Friday, January 23, 2015

রাজশাহীতে আবারও পণ্যবাহী ট্রাকবহরে বোমা, আগুন:কালের কন্ঠ

নগরীতে আবারও যৌথ বাহিনীর পাহারাধীন পণ্যবাহী ট্রাকে নাশকতার চেষ্টা চালিয়েছে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। তারা কানসাট থেকে ছেড়ে আসা বহরের একটি ট্রাকে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করে। সে সময় স্থানীয় লোকজন তাদের প্রতিরোধ করতে গেলে তাদের ওপরও বোমা হামলা চালায় তারা। নাশকতাকারীদের হামলায় পান ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগকর্মী মাসেম শেখ ও তাঁর ভাই কাজেম শেখ আহত হন। শিবির ক্যাডাররা বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। প্রতিরোধের কারণে
বহরের অন্তত ১০টি ট্রাক রক্ষা পায়। গতকাল দুপুরে নগরীর কাদিরগঞ্জ দরিখরবোনা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। অন্যদিকে, গতকাল সকালে চারঘাটে খড়বোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারীকেও মারধর করা হয়। প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকেলে নগরীর রায়পাড়া এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িবহরে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে শিবিরকর্মীরা। এতে একটি ট্রাকের আংশিক ক্ষতি হয়। ওই ট্রাকটিও যৌথ বাহিনীর পাহারায় কানসাট থেকে ছেড়ে আসা বহরের মধ্যে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যৌথ বাহিনীর পাহারায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে ছেড়ে আসে ১০-১২টি পণ্যবাহী ট্রাক। দুপুর পৌনে ১টার দিকে ট্রাকগুলো নগরীর কাদিরগঞ্জ মসজিদ অতিক্রম করার সময় মাঝের একটি ট্রাকে পেট্রলবোমা ছোড়ে শিবিরকর্মীরা। কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। এতে ট্রাকটির সামনের অংশে আগুন ধরে যায়। ককটেল ও ইটপাটকেলের আঘাতে আরো চারটি ট্রাকের গ্লাস ভেঙে যায়। আগুন লাগা ট্রাকের চালক সামনের দিকে এগোতে থাকলে বাতাসের ঝাঁপটায় আগুন নিভে যায়। শিবির ক্যাডাররা মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে অন্তত পাঁচটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। পান দোকানদার মাসেম শেখ কালের কণ্ঠকে জানান, শিবির ক্যাডারদের তাণ্ডব দেখে তিনি একটি রড নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। তাঁর সঙ্গে আরো দুই-তিনজন যোগ দেন। তাঁর ভাই পাশের উত্তরণ প্রেসের মেশিনচালক কাজেম শেখও যোগ দেন প্রতিরোধে। তাঁরা শিবির ক্যাডারদের ধরার চেষ্টা করায় তাঁদের ওপর পরপর কয়েকটি বোমা ছুড়ে মারে তারা। বোমার বিস্ফোরণে মাসেম শেখ ও কাজেম শেখ আহত হন। হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। প্রতিরোধের ফলে বড় ধরনের নাশকতা থেকে রক্ষা পায় ওই বহরের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। পরে পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে শুরু করে। একই সময়ে র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত হন। মাসেম শেখ বলেন, 'বোমায় আহত হয়েছি, তাতে দুঃখ নাই। প্রতিরোধ করে ট্রাকগুলোকে রক্ষা করতে পেরেছি- তাতেই ভালো লাগছে।' চিকিৎসকরা জানান, বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে মাসেম শেখের বাম হাত, ঠোঁট ও কানের নিচে জখম হয়েছে। তাঁর শরীর থেকে কয়েকটি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে। মাসেম শেখ নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী বলে জানান। কাজেম শেখ জানান, 'হামলাকারীরা বৃষ্টির মতো বোমা ছুড়ছিল। ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মিছিল করতে করতে পালিয়ে যেতে দেখি। সে সময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা আমার ওপরও বোমা হামলা করে।' বোমার স্প্লিন্টারে কাজেম শেখের ডান হাত জখম হয়েছে। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বলে জানান। প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'প্রথমে কয়েকটি ট্রাক দেখলাম পুলিশি পাহারায় যাচ্ছে। এরপর আরো কিছু ট্রাক সারিবদ্ধ হয়ে আসছিল। ঠিক ওই সময় কাদিরগঞ্জ মসজিদের সামনে বোমার বিকট শব্দ কানে আসে। এরপর আরো কয়েকটি বোমার শব্দ শোনা যায়। তখন ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে আসে। আতঙ্কে যে যার মতো দোকানপাট বন্ধ করে দিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। পরে তারা স্লোগান দিতে দিতে চলে যায়। যাওয়ার সময়ও কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।' তিনি জানান, হামলাকারীদের সবারই বয়স ১৮-২৫ বছরের মধ্যে। বোয়ালিয়া থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, 'ছাত্রশিবিরের ছোড়া পেট্রলবোমা এবং ইটপাটকেলের আঘাতে দুটি ট্রাকের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। হামলায় স্থানীয় দুজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে হামলাকারী কাউকে আটক করা যায়নি।' চারঘাটে ট্রাকে আগুন গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চারঘাট-বানেশ্বর সড়কের সারদা টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সামনে গাছের গুঁড়ি ফেলে একটি খড়বোঝাই ট্রাক থামিয়ে তাতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ট্রাকের চালক ও সহকারীকে মারধর করে ট্রাক থেকে নামিয়ে দিয়ে পেট্রলবোমা মেরে ট্রাকটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। মুহূর্তে আগুন পুরো ট্রাকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। কিন্তু এর আগেই ট্রাকটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।      

No comments:

Post a Comment