Saturday, January 10, 2015

ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই ফের হোঁচট অর্থনীতিতে:কালের কন্ঠ

হরতাল-অবরোধে ক্ষয়ে যাওয়া অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতেই পারছে না। যখনই ব্যবসায়ীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন ক্ষতি পুষিয়ে এগিয়ে যাওয়ার তখনই অস্থিতিশীল রাজনীতি আচমকা ধাক
্কা দিয়ে ফেলে দেয় লোকসানের আরো পাতালে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আর নির্বাচন ঘিরে ২০১৩ সালে পতনের তলানিতে পড়ে যাওয়া ব্যবসা-বাণিজ্য গত এক বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, অর্থনীতির কিছু সূচকে ইতিবাচক ছোঁয়াও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন বছরের শুরুতেই ফের হোঁচট। গত এক বছরে যত দূর এগিয়েছিল, নয়া বছরের শুরুতেই হরতাল আর অনির্দিষ্টকালের অবরোধ অর্থনীতিকে ঠিক ততটাই পেছনে টানছে। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির তথ্য মতে, সারা দেশে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন মালবাহী ৬০ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন পণ্য আনা-নেওয়া করে পাঁচ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। অথচ এখন পুলিশ পাহারায় সেই রুটে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য কেবল চার-পাঁচ শ ট্রাক চলছে। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য কোনো পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে পুলিশি নিরাপত্তাও পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট বাদে দেশের অন্য মহাসড়কে পুলিশি নিরাপত্তা নেই। মালিকরা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাস্তায় নামাচ্ছেন। পণ্যবোঝাই যানগুলো প্রায়ই পুড়ছে আগুনে। আর উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি থেকে শুরু করে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। উত্তরের জেলার ক্ষুদ্র কৃষক যেমন তাঁর সবজি রাজধানীতে পাঠাতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি রপ্তানিকারকরাও কারখানা থেকে পণ্য পাঠাতে পারছেন না চট্টগ্রাম বন্দরে। কেবল রপ্তানিই নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের নানা পণ্যের চাহিদা মেটাতে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, মংলা, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়, সেখান থেকেও পণ্য ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে কাঁচামাল নিয়ে কোনো ট্রাক স্থল ও সমুদ্রবন্দর থেকে কারখানায় যেতে পারছে না। গত বৃহস্পতিবার জয়পুরহাট থেকে আলু নিয়ে ছেড়ে আসা একটি ট্রাক অবরোধ সমর্থকরা পুড়িয়ে দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা তিনটি সবজিবাহী ট্রাকও পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জানান, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ পাহারায় ১২৫টি ট্রাক ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে রপ্তানির পণ্য নিয়ে। আর গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এক হাজার ৪৭০টি গাড়িতে তৈরি পোশাক পণ্য ঢাকা থেকে পুলিশ পাহারায় চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গেছে ৭২০টি এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে ৭৫০টি গাড়ি। অবরোধে আমদানির পথও রুদ্ধ হয়ে আছে। ভারত থেকে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে দেশে আসার পথে বেনাপোলে আটকে রয়েছে কয়েক শ ট্রাক। বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০টি ভারতীয় ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দরে আসে। সেসব পণ্য সমপরিমাণ বাংলাদেশি ট্রাকে করে সারা দেশে কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো হয়। তবে অবরোধের কারণে কয়েক দিন ধরে আমদানি পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। ফলে বন্দরের ৩৬টি গুদাম, পাঁচটি ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ও তিনটি টার্মিনালের বেশির ভাগ জায়গা পণ্যে ভরে গেছে। শিল্পের কাঁচামালের অভাবে কারখানাগুলোও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। পরিবহন মালিকরা বলছেন, অবরোধে মালবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় কেবল ব্যবসায়ীরাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, সার্বিক অর্থনীতি ও আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সারা দেশে চলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলোর বড় অংশই স্বল্প দূরত্বে ইট, বালু, রড, সিমেন্টের মতো পণ্য পরিবহন করে। অবরোধে সেগুলো বন্ধ থাকায় এসব পণ্যের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও থমকে আছে। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আবদুল মোতালেব কালের কণ্ঠকে বলেন, সারা দেশে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা এক লাখের মতো। এর মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন চলাচল করে ৬০ হাজার। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলে পাঁচ হাজার। কিন্তু চলমান অবরোধে পুলিশ পাহারায় শুধু তৈরি পোশাক নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রাক চলাচল করছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ রুটে সর্বোচ্চ দুই হাজার করে ট্রাক চলেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হকের কাছে সব মহাসড়কে পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পেলে সব রুটেই মালবাহী ট্রাক চলবে। আপাতত গাড়ির মালিক ও চালক নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু গাড়ি চালাচ্ছেন, যার সংখ্যা কোনোমতেই ২০ হাজারের বেশি হবে না। তবে আশার কথা হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের মতো টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকামুখী পণ্য পরিবহনে পুলিশি নিরাপত্তায় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবহন মালিকরা। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে মহানগর পুলিশ কমিশনার জানান, পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব সদস্য টেকনাফ থেকে ঢাকা পর্যন্ত মহাসড়কে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ বিষয়টি দেখভাল করবে। তবে পুলিশের নিরাপত্তার আশ্বাসে গাড়ি নামাতে রাজি হলেও অবরোধের আগুনে পুঁজি হারানোর আতঙ্ক কাটছে না চট্টগ্রামের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকদের। তাঁরা বলছেন, ২০১৩ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তাঁদের ৯২টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে এক হাজারেরও বেশি। এসব ঘটনায় সরকারের ঘোষণা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের পরিবহন মালিকরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। ২০১৩ সালের টানা হরতাল-অবরোধের সময় পুলিশ পাহারায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট চালু রাখার চেষ্টা করে সরকার। তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের লোকসানের অন্ত ছিল না। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের হিসাবে, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনের মধ্যে ৫৫ দিন হরতাল-অবরোধ হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছর রাজনীতিতে অস্থিরতা ছিল না। বছর ধরে সেই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ২০১৩ সালের ক্ষত যে এখনো শুকিয়ে যায়নি, তার চিত্র মেলে ব্যাংক খাতের বিপুল খেলাপি ঋণের দিকে তাকালে। গেল বছর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ কমে যাওয়া মূলত ২০১৩ সালের হরতাল-অবরোধেরই বিলম্বিত ফলাফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ধীরগতির প্রবৃদ্ধি দিয়েই চলতি অর্থবছর শুরু করেছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। আর অর্থবছরের এ সময়টা বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কার্যাদেশ পাওয়ার মৌসুম হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে অস্থিরতা চলতে থাকলে বিদেশি যেসব ক্রেতা কাজ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন তাঁরা ফিরে যাবেন। আর এ সুযোগ নেবে এ খাতের প্রতিযোগী দেশগুলো। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ০.৭৭ শতাংশ। পোশাক রপ্তানির সঙ্গে গতিহীন হয়ে পড়েছে মোট রপ্তানি আয়ও। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে মাত্র ১.৫৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪.৪২ শতাংশ কম হয়েছে রপ্তানি আয়। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এক দিনে ক্ষতি হয় ২৫০ কোটি টাকা। এতে কাঁচামাল আমদানি এবং উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। সাধারণত সময়মতো পণ্য বন্দরে পৌঁছালেই রপ্তানিকারকদের দায়িত্ব শেষ। কিন্তু সময়মতো বন্দরে পৌঁছাতে না পারলে আকাশপথে পৌঁছানোর ব্যয় বহন করতে হয়। এসব খাতে ২০১৩ সালে উদ্যোক্তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতি যতটা এগিয়েছে, রাজনীতিতে তেমনটি ঘটেনি। তাই এ দুইয়ের কোনো দ্বন্দ্ব না থাকলেও অর্থনীতিকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করাই এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিপর্যস্ত হলেও রাজনৈতিক দাবি আদায় হওয়ার নজির অতীতে দেখা যায়নি। ২০০৬ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিষয়ে আপত্তি তুলে দীর্ঘদিন ধরে হরতাল-অবরোধ পালন করে আওয়ামী লীগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। তখন সব মিলিয়ে প্রায় বছর তিনেক দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ বলতে কিছুই ছিল না। ক্ষুদ্র আয়ের মানুষকেও তখন জীবনের শেষ সঞ্চয়টুকু নিয়ে বাজারে যেতে হয়েছে। ওই তিন বছরের ক্ষত পোষাতে ব্যবসায়ীরা সময় পান ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত, মাত্র চার বছর। তারপর ফের আতঙ্ক হয়ে আসে ২০১৩। