বাংলাদেশে সাংবাদিকতা একটি বিপজ্জনক পেশাÑ এমন মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস। বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে দেয়া রায় স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য নেতিবাচক। ‘মাজলিং স্পিচ ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশের রুদ্ধ বাকস্বাধীনতা) শিরোনামের ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অ
পরাধ ট্রাইব্যুনালের করা জরিমানার অঙ্কটা ছোট, ৬৫ ডলারের মতো। কিন্তু যে বার্তাটা মিলল সেটা অশুভ : ১৯৭১ সালে সঙ্ঘটিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরকার ঘোষিত ৩০ লাখ নিহতের সংখ্যা নিয়ে যেই প্রশ্ন তুলবেÑ তা যত বৈধভাবেই হোক আর সম্মানজনক উপায়েই হোকÑ সে হবে আদালত অবমাননার দোষে দোষী। যুদ্ধের সময় যারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছিল, তাদের বিচারের জন্যই গঠিত হয়েছিল এ ট্রাইব্যুনাল। ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশে বসবাসরত একজন সম্মানিত সাংবাদিক, ২ ডিসেম্বর যাকে আদালত অবমাননার অভিযোগে ৬৫ ডলার সমপরিমাণ অঙ্কের জরিমানা করেন ট্রাইব্যুনাল। যেকোনো ভালো সাংবাদিকের যেটা করা উচিত বার্গম্যান সেটাই করেছেনÑ যুদ্ধে নিহতের সংখ্যার ব্যাপারে ভিন্ন মত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন। কিন্তু তাতে ুব্ধ হন ট্রাইব্যুনাল। বার্গম্যান সবসময় তার অবস্থানে অটল থেকেছেনÑ যুদ্ধে নিহতের সঠিক সংখ্যা যা-ই হোক, সেটা তিন লাখ ও ৩০ লাখের মধ্যেÑ মানবতাবিরোধী অপরাধ সঙ্ঘটিত হয়েছে এবং এ জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের কাছে এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। নিহতের আনুষ্ঠানিক ঘোষিত সংখ্যা নিয়ে কোনো প্রশ্নই তারা সহ্য করেনি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, আদালত তার রায়ে বার্গম্যানের বিরুদ্ধে জাতীয় ইচ্ছা ও পবিত্র আবেগকে অসম্মান ও অবমাননা করার অভিযোগ করেছে। আদালতের বক্তব্য ভুলÑ এটা বাকস্বাধীনতা, বৈধ সাংবাদিকতা ও ঐতিহাসিক জিজ্ঞাসার ওপর আদালতের আঘাত যেটা বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রকে অসম্মান ও অবমাননা করেছে। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা একটি বিপজ্জনক পেশা। স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাদের রিপোর্টÑ যেগুলো সরকার বা ইসলামী চরমপন্থীদের পছন্দ হয়নি সেগুলোর কারণে শারীরিকভাবে হামলার শিকার হয়েছেন, নিহত পর্যন্ত হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও দ্য ইকোনমিস্টের রিপোর্টারদেরও অবমাননার অভিযোগে বিচার করেছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রকৃতপক্ষে ট্রাইব্যুনাল সাংবাদিকের জিজ্ঞাসার সুযোগটাকে এতটাই সঙ্কুচিত করে দিয়েছে এবং এর শর্তগুলো এতটাই অস্পষ্ট যে, যে কারো কথা বা লেখা আদালতের বিবেচনায় সামান্য আক্রমণাত্মক মনে হলেই তাকে ফৌজদারি অভিযোগে বিচার করা যাবে। মত প্রকাশ ও জিজ্ঞাসার স্বাধীনতা প্রশ্নে এটা হতাশাজনক। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক ও অধিবাসীদের তথ্যপূর্ণ অভিমত দেয়া ও আনুষ্ঠানিক অবস্থানের যৌক্তিক সমালোচনা করে মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। সাংবাদিক ও বিদ্বানদের অবশ্যই বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দলিল নিয়ে কোনো ধরনের শাস্তির আশঙ্কা ছাড়াই বৈধ প্রশ্ন তোলার অধিকার থাকতে হবে। ন্যায় বিচারই যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাম্য হয়ে থাকে, তাহলে তার উচিত হবে অবিলম্বে বার্গম্যানকে দেয়া দণ্ড পরিবর্তন করা।
No comments:
Post a Comment