ঢাকায় বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেছেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না। কোন দল ক্ষমতায় যাবে সেটা ঠিক করবে বাংলাদেশের জনগণ। গতকাল শনিবার রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে অনুষ্ঠিত বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে ক্ষমতায় আনতে চায় বলে বাংলাদেশের জনগণ মনে
করে। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মজীনা ওই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিন বছর এক মাসের দায়িত্ব পালনকালে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান ড্যান মজীনা। এ সময়ের মধ্যে দুই দেশের অংশীদারত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াকে তিনি সাফল্য হিসেবে মনে করেন। দুই দেশের সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও নিবিড়, সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী হয়েছে। মজীনা আশা করেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও ঘনিষ্ঠ হবে। দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা ছাড়ার আগে ড্যান মজীনা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে শেষবারের মতো গতকাল মুখোমুখি হন। আজ রোববার তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। ড্যান মজীনার উত্তরসূরি মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাটের আগামী বছরের শুরুতে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকায় আসেন। ২৪ নভেম্বর তিনি তত্কালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন। ১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে মজীনা জানান, এ সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের সময় দুই দেশের আনুষ্ঠানিক সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াকে বড় অর্জন হিসেবে মনে করেন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘অংশীদারত্ব এগিয়ে নিতে এখন দুই দেশ চারটি ফোরামের মাধ্যমে কাজ করছি। এটি বিরাট অর্জন। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের সময় এতটা সাফল্য পাব তা ভাবিনি। প্রথম কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ঘুরে দেখাকে তিনি জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি মনে করেন। ৬৪ জেলা সফরের স্বপ্নপূরণের জন্য সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাপত্তাসহ সফরের আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে সরকার। এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে পরবর্তী বাঘ হিসেবে অভিহিত করে মজীনা বলেন, পোশাক খাতের বিবর্তন, সাভারের পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প, ওষুধ ও তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে বেঙ্গল টাইগারের চারটি পা। আর চারটি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর মজীনা ও তাঁর দেশের অবস্থান নিয়ে সরকারে প্রকাশ্যে সমালোচনামূলক রয়েছে। এ বিষয়টিকে মজীনা কীভাবে দেখেন জানতে চান সাংবাদিকেরা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের বিখ্যাত উক্তি: মাই আইজ অন দ্য প্রাইজ উদ্ধৃত করে বলেন, আমি সব সময় লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগী থেকেছি। তাই দুই দেশের সম্পর্কটা যখন আরও ব্যাপক, নিবিড় ও শক্তিশালী হয়, আমার চেয়ে কে আর বেশি সুখী হতে পারে? এ বিষয়গুলো (সরকারি দলের সমালোচনা) পড়েছি, তবে আমার দৃষ্টি পুরস্কারের দিকে। তবে এসব আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিতে চাই। কোনো ব্যাপারে আমার অভিযোগ নেই। তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে ড্যান মজীনা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক ইতিবাচক বিষয় ও সম্ভাবনার কথা শোনালেও এ দেশের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, দুর্বল অবকাঠামো, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাংলাদেশের জন্য সমস্যা। তবে এ সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।
No comments:
Post a Comment