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে একবার করে, রায়ের পর একবার করে এবং আপিল বিভাগের রায়ের পরে একাধিক দিন করে হরতাল ডেকেছে জামায়াত। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে হরতাল হয়েছে আরো একবার বেশি, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে। একইভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পাশাপাশি অন্যান্য দাবিতে বিএনপিও একের পর এক হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে, তবে আওয়ামী লীগের অধীনে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি তারা। রাজনৈতিক দাবি আদায়ে অর্থনীতির জন্য প্রাণঘাতী হরতাল-অবরোধ যে কার্যকর কোনো অস্ত্র নয়, তা নিয়ে সন্দেহ না থাকলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভোঁতা এ অস্ত্রটি ছাড়ছে না। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ, জনসভা, বিক্ষোভ-মিছিলের মতো অন্যান্য কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে হরতাল-অবরোধ অবধারিত জেনেও সরকারগুলোও সে পথেই এগোয়। অর্থাৎ নির্বিঘ্নে ক্ষমতায় থাকতে এবং সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় যেতে উভয় পক্ষই অর্থনীতির ঘাতক হরতাল-অবরোধকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। হরতাল-অবরোধে সরাসরি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া ব্যবসায়ীরা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় 'হরতালবিরোধী সমাবেশ' করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল-অবরোধ করবে না- এমন প্রতিশ্রুতি আদায়ের জন্য এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি দলগুলো। পরে হরতাল নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়নের দাবি তোলেন ব্যবসায়ীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ বিভিন্ন মন্ত্রী তাতে সম্মতি জানালেও সরকার সে উদ্যোগ নেয়নি। হরতাল-অবরোধে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বারবার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিকল্প কর্মসূচি দেওয়ার অনুরোধ জানালেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৩ সালের হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ লোকসান হয়েছে। বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন করতে পারেনি, উৎপাদিত পণ্য বাজারে সরবরাহ করতে পারেনি। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের মন্দা পরিস্থিতি নেমে আসে। গত এক বছরে সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাতে ২০১৪ সালের শেষের দিকে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে এক ধরনের ইতিবাচক চিত্র ফুটে ওঠে। এরই মধ্যে আবারও শুরু হয়েছে হরতাল-অবরোধ। ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে অর্থনীতি। এ অবস্থা কোনোমতেই কাম্য নয়। অর্থনীতি ধ্বংসকারী কর্মসূচির বদলে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। দেশের শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করে শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা দেশটাকে যতদূর সামনের দিকে এগিয়ে নেন, রাজনৈতিক নেতারা হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতা করে কয়েক দিনেই ততদূর পিছিয়ে দেন। শিগগিরই রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা সম্ভব না হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। ফলে স্থানীয় বিনিয়োগই কেবল বাধাগ্রস্ত হবে না, জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগের যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তারাও মুখ ফিরিয়ে নেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর গত এক বছরে ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করেও আগের অবস্থায় যেতে পারেননি। ফলে ২০১৪ সালে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ বাড়েনি, বেড়েছে খেলাপি। রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা দেখা গেলেও তা সন্তোষজনক নয়, বরং অর্থপাচার বেড়ে গেছে। সরকারের আর্থিক পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। উচ্চ সুদে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের মলিন চেহারা আরো রুগ্ণ হয়ে পড়ছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায়। শিগগিরই রাজনৈতিক অস্থিরতা না কাটলে গেল বছরের চেয়েও মন্দ হতে পারে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি।      

No comments:

Post a Comment