Saturday, January 24, 2015

অন্য রকম উৎসবের দিন:প্রথম অালো

কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকাল। টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যেও সাগর-নদী-পাহাড় ডিঙিয়ে খুদে গণিতবিদেরা গতকাল শুক্রবার হাজির ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। গণিত জয়ের স্বপ্ন নিয়ে তারা এসেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্বে যোগ দিতে। ৫৮৭ জন ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিতে সকাল নয়টার মধ্যে পূর্ণ হয় মাঠ। ‘গণিত শেখো—স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপো
ষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজন করে এই উৎসব। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বন্ধুসভার সদস্যরা। সকাল সোয়া নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কক্সবাজারের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. হামিদুল আবছার। জেলা প্রশাসক বলেন, শিক্ষার্থীরা গণিতকে সহজ করে দেখার পাশাপাশি গণিতভীতি দূর করারও অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। উৎসবের মাধ্যমে গণিতের জয় হলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জেলা প্রশাসক গণিত বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়ার জন্য উপস্থিত শিক্ষার্থীদের শপথ করান। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. ছৈয়দ করিম, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ। গণিত প্রতিযোগিতার লিখিত পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বেলা সোয়া ১১টায় শেষ হয়। এরপর খুদে গণিতবিদেরা মাঠে তৈরি বিশাল প্যান্ডেলে আবার জড়ো হয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেয়। বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্রী আসমা সিরাজ জানতে চায়, শূন্য-এর সঙ্গে যেকোনো সংখ্যা গুণ করলে গুণফল শূন্য হয় কেন? বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী উমাইয়া চৌধুরীর প্রশ্ন, গণিত বিষয়টি কে আবিষ্কার করেন? ছাত্রছাত্রীদের এ রকম অনেক কৌতূহলের জবাব দেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মফিদুল হক, গণিত বিভাগের প্রভাষক নিজাম উদ্দিন ফারুকী, বদরখালী কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল হক ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক নির্মল শর্মা। প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জাভেদ মোর্শেদ ও প্রথম আলোর সহকারী ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক জাভেদ সুলতান। টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, রামুসহ জেলার আটটি উপজেলার ৬০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য নাম নিবন্ধন করে। ১০০ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীকে উৎসবে নিয়ে আসেন মা সৈয়দা তাহমিনা স্মৃতি। চোখেমুখে গণিতজয়ের স্বপ্ন নিয়ে জান্নাতুল বলে, ‘অবরোধের মধ্যেও টেকনাফ থেকে মাকে নিয়ে উৎসবে ছুটে এসেছি। না এলে অনেক কিছু মিস করতাম।’ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে উৎসবে এসেছে মহেশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা তাসনিম। সে গত বছরও প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ইয়াছিন আরাফাত বলে, গণিত ভালো লাগে। তাই উৎসবে ছুটে এসেছে সে। জুমার নামাজের বিরতির পর বেলা দুইটায় শুরু হয় প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা। চারটি শাখায় কক্সবাজার অঞ্চল থেকে বিজয়ী ৩৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে টি-শার্ট ও পদক তুলে দেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী। বিজয়ীদের নাম প্রথম আলোর আঞ্চলিক প্রকাশনা ‘আমার চট্টগ্রাম’-এ আগামীকাল রোববার প্রকাশিত হবে। বিজয়ীরা ঢাকায় উৎসবের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। উপস্থিত খুদে গণিতবিদদের মুখস্থ, মিথ্যা আর মাদককে ‘না’ বলার অনুরোধ জানিয়ে ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, এই অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা গণিতে দুর্বল। তাদের গণিতভীতি দূর করার এই উৎসব অব্যাহত থাকলে উপকূলের মানুষ উপকৃত হবে।

No comments:

Post a Comment