অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিডনির কেন্দ্রস্থলে একটি ক্যাফেতে গতকাল সোমবার সকালে ক্রেতা ও বিক্রয়কর্মীসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে একজন বন্দুকধারী। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন জিম্মি বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। ওই ক্যাফেসহ আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। আশপাশের সব ভবন থেকেও লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ঘটনার পর ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও গতকাল স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত জিম্মি পরিস্থিতির অবসান হয়ন
ি। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। জিম্মি ব্যক্তিদের আরবি লেখা একটি কাপড় ক্যাফের জানালায় ধরে রাখতে বাধ্য করে ওই বন্দুকধারী। যে লেখা ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার কাছে জনপ্রিয়। যদিও কোনো সংগঠন জিম্মি করার দায় স্বীকার করেনি। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট বলেছেন, এই জিম্মি পরিস্থিতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আভাস পাওয়া গেছে। রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে লিন্দ্ত নামের ওই ক্যাফের জিম্মি অবস্থা শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১০টার দিকে। ক্যাফের আশপাশে রয়েছে মার্কিন কনস্যুলেট, কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া ও বিখ্যাত সিডনি অপেরা হাউস। ক্যাফের কর্মী ব্রুনো অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে (এবিসি) বলেন, ‘আমি বাইরে থেকে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন হঠাৎ সবাই বসে পড়লেন। মাথায় হ্যাট পরা এক ব্যক্তি শুধু পায়চারি করছেন। ক্যাফের দরজাগুলো সাধারণত বন্ধ করা হয় না। কিন্তু সব দরজাই বন্ধ দেখলাম।’ হ্যাট পরা ওই ব্যক্তিকেই জিম্মিকারী বলে উল্লেখ করেন ব্রুনো। শুরুতে বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছিল, অন্তত ৩০ জন ক্রেতা ও ১০ জন বিক্রয়কর্মীকে জিম্মি করা হয়েছে। তবে ওই ক্যাফের পাশেই অবস্থিত চ্যানেল সেভেন টেলিভিশনের সাংবাদিক ক্রিস রেজন খুদে ব্লগ লেখার ওয়েবসাইট টুইটারে লিখেছেন, ‘আমাদের সংবাদ কক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রায় দুই ঘণ্টা পর পর জিম্মিদের অবস্থান বদল করানো হচ্ছে। জিম্মির সংখ্যা ১৫ জনের মতো। তাঁদের মধ্যে কোনো শিশু নেই।’ জিম্মি অবস্থার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ক্যাফের চারপাশ ঘিরে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে ক্যাফের ওপর দিয়ে পুলিশের হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যায়। জিম্মিদশার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর তিন ব্যক্তি ওই ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। দুজন সামনের দরজা দিয়ে এবং অন্যজন জরুরি দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসেন। এর ঘণ্টা খানেক পর আরও দুই নারী ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা পালিয়ে আসেন, নাকি জিম্মিকারী তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নেটওয়ার্ক টেন টেলিভিশন চ্যানেল দুজন জিম্মির বরাত দিয়ে বলছে, ওই বন্দুকধারী সবাইকে জিম্মি করার পর বলেছে, সিডনির গুরুত্বপূর্ণ দুটি জায়গায় সে বোমা পেতে রেখেছে। বন্দুকধারীর এই দাবির বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা জানতে পেরেছে, সশস্ত্র এক লোক ওই ক্যাফের বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে। সেখানে আরও কয়েকজন জিম্মিকারী থাকতে পারে। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশ কমিশনার অ্যান্ড্রু সিপিওনি বলেন, ‘যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এটা সন্ত্রাসী ঘটনা হতে পারে।’ তিনি জানান, দেরি হলেও জিম্মি ব্যক্তিদের জীবন রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ৪০ মুসলিম সংগঠনের নিন্দা: অস্ট্রেলিয়ার ৪০টি মুসলিম সংগঠন যৌথভাবে এক বিবৃতিতে এই জিম্মি পরিস্থিতির নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা যেকোনো নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির অপচেষ্টা, হুমকি এবং সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করি।’ বিবৃতিতে ওই জিম্মি ঘটনাকে ‘গর্হিত কাজ’ বলে উল্লেখ করা হয়।
No comments:
Post a Comment