আন্তসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) গত মাসেই বলেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে অনিরাময়যোগ্য ক্ষতি হতে পারে। জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখা। কপ-২০ নামে পরিচিত লিমায় এবারের সম্মেলন চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দুই দশক ধরে একের পর এক আলোচনার পরও জাতিসংঘ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি কমাতে কোনো চুক্তি সই করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা দেন, ২০২৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ২০০৫ সালের তুলনায় ২৬ থেকে ২৮ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনবে তাঁর দেশ। ওই ঘোষণার দিনই তাঁর পাশে থাকা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের কার্বন নিঃসরণ ২০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চুক্তির গুরুত্ব নিয়ে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিয়ানা ফিগেরেস বলেন, ‘কেবল এ দুই দেশের উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ হবে না, এটা ঠিক। পাশাপাশি এও সত্য, তাদের ছাড়াও পরিবর্তন রোধ অসম্ভব।’ লিমা সম্মেলনে মোট তিনটি বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হয়। প্রথমটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা। ধনী দেশগুলো শুধু তাদের দূষণের মাত্রা কমাতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়াও তাদের একটি দায়িত্ব। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আগামী বছর প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় আলোচনার দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমাতে তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছে। তবে এই প্রতিশ্রুতির ধরন কেমন হবে তা নিয়ে ধনী দেশগুলোর সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিরোধ আছে। ধনী দেশগুলোর ইচ্ছে, প্রতিশ্রুতি সীমাবদ্ধ থাক কার্বন নিঃসরণ কমানোর মধ্যে। অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মতো বিষয়ে আলোচনায় তাদের আগ্রহ কম। প্যারিস আলোচনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়েই কেবল সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা আছে। লিমা সম্মেলনে তৃতীয় যে বিষয়টি প্রাধান্য পাবে সেটি হলো প্যারিস চুক্তির সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয়। স্বল্পোন্নত দেশগুলো ইতিমধ্যে জাতিসংঘের দেওয়া আলোচ্য বিষয়ের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি তুলেছে। তারা চাইছে প্যারিস আলোচনার প্রস্তাব বিভিন্ন দেশ থেকে আসুক।
No comments:
Post a Comment