লাগাতার অবরোধ শুরু হওয়ার এক দিন পরই দুই দিনের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আজ রোববার সরকারি ছুটি থাকায় কার্যত এক দিন অবরোধ স্থগিত থাকছে। নিজেদের নেতা-কর্মীদের শাহজালাল হলে ওঠানো, মামলা প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ‘ভিএক্স’ (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) পক্ষ গতকাল শনিবার থেকে ক্যাম্পাসে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেয়। ভিএক্স পক্ষের নেতা সারোয়ার জাহান গতকাল রাতে প্রথম
আলোকে বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) ও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিন অবরোধ স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি না মানলে আগামী মঙ্গলবার থেকে আবার অবরোধ চলবে। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে খুন হন শিক্ষার্থী তাপস সরকার। এ ঘটনায় করা মামলায় ভিএক্স পক্ষের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই হল ছেড়ে গেছেন। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে একের পর এক সংঘর্ষের কারণে গত বছরের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রলীগের অন্য পক্ষ। তারা ‘সিএফসি’ (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) ও ‘ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ’ নামে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালায়। ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা এই অবরোধে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা হয়েছে। তবে শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের প্রধান বাহন শাটল ট্রেন না চলায় দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। গত শুক্রবার রাতে নগরের ষোলশহর স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শাটল ট্রেনের ভ্যাকুয়াম পাইপ (ইঞ্জিন থেকে প্রতিটি বগিতে বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা) কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির তত্ত্বাবধায়ক আরব আলী প্রথম আলোকে জানান, শুক্রবার রাতে কে বা কারা ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে রাখা দুটি শাটল ট্রেনের ১২টি ভ্যাকুয়াম পাইপ কেটে দেয়। ট্রেন দুটি মেরামতের জন্য ডকে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে শাটল ট্রেন চলেনি। শুক্রবার রাতে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার পর নাম না প্রকাশের শর্তে ভিএক্স পক্ষের কয়েকজন নেতা বলেছিলেন, শনিবার বিশ্ববিদ্যালগামী শাটল ট্রেন ও বাস চলতে দেওয়া হবে না। শাটল ট্রেনের ভ্যাকুয়াম পাইপ কারা কেটেছে গতকাল এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভিএক্স পক্ষের নেতা সারোয়ার জাহান বলেন, ‘এটি কারা করেছে আমরা জানি না।’ অবরোধ প্রত্যাখ্যান করে সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ পক্ষের নেতা শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে তাপস সরকারকে হত্যা করা হয়েছে। এখন অবরোধের নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। তাপস হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গতকাল পৃথক বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিকুল তাজিম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, প্রগতিশীল আন্দোলন দমন করার জন্যই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রলীগের ভিএক্স পক্ষের ছয় দফা দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, এসব দাবির অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। যেসব দাবি পূরণ করা সম্ভব সেসব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment