Saturday, January 3, 2015

ডিএমপির মতিঝিল জোনে রাজনীতিক খুনের ছক!:কালের কন্ঠ

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন এলাকায় আটটি ক্রাইম জোন রয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বরাবরই বেশি। রাজধানীর ব্যস্ততম এই এলাকায়
সংঘবদ্ধ একটি অপরাধীচক্রের কমপক্ষে ৫০ জন সদস্য রয়েছে। তারা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, অস্ত্র ব্যবসা- এসবের সঙ্গে জড়িত। বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তারা প্রতিপক্ষের বেশ কিছু রাজনীতিককে তালিকা করে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। তিনটি অস্ত্র ও এক হাজার রাউন্ড গুলিসহ ওই চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন ধারণা পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে সবুজবাগ থানার পুরান পূর্ব বাসাবোর একটি বাসা থেকে সাইফুল্লাহ খান (৪০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে 'বাসাবো মোবাইল সার্ভিসিং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ'-এর অফিস থেকে দুটি রিভলবার, একটি পিস্তল ও এক হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্র ও গুলি সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে ঢাকায় এনে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব অস্ত্র রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারাই সন্ত্রাসীদের প্রধান টার্গেট। মতিঝিলে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীচক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে দাবি করে ডিবি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর মাতুব্বর বলেন, ওই চক্রের ৫০ সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তারা কিশোর ও যুবক। প্রত্যেকেই অস্ত্রধারী। সীমান্ত থেকে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় অবৈধ পন্থায় অস্ত্র এনে ব্যবসা করছে। তারাই আবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে মানুষ খুন করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধের সুযোগ নিয়ে তারা সবুজবাগের এক যুবলীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। টার্গেট করা রাজনৈতিক নেতাদের নাম তিনি প্রকাশ করতে চাননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগে সাতটি থানা রয়েছে। প্রতিটি থানাতেই খুনোখুনি অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে বেশি। গত এক বছরে মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, শাহজাহানপুর, মুগদা ও পল্টন মডেল থানা এলাকায় অর্ধশতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে; ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনাও কম নয়। ওই সব এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন্দল চরম পর্যায়ে। এই সুযোগটাই নেয় সন্ত্রাসীরা। প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরা অত্যন্ত কৌশলে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। গত বছর যুবলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে গুলশানের বিপণি বিতান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের (মতিঝিল) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক মিল্কিকে প্রতিপক্ষের নেতাদের নির্দেশে হত্যা করা হয়। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মিল্কির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন 'ক্রসফায়ারে' তারও মৃত্যু হয়। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগে যুবলীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যেও দলীয় কোন্দল রয়েছে। শিবিরের ক্যাডার গ্রুপও রয়েছে। হরতালকে কেন্দ্র করে ডিএমপির এ জোনেই সবচেয়ে বেশি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। আর ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের কদর ও দাপট বাড়ে। সবুজবাগে যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মগবাজার এলাকায় রেলওয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত বছর এক পরিবারের তিনজন খুন হয়। ওই ঘটনায় কালাবাবু নামের এক সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়। পরে সে 'ক্রসফায়ারে' মারা যায়। তার আগে মগবাজার-মালিবাগ-মতিঝিল এলাকায় রেলের জমির একাংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও তার অনুসারীদের হাতে। গ্রুপটি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও তারা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখত। এরাই যুবলীগের ওই নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এদিকে সাইফুল্লাহ যার কাছ থেকে অস্ত্র পেয়েছে তার সম্পর্কে জানতে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কাছে তথ্য চাওয়া হবে বলে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, কারা সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের সম্পর্কে তথ্য এনআইএর কাছে আছে কি না তা জানতে চাওয়া হবে। রাজধানীর সবুজবাগের কদমতলা থেকে যে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে তা যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হিলি সীমান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই যুবলীগ নেতার নাম এবং তাঁকে যারা হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তাদের সম্পর্কে জানলেও তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু বলেনি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল্লাহ খানকে বৃহস্পতিবারই ডিএমপির জনসংযোগ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়। সেখানে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, যুবলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই ওই নেতাকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে সাইফুল্লাহর তথ্যের ভিত্তিতে। মতিঝিলের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, যুবলীগ নেতাকে হত্যার জন্য অস্ত্রগুলো দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করেছিল সাইফুল্লাহ। সেখানে এক ব্যক্তি তাকে মোট পাঁচটি অস্ত্র দিয়েছিল। বাকি দুটি অস্ত্র সাইফুল্লাহ তার এক সহযোগীকে দিয়েছে। এসব অস্ত্র ব্রাজিল, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্র বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের অস্ত্র কম পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল্লাহ গোয়েন্দাদের আরো জানায়, রাজনৈতিক নেতা হত্যা, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে তাদের কাছে। প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী তাদের নেতা। ডিবি সূত্র জানায়, সাইফুল্লাহ সন্ত্রাসীচক্রের ক্যাডার, অস্ত্র ব্যবসায়ী। একটি সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে অস্ত্র আমদানি ও বিক্রি এবং দখলবাজি, চাঁদাবাজি প্রভৃতিতে জড়িত। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত তিনটি অস্ত্রই অত্যাধুনিক।      

No comments:

Post a Comment