যে এত বেশিসংখ্যক এমআরপি দেওয়া সম্ভব নয়। এর ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হয়রানির পাশাপাশি চাকরিচ্যুতও হতে পারেন। এতে বাংলাদেশ শ্রমবাজার হারাতে পারে। ১৬ বছর আগে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এমআরপি করার নির্দেশনা দিলেও বাংলাদেশ সময়মতো যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। বাংলাদেশের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ জন্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালককে দায়ী করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক জিয়াউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যাটা যে খুব জটিল, সেটা আমরা বুঝেছি। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন দেশে টিম পাঠানো হচ্ছে। দূতাবাসগুলোকেও তৎপর হওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’ আইসিএওর ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশনায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বরের পর, অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর থেকে হাতে লেখা পাসপোর্ট আর গ্রহণযোগ্য হবে না। বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য এমআরপি ও যন্ত্রে পাঠযোগ্য ভিসা (এমআরভি) বাধ্যতামূলক। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারও আইসিএও চুক্তিতে সই করে। চুক্তি অনুসারে ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এমআর পাসপোর্ট ও এমআর ভিসা প্রকল্প শুরু হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে দেশে ৬৪টি জেলা ও বিদেশে ৫৫টি দূতাবাস থেকে এমআরপি ও এমআরভি দেওয়া হচ্ছে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে আড়াই কোটি নাগরিকের পাসপোর্ট আছে। এর মধ্যে এক কোটি প্রবাসী। এমআরপি প্রকল্প চালু হওয়ার পর সাড়ে চার বছরে ৭৮ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক এমআর পাসপোর্ট পেয়েছেন। আর গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই সময়ে এক কোটি প্রবাসীর মধ্যে মাত্র ১৩ লাখ ৪ হাজার প্রবাসী এমআরপি পেয়েছেন। বাকি প্রায় ৮৭ লাখ প্রবাসী এখনো হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ মাসে ৮৭ লাখ প্রবাসীকে পাসপোর্ট দিতে হলে প্রতি মাসে আট লাখ প্রবাসীর হাতে এমআরপি পৌঁছাতে হবে। এই কর্মযজ্ঞের জন্য দূতাবাসগুলোতে যত লোকবলের দরকার, তা নেই। আবার নতুন করে দরপত্র ডেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এত কম সময়ে কাজ তুলে আনাও দুরূহ। এমনিতেই বইস্বল্পতার কারণে সময়মতো পাসপোর্টই দিতে পারছে না অধিদপ্তর। কোন দেশে কত এমআরপি: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন সৌদি আরবে। সেখানকার ২২ লাখ প্রবাসীর মধ্যে এমআরপি পেয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০ লাখ প্রবাসীর মধ্যে এমআরপি পেয়েছেন ৪ লাখ ৬৯ হাজার। মালয়েশিয়ার ৬ লাখের মধ্যে ৯৭ হাজার, ওমানে ৬ লাখের মধ্যে ৬২ হাজার, সিঙ্গাপুরে ৫ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৫৫ হাজার, কুয়েতে ৪ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার, কাতারে আড়াই লাখের মধ্যে ২২ হাজার, বাহরাইনের ২ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৪০ হাজার, ইতালির ১ লাখ প্রবাসীর মধ্যে মাত্র দেড় হাজার ব্যক্তিকে এমআরপি দেওয়া হয়েছে। অন্য দেশগুলোতে এ হার আরও কম। পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অভিবাসীদের সমস্যা, বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর লোকবল ও এমআরপি দেওয়ার যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা বিবেচনা করে সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে (আউটসোর্সিং) মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে এমআরপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদনকারীদের দোরগোড়ায় গিয়ে এমআরপির তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও ডিজিটাল স্বাক্ষর সংগ্রহ করে দূতাবাসের মধ্যে ঢাকায় অধিদপ্তরে পাঠাবে। এরপর ছাপানো বই পাঠানোর পর তারা সেটা বিতরণ করবে। বিদেশ মিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসনিক সহায়তা দেবেন। কিন্তু এ কাজে জটিলতা শুরু হয়েছে। যেমন, মালয়েশিয়ায় বেসরকারি কোম্পানি ডেটাএজ-আইপিপল কনসোর্টিয়াম গত বছরের ২৯ মে থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ ও ঢাকায় তথ্য পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি মহল এ কাজটি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করার জন্য চাপ দিতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে মালয়েশিয়ার কাজের জন্য আইরিস করপোরেশনের সঙ্গে ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তি করে ডেটাএজ-আইপিপল কনসোর্টিয়াম। তবে তারা খুব বেশি পাসপোর্ট দিতে পারছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় এক বছরে মাত্র ৫৫ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। বাইরের কোম্পানিকে কাজ দেওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দরপত্রের মাধ্যমে সেখানে কাজ পেয়েছে আইরিস করপোরেশন। