Friday, January 23, 2015

দূরের যাত্রায় দুঃসহ কষ্ট:কালের কন্ঠ

স্বাভাবিক সময়ে দূরের যাত্রায় ৮৮ শতাংশ যাত্রী মহাসড়ক ব্যবহার করলেও পেট্রলবোমা হামলার মতো ভয়ংকর সব নাশকতায় যাত্রী চলাচল এখন ৩০ শতাংশে নেমেছে। হাসপাতালে অসুস্থ স্বজনকে দেখা, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া, সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করার মতো জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা নির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার জন্য টার্মিনালে গিয়েও তাৎক্ষণিক বাস পাচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দিন শেষে রাতের অন্ধকারে রওনা দিতে হচ্ছে। ম
হাসড়কে চলন্ত বাসের সামনে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার হঠাৎ ব্যারিকেড দিয়ে পেট্রলবোমা কিংবা অজ্ঞাত স্থান থেকে চলন্ত বাসে পাথর ছোড়া হচ্ছে। এ অবস্থায় রাজধানী থেকে ৪০০ কিলোমিটারের বেশি দূরের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের দূরপথে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ৪ জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৮ দিন ধরে মহাসড়ক কার্যত অচল রয়েছে। এ কারণে দিনে সড়ক পরিবহন খাতে ৩৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও পরিবহন মালিক সমিতিগুলোর হিসাবে, দেশে যাত্রী ও পণ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের গাড়ি রয়েছে সাত লাখ। এর মধ্যে বাস ও ট্রাক আছে তিন লাখ। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিজিবি ও পুলিশ পাহারায় ৫৮ হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করেছে। বিজিবি ও পুলিশ পাহারার মধ্যে গতকালও রাজশাহীতে যাত্রীবাহী বাসবহরে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়েছে। রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন বাস টার্মিনালে এখন যাত্রীদের মুখে শুধুই মহাসড়কে বিভীষিকাময় যাত্রার বর্ণনা শুনতে পাওয়া যায়। ভুক্তভোগীদের একজন শারমিন আক্তার রিমি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার কাকরাইলে থাকেন। তাঁর মা অসুস্থ হয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ খবর পেয়ে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। ঘরে তাঁর মন আনচান করতে থাকে। কিন্তু আগের রাতেই হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে রাজধানীর শ্যামলী থেকে ইয়েলো লাইন পরিবহনের বাসে ওঠেন রিমি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে বাস চলছিল ঠিকই, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাওয়ার পর বাসের লোকজন যাত্রীদের হঠাৎ জানিয়ে দেয়, বাস আর সামনে যাবে না। কারণ খুলনা বিভাগের সব জেলায় হরতাল চলছে। কোনোভাবেই যাওয়া যাবে না। মাথায় যেন বাজ পড়ে রিমির। কী করবেন ভেবে পান না। অন্য যাত্রীরা যার যার মতো বিকল্প সন্ধানে বের হয়। রিমি ফেরি পার হয়ে লোকাল গাড়িতে প্রথমে মাগুরা, তারপর যশোর, অবশেষে সেখান থেকে ভেঙে ভেঙে বুধবার বিকেল ৪টায় সাতক্ষীরায় পৌঁছেন। ওই দিন ভোর ৪টায় রওনা দিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টায় তিনি গন্তব্যে পৌঁছেন। সাড়ে ৪০০ টাকার স্থলে ৯০০ টাকা খরচ হয়। সাতক্ষীরায় পৌঁছে রিমি কালের কণ্ঠকে বলেন, এই কষ্ট করতে হলো রাজনৈতিক অবস্থার জন্য। পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করছে বেশি। কিন্তু ৩০০ থেকে ৪৪৩ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের মধ্যে বিভিন্ন পথে বড় গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড় (৪৪৩ কি.মি.), রংপুর (৩০৪ কি.মি.), দিনাজপুর (৩৩৮ কি.মি.), ঠাকুরগাঁও (৪০৭ কি.মি.) ও লালমনিরহাটের (৩৪৩ কি.মি.) মতো জেলাগুলো। সোহাগ পরিবহন, গ্রিন লাইন পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের মতো কম্পানিগুলোর ৭৫ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা দামের বাসগুলো রাতের বেলা সীমিত সংখ্যায় চলাচল করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-খুলনা রুটে এসব বাসে অজ্ঞাতপরিচয় স্থান থেকে ঢিল ছোড়া হচ্ছে। শুধু সোহাগ পরিবহনেরই ২০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ কারণে। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে চলাচলের উপযোগিতার সনদহীন গাড়ি আছে সোয়া তিন লাখ। গাড়ির নির্মাণকালীন নকশা অক্ষত থাকা, ব্রেক-গিয়ার ঠিক থাকা, দরকারি বাতি থাকা, কালো ধোঁয়া বের না হওয়া, গাড়ির রং ঠিক না থাকা- এসব গাড়ির একটি অংশ এখন দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। এগুলোয় চড়তে গিয়ে আবার দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে যাত্রীদের। 'নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশের রাজনীতি ফিট হলে ফিটনেসবিহীন গাড়িও চলত না। গতকাল বৃহস্পতিবার ও গত বুধবার রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাত্রীদের যেতে দেখা যায়নি। পাবনা সদরের মনোহরপুর গ্রামের মো. হাফিজুর রহমানের ঢাকায় এসে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ১৬ জানুয়ারি। দুই দিন আগেই ঢাকায় আসতে গিয়ে দেখেন বাস চলাচল করছে না। চাটমোহর ও ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে দৌড়াদৌড়ি করেও টিকিট পাননি। পরদিন পাবনা শহর থেকে আতাইকোলা পর্যন্ত আসেন সিএনজি অটোরিকশায়। সেখান থেকে ইজিবাইক ও অটোরিকশায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পর্যন্ত আসতে পারেন। এপারে কোনো গাড়ি না পেয়ে আবার ফিরে যান পাবনায়। তিন বোন ও মাকে নিয়ে সংসারের একমাত্র রোজগেরে হাফিজ এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। জানান, সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তাঁর। গত বুধবার দুপুর সোয়া ২টায় সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে দাঁড়ানো নিউ ঈগল পরিবহনের বাসটিতে (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১১২৬৮৪) উঠে জানা গেল, এক ঘণ্টায় পাঁচজন যাত্রী উঠে বসেছেন। তাদেরই একজন বিউটি। বাসের টিকিট কেটে নিশ্চুপ বসেছিলেন জানালার পাশের একটি আসনে। যাবেন চট্টগ্রামে। কখন যে বাস ছাড়বে বুঝতে পারছিলেন না। হরতাল-অবরোধে কেন যেতে হচ্ছে জানতে চাইলে তাঁর জবাব : '১০-১২ দিন কাজে যাচ্ছি না। এখন তো যেতেই হবে।' কথায় কথায় জানা গেল, চট্টগ্রাম ইপিজেডের স্মার্ট জ্যাকেট নামের প্রতিষ্ঠানে সেলাইয়ের কাজ করেন বিউটি। চট্টগ্রাম থেকে খুলনার কয়রায় গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। চট্টগ্রাম-খুলনা পথে সরাসরি বাস চলাচল করে না। তাই খুলনা থেকে ভেঙে ভেঙে প্রথমে ফরিদপুর পর্যন্ত এসেছিলেন। ফরিদপুর থেকে দুপুর ১টায় রাজধানীতে পৌঁছে নিউ ঈগল পরিবহনের বাসে উঠে বসেন। ঢাকা থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচরে যাবেন আবদুল হান্নান। দুই দিন আগে রাঙামাটি থেকে ভেঙে ভেঙে রাজধানীতে এসেছিলেন আদালত-সংক্রান্ত জরুরি কাজে। বুধবার সেই কাজ সেরে সায়েদাবাদে ঘুরতে ঘুরতে ভালো কোনো বাস পাননি। ৩০০ টাকায় টিকিট কেটে তিনিও বসেছিলেন ওই একই বাসে। বললেন, ঢাকায় আসার পর হরতালের কথা শুনেছেন। প্রথমে চট্টগ্রাম যাবেন এই বাসে। সেখান থেকে রাঙামাটি যাবেন লোকাল বাসে। এরপর নানিয়ারচরে