Wednesday, January 21, 2015

বাসে স্বামীর পাশে মুহূর্তেই দগ্ধ স্ত্রী:কালের কন্ঠ

ছেলে ডাক্তার, ঢাকায় থাকেন। জরুরি প্রয়োজনে তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য বাসে পাশাপাশি সিটে বসেছিলেন বাবা ইসরাফিল আর মা আম্বিয়া বেগম। জানালার পাশের সিটে ছিলেন আম্বিয়া। হঠাৎ জানালা দিয়ে আগুনের হল্কার মতো কিছু ছুড়ে মারল কেউ। ইসরাফিল কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের পলকে ঝলসে গেলেন আম্বিয়া। একটু আগেও যে মানুষটি ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক- তিনিই এখন কাতরাতে লাগলেন অসহ্য যন্ত্রণায়। এভাবেই অবরোধকারীদের পেট্রলবোমার
আরেকটি শিকার আম্বিয়া বেগম (৪৮)। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভদ্রা রেশম ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তাঁর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুর এলাকায়। বাসটি যখন পেট্রলবোমার কবলে পড়ে, তখন প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আরো অন্তত আটজন আহত হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক আফরোজা নাজনীন জানান, আম্বিয়ার মুখের বাঁ পাশ থেকে গলা পর্যন্ত পুড়ে গেছে। এতে বাঁ চোখটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাঁর মুখের ৮০ শতাংশসহ শরীরের ৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। সহিংসতা এড়াতে পুলিশ পাহারায় একযোগে যাত্রার উদ্দেশ্যে রাজশাহীর পুঠিয়ার বেলপুকুর এলাকায় গতকাল অপেক্ষমাণ ট্রাকের সারি। ছবি : সালাহ উদ্দিন দগ্ধ আম্বিয়ার স্বামী ইসরাফিল জানান, তাঁর ছেলে আশরাফুল হক ঢাকার পান্থপথ এলাকায় অবস্থিত জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। জরুরি প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করেই স্ত্রীকে নিয়ে ছেলের কাছে যাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার রাত ৯টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে শিশির পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। রাত সোয়া ১০টার দিকে তাঁরা নিরাপদেই পৌঁছান রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে আরো যাত্রী নেওয়ার জন্য প্রায় দুই ঘণ্টা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ায় বাসটি। পরে ৪০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ইসরাফিল জানান, টার্মিনাল থেকে মাত্র এক কিলোমিটার পূর্বদিকে নগরীর ভদ্রা এলাকায় পৌঁছেই বাসটি অবরোধকারীদের হামলার মুখে পড়ে। ভদ্রা রেশন ভবনের সামনে ওত পেতে থাকা চার-পাঁচজন বাসটি লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এতে বাসের সামনের ও জানালার বিভিন্ন অংশের কাঁচ ভেঙে যায়। আতঙ্কে চালক বাসের গতি কমিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অবরোধকারীরা জানালা দিয়ে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে। বোমাটি জানালার পাশে বি-১ নম্বর সিটে থাকা আম্বিয়ার শরীরে এসে পড়ে। মুহূর্তেই আগুনে আম্বিয়ার মুখ, গলার বাঁ পাশ ও দুই হাত ঝলসে যায়। ওই বাসের যাত্রীরা জানায়, যখন বাসটি পেট্রলবোমার কবলে পড়ে, তখন আতঙ্কে জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হয় অন্তত আটজন। এর মধ্যে ঝিনাইদহের আবু সুফিয়ান ও তাঁর ছেলে মাইনুল হোসেনকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সোমবার রাতে রাজশাহীর মতিহার কাপাসিয়া এলাকায় চালের কুড়াবোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়েছে হরতাল ও অবরোধ সমর্থকরা। ছবি : কালের কণ্ঠ আহত আবু সুফিয়ান বলেন, 'বাসের মাঝখানের সিটে ছেলে মাইনুলকে নিয়ে ছিলাম আমি। বাসটি শিরোইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার মিনিটখানেক পরই কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামনের অংশের জানালা ভাঙার শব্দ কানে আসে। এর পরই একজন নারী চিৎকার দিয়ে ওঠেন। তাকিয়ে দেখি তাঁর মুখে আগুন জ্বলছে। এরপর আর কোনোদিকে না তাকিয়ে বাসের জানালা খুলে প্রথমে ছেলে এবং পরে আমি লাফ দিয়ে রাস্তায় নামার চেষ্টা করি।' ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই বাসের অন্য যাত্রীরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, 'ওই নারীর গায়ে আগুন লাগার পর দ্রুত নিভিয়ে ফেলায় সেটি ছড়াতে পারেনি।' নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নূর হোসেন খন্দকার বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।        

No comments:

Post a Comment