Tuesday, January 6, 2015

বিএনপির ভুলের খেসারত কেন জনগণ দেবে:প্রথম অালো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা ছিল একটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। বিএনপির এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত কেন জনগণকে দিতে হবে? গতকাল সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধা‌ন্তের কারণে আজ আপনি ও আপনার দল সংসদে নেই। আপনি কাকে দোষ দেবেন? আপনার নিজেকেই দোষ দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে শান্তির পথে আসতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি—নাশকতা, মানুষ হত্যা, বোমা-গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ, জানমালের ক্ষতি করা বন্ধ করুন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে পথে আপনি চলছেন তা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আরও হারাবেন। দেশের মানুষের আর্থসামাজিক  উন্নয়নের জন্য কী কী করতে চান তা মানুষকে জানান। নিজের দলকে গড়ে তুলুন। তাহলেই হয়তো ভবিষ্যতে সম্ভাবনা থাকবে।’ সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বেতার ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেই সময়ে সংঘটিত সহিংস ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিএনপি-জামায়াত জোট সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা শত শত গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ভাঙচুর করেছে হাজার হাজার গাড়ি। মহাসড়কসহ গ্রামের রাস্তার দুই পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। পুলিশ-বিজিবি-আনসার-সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে।  ·        প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সহিংস হামলা, পেট্রলবোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলায় নিহত হয়েছে শত শত নিরীহ মানুষ। সরকারি অফিস, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ফুটপাতের দোকান—এমনকি নিরীহ পশুও তাদের জিঘাংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে হাজার হাজার পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়ে দিয়েছে। ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে এবং ফিশপ্লেট খুলে শত শত বগি এবং রেলইঞ্জিন ধ্বংস করেছে।  ·শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুলে আগুন দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা করেছে। নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমরা সংলাপে বসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সংবিধানের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরনের ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম।’  ·বাংলাদেশের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শুধু একটাই দাবি ছিল, সংবিধানের মধ্য থেকে আমরা নির্বাচন করতে চাই। সেখানে যত ধরনের ছাড় দেওয়া সম্ভব, তা দিতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে একটা অরাজক এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের সেই ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি।  ·মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচার শেষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের বিচারের কাজ এগিয়ে চলছে। রায় কার্যকর করা হচ্ছে। ইনশা আল্লাহ আমরা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করব।’ চলমান এই বিচার বানচাল করতে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে অন্ধকারের অপশক্তি যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, জনগণের মঙ্গল চায় না তারা আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী ভাষণে তাঁর সরকারের গৃহীত নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অসুস্থ রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যে রাজনীতি দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ 

No comments:

Post a Comment