নিজের বাড়িতে যাবেন। পরদিন দুপুর নাগাদ পৌঁছাতে পারবেন। বাস কখন ছাড়বে তা তিনি বলতে পারছিলেন না, বাস পেয়েও নিরাপদে যেতে পারবেন কি না বলতে পারছিলেন না। বললেন, 'রাস্তায় বোমায় পুড়ে গেলে নামটা পত্রিকায় লিখে দিয়েন। আত্মীয়স্বজন বুঝতে পারবে আমি কোথায় ছিলাম।' বাসের কন্ডাক্টর মো. রাসেলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, '২০-২৫ জন যাত্রী হলেই বাস ছাড়া হবে।' কিন্তু ঘণ্টা দেড়েক সেখানে অবস্থান করেও বাসটি ছাড়তে দেখা যায়নি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে গিয়ে দেখা গেল, মূল সড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে ঢাকা-সোনাপুর পথের যাত্রীসেবা পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-২৬০৯) যাত্রী তোলা হচ্ছে। ৪৮ আসনের বাসে তখন ১৩ জন যাত্রী উঠেছে। দাঁড়ানো বাসের ভেতরে গেলে যাত্রী আনা মিয়া বলেন, সকাল থেকে বইস্যা থাকতে থাকতে তিন ঘণ্টায় বাস পাইছি। ২০০ টাকার ভাড়া নিতাছে ২৫০ টাকা। কেন বেশি ভাড়া জানতে চাইলে বাসের কন্ডাক্টর বলেন, হরতালের লাইগ্যা বাইড়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর যাওয়ার জন্য গোলাপবাগ থেকে জনপথ মোড় পর্যন্ত হেঁটে হয়রান আতাউর রহমান আর যেন হাঁটতে পারছিলেন না। জানালেন, সরাসরি বাস যাচ্ছে না। তাই প্রথমে ফেনী বা কুমিল্লা যাবেন, সেখান থেকে একটা ব্যবস্থা করে লক্ষ্মীপুর যেতে হবে। তিনি জানতে পেরেছেন লক্ষ্মীপুরে বড় বাস চলাচল করছে না। প্রতি মুহূর্তে গাড়ি চলাচল আর যাত্রীদের ভিড়ে সব সময়ই গমগম করত রাজধানীর সায়েদাবাদের জনপথ মোড়। অবরোধ চলাকালেও কিছু দূরপাল্লার বাস চলাচল করেছে সে মোড় ধরে। গতকাল হরতালের মধ্যে সেখানে গাড়ি চলাচল করেছে হাতে গোনা কয়েকটি। এর আগের দিন বুধবার দুপুর সোয়া ২টায় জনপথ মোড়ে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, ২০-২৫ মিনিট পর পর দূরপাল্লার একটি করে বাস ছাড়ছে। জনপথ মোড়ে ছয়টি বাস কম্পানির একটি পরিবহন কাউন্টারে গেলে সেখানে কর্তব্যরত কাউন্টার মাস্টার চান মিয়া বলেন, '১৯৯৮ সাল থেকে এই লাইনে এসেছি। ২০০৭ সালে একবার এমন অবস্থা হয়েছিল; আর হলো এবার।' মেট্রো সার্ভিসের ৮০টি বাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করছে চার থেকে ছয়টি। বললেন, 'মিনিটে মিনিটে চোখের সামনে লাইন ধইরা গাড়ি চলত, এখন ২৫-৩০ মিনিটে একটা গাড়ি দেখা যায়।' রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রাবাড়ী, জনপথ মোড় থেকে গোলাপবাগে গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেছে, ৪০০টির মধ্যে ২০-৩০টি কাউন্টার খোলা রয়েছে। সায়েদাবাদের মতো রাজধানীর মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকেও দূরপাল্লার বাস চলাচল সীমিত হয়ে গেছে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে দেখতে... : পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাঁড়িভাষার অলিয়ার রহমান ঢাকার একটি গার্মেন্টের কর্মী। ৯ মাসের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর সন্তান প্রসব হতে পারে যেকোনো সময়। গত মঙ্গলবার রাতে প্রথমে ঢাকার গাবতলী থেকে ট্রাকে করে রংপুরে যান; সেখান থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে প্রথমে ঠাকুরগাঁও ও পরে একটি অটোরিকশায় পঞ্চগড়ে যান। এতে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে তাঁর অতিরিক্ত প্রায় ৯০০ টাকা বেশি খরচ হয়। অলিয়ার বলেন, 'দেশের এই অবস্থা শেষ হইবো কবে? বুধবার দুপুরে পঞ্চগড় রেলস্টেশন মাস্টারের কক্ষে পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের চার মাইল এলাকার