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেন, পাসপোর্টের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান আইরিস করপোরেশন নিজে কাজ না করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফির বদলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি করছে। অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মাবুদের কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে আবদুল মাবুদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সব কাজ নিয়ম মেনেই হয়েছে। প্রবাসীদের ভোগান্তি: প্রথম আলোর একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সম্প্রতি কাতার ঘুরে এসেছেন। সেখানকার প্রবাসীরা তাঁকে জানিয়েছেন, একেকজনের এমআর পাসপোর্ট পেতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগছে। কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মাসুদ মোহাম্মদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেছেন, সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনবল ও কাউন্টার বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। তাঁরা ছুটির দিনেও কাজ করছেন। আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে প্রতিনিয়ত প্রবাসীরা একই ধরনের অভিযোগ করছেন। কয়েকটি দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছর ধরে তাঁরা ঢাকায় চিঠি লিখছেন। কিন্তু সরকার যথাসময়ে ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণেই সংকট বেড়েছে। এখন অনেকটাই নিশ্চিত, এমআরপি নিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগে পড়তে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এমআরপি কাজের জন্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কাজের অনুমতি না পাওয়ায় এক মাস অবস্থান করে ফিরে এসেছেন। আরব আমিরাতে যাতে সহজে অবস্থান করা যায়, সে জন্য সশস্ত্র বাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১২ কর্মকর্তার নামে কূটনৈতিক পাসপোর্ট চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়। এরপর আর কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো সম্ভব হয়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেখানে মাত্র এক হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কেউ একা সৃষ্টি করেনি। পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে হয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু এখন দরকার এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা। সব প্রবাসী যাতে সময়মতো পাসপোর্ট পান, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Saturday, January 24, 2015
এমআর পাসপোর্ট না পেয়ে উৎকণ্ঠায় ৮৭ লাখ প্রবাসী:প্রথম অালো
যে এত বেশিসংখ্যক এমআরপি দেওয়া সম্ভব নয়। এর ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হয়রানির পাশাপাশি চাকরিচ্যুতও হতে পারেন। এতে বাংলাদেশ শ্রমবাজার হারাতে পারে। ১৬ বছর আগে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এমআরপি করার নির্দেশনা দিলেও বাংলাদেশ সময়মতো যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। বাংলাদেশের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ জন্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালককে দায়ী করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক জিয়াউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যাটা যে খুব জটিল, সেটা আমরা বুঝেছি। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন দেশে টিম পাঠানো হচ্ছে। দূতাবাসগুলোকেও তৎপর হওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’ আইসিএওর ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশনায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বরের পর, অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর থেকে হাতে লেখা পাসপোর্ট আর গ্রহণযোগ্য হবে না। বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য এমআরপি ও যন্ত্রে পাঠযোগ্য ভিসা (এমআরভি) বাধ্যতামূলক। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারও আইসিএও চুক্তিতে সই করে। চুক্তি অনুসারে ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এমআর পাসপোর্ট ও এমআর ভিসা প্রকল্প শুরু হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে দেশে ৬৪টি জেলা ও বিদেশে ৫৫টি দূতাবাস থেকে এমআরপি ও এমআরভি দেওয়া হচ্ছে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে আড়াই কোটি নাগরিকের পাসপোর্ট আছে। এর মধ্যে এক কোটি প্রবাসী। এমআরপি প্রকল্প চালু হওয়ার পর সাড়ে চার বছরে ৭৮ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক এমআর পাসপোর্ট পেয়েছেন। আর গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই সময়ে এক কোটি প্রবাসীর মধ্যে মাত্র ১৩ লাখ ৪ হাজার প্রবাসী এমআরপি পেয়েছেন। বাকি প্রায় ৮৭ লাখ প্রবাসী এখনো হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ মাসে ৮৭ লাখ প্রবাসীকে পাসপোর্ট দিতে হলে প্রতি মাসে আট লাখ প্রবাসীর হাতে এমআরপি পৌঁছাতে হবে। এই কর্মযজ্ঞের জন্য দূতাবাসগুলোতে যত লোকবলের দরকার, তা নেই। আবার নতুন করে দরপত্র ডেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এত কম সময়ে কাজ তুলে আনাও দুরূহ। এমনিতেই বইস্বল্পতার কারণে