Saturday, January 3, 2015

বাঁকখালীর মোহনায় পর্যটনের সম্ভাবনা:নয়াদিগন্ত

দীর্ঘ দিন পরে হলেও বাড়ির পাশে যে ‘আরশিনগর’ রয়েছে তা আবিষ্কার করেছেন কক্সবাজারের সৌন্দর্যপিপাসুরা। এটি বিকল্প সুন্দরবনও। এটিকে রক্ষণাবেক্ষণ আর সুষ্ঠু পরিচর্যা করে ইকো টুরিজমের উন্নয়ন করা হলে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  শহরের কস্তুরাঘাট কিংবা ৬ নং ঘাট থেকে যেকোনো নৌকা বা স্পিডবোটে বাঁকখালী নদীর মোহনায় গেলে চোখে পড়বে বিশার সবুজ বন। পরিবেশের ভাষায় এট
ি ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’। নাজিরার টেকের সমুদ্রচর আর বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ প্যারাবনের ভেতর প্রবেশ করলেই মুগ্ধ না হয়ে ফেরার সুযোগ নেই। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ প্যারাবন থেকে গাছ এক সময় জ্বালানির চাহিদা মেটাতেন শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া ও খুরুশকুলের বহু বাসিন্দা। একপর্যায়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হারিয়ে যেতে বসে। প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বাইন, কেওড়াসহ নানা প্রজাতির শ্বাসমূলী উদ্ভিদের (ম্যানগ্রোভ) বন। গাছের মাথা ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া বকের সারি, পরিযায়ী পাখি কিংবা বন্যশূকর দেখে মনে হবে এ বুঝি আরেক সুন্দরবন। এ বনকে পর্যটকদের কাছে আকৃষ্ট করতে বনের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে পর্যবেণ টাওয়ার ও বিনোদনকেন্দ্র। কক্সবাজার, মহেশখালী-কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া উপকূলে যাওয়ার পথে বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা মেলে এ বনের। পরে ওই প্যারাবন সরকারের প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকার আওতায় পড়ে। তারপর প্যারাবন রক্ষায় দায়িত্ব পান নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) নামে একটি বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা। একপর্যায়ে বিপন্নপ্রায় ওই প্যারাবন আজ বিশাল বনে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারের বিশাল যে সমুদ্র উপকূল আর সবুজ প্যারাবন রয়েছে এগুলোকে যদি সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেয়া যায় তাহলে বাংলাদেশে আরেকটি বিকল্প সুন্দরবন তৈরির অফুরন্ত সম্ভাবনা এ কক্সবাজারে রয়েছে বলে মনে করেন পর্যটকেরা। পাশাপাশি সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। পর্যটকেরা এসব স্থানেই ভ্রমণে বেশি আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। উপরন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পাখির অভয়ারণ্য এখানে সৃষ্টি করা যেতে পারে। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বনে (প্যারাবন) ১২ হাজারেরও বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ভিদ রয়েছে ৫৬৭ প্রজাতির। শামুক-ঝিনুক রয়েছে ১৬২ প্রজাতির, কাঁকড়া ২১, চিংড়ি ১৯, লবস্টার দুই, মাছ ২০৭, উভচর ১২ ও ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ। পরিবেশ অধিদফতরের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, সুন্দরবন বা এ প্যারাবনে ২০৬ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে। এর মধ্যে দেশী ১৪৯ ও ৫৭ প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখিও সোনাদিয়ায় দেখা যায়। কক্সবাজারের এ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টকে বিকল্প সুন্দরবন হিসেবে ইকো টুরিজমের উন্নয়ন হলে এক দিকে যেমন কক্সবাজারে আগত পর্যটকেরা বিনোদন পাবেন, অন্য দিকে বহু বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবেÑ এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  এ দিকে এটাকে ইকো টুরিজম হিসেবে উন্নীত করতে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর কথা জানালেন প্যারাবন রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মকর্তা।

No comments:

Post a Comment