রমজান আলী তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে রেলের লোকজনের কাছে জানতে চান, ফরিদপুর থেকে পঞ্চগড়ে কিভাবে যাতায়াত করা যায়? রেলের লোকজন কিছু পথ বাতলে দিলেও সময়ের কথা নির্দিষ্ট করে বলতে পারলেন না। রমজান আলী জানান, অবরোধের আগে সরাসরি সড়কপথে চলাচল করা গেছে। এখন আর সে অবস্থা নেই। তাই তিনি ভীষণ চিন্তায় আছেন। ঢাকাগামী কোচ নাবিল এন্টারপ্রাইজের স্থানীয় এজেন্ট ইউসুফ আলী জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় পঞ্চগড় থেকে প্রায় ৫২টি গাড়ি ঢাকায় চলাচল করে। এখন চলাচল করছে মাত্র দুটি। তা-ও কোনো দিন চলে, কোনো দিন চলে না। ঢাকা টু রাজশাহী ১৮ ঘণ্টা : বুধবার বিকেলে রাজশাহী বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী নিয়ামত আলী কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি গত মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন। স্বাভাবিক সময়ে ওই বাসে ভাড়া সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা। ভালোমানের বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এটায় ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। এর পরও রাজশাহীতে পৌঁছাতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে তাঁর। রাজশাহী বাসস্ট্যান্ডে হাতে গোনা যাত্রী ঢাকায় আসার জন্য বাসের অপেক্ষা করছিল। অথচ স্বাভাবিক সময়ে হানিফ, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহনসহ আরো কয়েকটি নামি-দামি বাসের কাউন্টারে যাত্রীর ভিড় লেগেই থাকত। এখন কাউন্টারগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে। রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জে বর্ণালীর মোড় থেকে দড়িখড় বনার মোড় পর্যন্ত আধাকিলোমিটার ও নগরীর বিনোদপুরে ঢাকাগামী গাড়ি বহরে পেট্রলবোমা ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবারও। সিলেট থেকে যাত্রার আগে দানখয়রাত : জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ দূরপাল্লায় যাতায়াত করছে না সিলেট থেকে। গাড়িতে ওঠার আগে সিলেটের অনেকে দানখয়রাত করছে, বিভিন্নভাবে মানতও করছে। জরুরি প্রয়োজনে সিলেট থেকে পরিবার নিয়ে কুমিল্লা যাচ্ছিলেন হোসাইন আহমদ। স্থানীয় বাস টার্মিনালে বুধবার আলাপকালে তিনি বললেন, নিরাপদে যাওয়ার জন্য সদকা-খয়রাত করেছি। মানত করেছি বাড়ি পৌঁছার পর বিশেষ একটা খয়রাত করব। সিলেট ছাড়ার সময় প্রতিটি গাড়ি পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। তারা শহর থেকে গাড়িটি বের করে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে দিচ্ছে। এর পরও যাত্রীরা আতঙ্কে আছে। হরতালের কারণে বুধবার সিলেট-ঢাকা রুটে সোহাগ, গ্রিন লাইন, শ্যামলীসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কুড়িগ্রামে বিপাকে যাত্রীরা : ঢাকার একটি গার্মেন্টের কর্মী মোমেনার বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভেতরবন্দে। জানালেন, 'ছুটি অনেক আগে শ্যাষ হইছে। কাল ফ্যাক্টরিতে যোগ দিতে না পারলে চাকুরি থাকবে না। তাই রাস্তায় বের হইছি। গাড়ি পাই কি না দেখি।' কুড়িগ্রামের যাত্রাপুরের দিনমজুর আবেদ আলী বলেন, 'এলাকাত কাম নাই। জীবন বাঁচে না। ঢাকা যাওয়া ছাড়া হামার উপায় নাই। আল্লার কাছোত জীবন সঁপি দিয়ার রওনা হমো।' (প্রতিবেদনটির জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক রফিকুল ইসলাম, পাবনা প্রতিনিধি আহমেদ উল হক রানা, সিলেট প্রতিনিধি আবদুর রাহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন ও পঞ্চগড় প্রতিনিধি সাইফুল আলম বাবু)।      

No comments:

Post a Comment