সময়মতো পাসপোর্টই দিতে পারছে না অধিদপ্তর। কোন দেশে কত এমআরপি: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন সৌদি আরবে। সেখানকার ২২ লাখ প্রবাসীর মধ্যে এমআরপি পেয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০ লাখ প্রবাসীর মধ্যে এমআরপি পেয়েছেন ৪ লাখ ৬৯ হাজার। মালয়েশিয়ার ৬ লাখের মধ্যে ৯৭ হাজার, ওমানে ৬ লাখের মধ্যে ৬২ হাজার, সিঙ্গাপুরে ৫ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৫৫ হাজার, কুয়েতে ৪ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার, কাতারে আড়াই লাখের মধ্যে ২২ হাজার, বাহরাইনের ২ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৪০ হাজার, ইতালির ১ লাখ প্রবাসীর মধ্যে মাত্র দেড় হাজার ব্যক্তিকে এমআরপি দেওয়া হয়েছে। অন্য দেশগুলোতে এ হার আরও কম। পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অভিবাসীদের সমস্যা, বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর লোকবল ও এমআরপি দেওয়ার যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা বিবেচনা করে সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে (আউটসোর্সিং) মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে এমআরপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদনকারীদের দোরগোড়ায় গিয়ে এমআরপির তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও ডিজিটাল স্বাক্ষর সংগ্রহ করে দূতাবাসের মধ্যে ঢাকায় অধিদপ্তরে পাঠাবে। এরপর ছাপানো বই পাঠানোর পর তারা সেটা বিতরণ করবে। বিদেশ মিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসনিক সহায়তা দেবেন। কিন্তু এ কাজে জটিলতা শুরু হয়েছে। যেমন, মালয়েশিয়ায় বেসরকারি কোম্পানি ডেটাএজ-আইপিপল কনসোর্টিয়াম গত বছরের ২৯ মে থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ ও ঢাকায় তথ্য পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি মহল এ কাজটি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করার জন্য চাপ দিতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে মালয়েশিয়ার কাজের জন্য আইরিস করপোরেশনের সঙ্গে ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তি করে ডেটাএজ-আইপিপল কনসোর্টিয়াম। তবে তারা খুব বেশি পাসপোর্ট দিতে পারছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় এক বছরে মাত্র ৫৫ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। বাইরের কোম্পানিকে কাজ দেওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দরপত্রের মাধ্যমে সেখানে কাজ পেয়েছে আইরিস করপোরেশন। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেন, পাসপোর্টের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান আইরিস করপোরেশন নিজে কাজ না করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফির বদলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি করছে। অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মাবুদের কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে আবদুল মাবুদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সব কাজ নিয়ম মেনেই হয়েছে। প্রবাসীদের ভোগান্তি: প্রথম আলোর একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সম্প্রতি কাতার ঘুরে এসেছেন। সেখানকার প্রবাসীরা তাঁকে জানিয়েছেন, একেকজনের এমআর পাসপোর্ট পেতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগছে। কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মাসুদ মোহাম্মদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেছেন, সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনবল ও কাউন্টার বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। তাঁরা ছুটির দিনেও কাজ করছেন। আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে প্রতিনিয়ত প্রবাসীরা একই ধরনের অভিযোগ করছেন। কয়েকটি দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছর ধরে তাঁরা ঢাকায় চিঠি লিখছেন। কিন্তু সরকার যথাসময়ে ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণেই সংকট বেড়েছে। এখন অনেকটাই নিশ্চিত, এমআরপি নিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগে পড়তে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এমআরপি কাজের জন্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কাজের অনুমতি না পাওয়ায় এক মাস অবস্থান করে ফিরে এসেছেন। আরব আমিরাতে যাতে সহজে অবস্থান করা যায়, সে জন্য সশস্ত্র বাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১২ কর্মকর্তার নামে কূটনৈতিক পাসপোর্ট চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়। এরপর আর কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো সম্ভব হয়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেখানে মাত্র এক হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কেউ একা সৃষ্টি করেনি। পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে হয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু এখন দরকার এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা। সব প্রবাসী যাতে সময়মতো পাসপোর্ট পান, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment