Saturday, January 31, 2015

রুদ্ধশ্বাস অনিশ্চয়তায় এসএসসি পরীক্ষার্থীরা:কালের কন্ঠ

গত ৬ জানুয়ারি থেকে চলছে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ। তখন থেকেই আলোচনার তুঙ্গে ছিল- আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষার কী হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবরোধের মধ্যেও যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। জাতির স্বার্থে অন্তত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার দিনগুলোতে হরতাল-অবরোধ স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে আসছিল সব পক্ষই। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে আগামী রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়ে
ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সঙ্গে চলবে অবরোধও। ফলে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক, স্বজনসহ শিক্ষক-শিক্ষিকা হরতাল-অবরোধের খৰতলেই রয়ে গেল। অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটি নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো ঘনীভূত হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হরতালের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত রবিবার জানানো হবে। অর্থাৎ হরতালের মধ্যে পড়া পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত মিলবে পরীক্ষার আগের দিন। এ অবস্থায় নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা শুরু হবে কি না- এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি জানতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সোমবার এসএসসির বাংলা প্রথম পত্র, দাখিলের কোরআন মজিদ ও তাজবিদ এবং কারিগরির বাংলা-২ (সৃজনশীল) পরীক্ষা রয়েছে। মঙ্গলবার কোনো পরীক্ষা নেই। তবে বুধবারে এসএসসির বাংলা দ্বিতীয় পত্র, দাখিলের হাদিস শরিফ ও কারিগরির ইংরেজি-২ বিষয়ের পরীক্ষা রয়েছে। অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা থাকলেও হরতালে পরীক্ষা গ্রহণ অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে বিএনপির ৭২ ঘণ্টার হরতাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত হওয়ায় ওই দিনের পরীক্ষাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার আবেদন এখনো বহাল আছে। আমি আমাদের পূর্বের অবস্থান থেকে ফিরে আসিনি। আমি আরো অনুনয়ের সঙ্গে অন্তত পরীক্ষার দিনে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাই।' শিক্ষামন্ত্রী কয়েক দিন ধরেই বিএনপি নেতাদের কাছে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি ও শরিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আল্লাহর দোহাই, মানবতার দোহাই, শিক্ষার্থীদের দোহাই দিচ্ছি...আর কিভাবে আবেদন জানাব? তাঁরা যা করছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। এখনো সময় আছে, আশা করছি এর মধ্যে তাঁদের মানবতা জাগ্রত হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ তাদের রহম দাও।' শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আমাদের আবেদনে তাঁরা নিশ্চয়ই সাড়া দেবেন। সকল দলমত, সবার কাছে আহ্বান, দয়া করে পরীক্ষার আগে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিন। ভীতি সৃষ্টিকারী, মানুষ হত্যাকারী কর্মসূচি বন্ধ করুন।' বিএনপির উদ্দেশে তিনি আবারও বলেন, 'তাঁদের মধ্যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধ চাপা পড়ে আছে; আশা করি তা জাগ্রত হবে এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা নিশ্চিন্তে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করবেন।' জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক গতরাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্তই এখন পর্যন্ত আমাদের সিদ্ধান্ত। আর এ ব্যাপারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে এ মন্ত্রণালয়ই নেবে।' শিক্ষাবিদরা বলছেন, 'দুষ্ট রাজনীতির কবলে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এসএসসির প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী, আর তাদের ৩০ লাখ অভিভাবক- মোট ৪৫ লাখ মানুষের কথা চিন্তা করে যারা পরীক্ষার মাত্র ১৬টা দিন ছাড় দিতে পারে না, তারা কাদের জন্য রাজনীতি করে? শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা এই রাজনীতি আমরা চাই না। পরীক্ষাকে অবশ্যই রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে হবে।' জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অবরোধ-হরতাল করার অধিকার আছে রাজনৈতিক দলের। তবে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মানবিক কারণে কর্মসূচি না দেওয়া উচিত ছিল বিএনপির। কিন্তু বিএনপি তো শিক্ষার্থীদের সেই আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারল না।' সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমি আশা করি, এখনো সময় আছে তারা (বিএনপি) পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ তুলে নেবে।' উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালেমা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পরীক্ষার আগে পড়া বড় কথা নয়, মানসিক প্রস্তুতিটাই বড়। সারা বছরই তারা পড়েছে। এখন পড়ার তেমন কিছু নেই। পরীক্ষার আগে মানসিকভাবে চাঙ্গা হওয়াটাই বড় ব্যাপার। কিন্তু বাচ্চারা সেটা না করে এখন টেলিভিশনের সামনে বসে থাকছে হরতাল-অবরোধের খবর জানতে। এতে কেমন পরীক্ষা হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। আর পরীক্ষা হওয়াটাই তো অনিশ্চিত। এ অবস্থায় আমরা নিজেদের বাচ্চাকে বাসা থেকে বের হতে না দিলেও পরীক্ষার সময় তো বের হতে দিতেই হবে। কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা কে দেবে? এসব ভাবনায় আমরা এখন অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাদের কথা বলার কেউ নেই। কাকে বলব, কোথায় বলব?' গাড়িতে পেট্রলবোমা, আগুন, রাস্তায় ককটেল হরতাল-অবরোধের নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র। তাই অবরোধে পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা হলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষকরা। অবরোধের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করার ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসায় কোনো নিরাপত্তা বিধানের কথা তারা বলেনি। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে বিশেষ বিশেষ স্থানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিএনপির এই অবরোধ অনির্দিষ্টকালের। তাই মন্ত্রণালয় যদি পরীক্ষা স্থগিতও করে, তবে তা আবার কবে থেকে শুরু করতে পারবে, সেটা পুরোপুরি অনিশ্চিত। আর এসএসসি পরীক্ষা পেছালে আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষাও পেছাতে হবে। পেছাতে হবে স্কুল-কলেজের সব ক্লাস পরীক্ষা। তবে এভাবে হরতাল হলে এমনিতেই পেছাতে হবে পরীক্ষা। ফলে শিক্ষাব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হওয়ার পথেই এগিয়ে চলছে। শিক্ষাবিদদের ভাষায়, শিক্ষার্থীরাই তো জাতির ভবিষ্যৎ। তারা কোনো রাজনীতিও করে না। এটা বিএনপিও স্বীকার করে। তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন রাজনৈতিক কর্মসূচির শিকার হবে? তাই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে বিএনপিকেই ছাড় দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে অন্তত পরীক্ষার দিনগুলো হরতাল-অবরোধ স্থগিত করতে হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজনীতিবিদ প্রফেসর ড. শাহেদা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সর্বোচ্চ গুরুত্ব হচ্ছে আমাদের সন্তানরা। রাজনীতি থাকবে, রাজনীতিবিদরাও থাকবেন। তবে একটি পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো জাতিই বিপর্যয়ে পড়বে। তাই এই নষ্ট রাজনীতি বন্ধ করে দলমত-নির্বিশেষে পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা যদি রাজনীতিবিদরা না করেন তাহলে বুঝতে হবে তাঁরা জাতির জন্য নয়, গদির জন্য রাজনীতি করেন।' শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন পরীক্ষার্থী। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত তাদের পরীক্ষা। তবে এই এক মাস আট দিনের প্রতিদিন পরীক্ষা নেই। এর মধ্যে মাত্র ১৬ দিন পরীক্ষা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের ২, ৪, ৮, ১০, ১২, ১৫, ১৮, ২২, ২৪ ও ২৬ তারিখে পরীক্ষা রয়েছে। আর মার্চ মাসের ১, ৩, ৪, ৮, ১০ ও ১১ তারিখে পরীক্ষা রয়েছে। শুধু এই দিনগুলোতে হরতাল-অবরোধ না থাকলেই নির্বিঘ্নে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব। আর ১১ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলেও প্রয়োজনে সেটা ছুটির দিনে বা অবরোধের মধ্যে নিয়ে নেওয়া সম্ভব। জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে রাজনৈতিক। কিন্তু বিপর্যয়ে পড়েছে পরীক্ষার্থীরা। প্রত্যেক ঘরে ঘরে শিক্ষার্থীরা বসে রয়েছে; তারা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। তাই রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত। তবে যেহেতু দুই পক্ষ এর সঙ্গে জড়িত; এক পক্ষ এগিয়ে না এলে সমস্যার সমাধান হবে না। বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তারাও অন্তত পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ চান না। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ধুম ইউনিয়নের সহসভাপতি দিদারুল আলমের মেয়ে নওশীন তাবাসসুম রিক্তি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তাঁর মেয়ে একই ইউনিয়নের গোলকেরহাটে অবস্থিত ফাঞ্জুমাননেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছে। অন্য সবার মতো এই পরিবারটিও উদ্বিগ্ন। দিদারুল আলম গতকাল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমান সংকট রাজনৈতিক। বিএনপির পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তবে বল এখন সরকারের কোর্টে। সরকার সংলাপের আহ্বান জানালেই এসব রাজনৈতিক কর্মসূচি মুহূর্তেই স্থগিত হয়ে যাবে।' তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীর একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি বলেন, '১৫ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মতো আমিও উদ্বিগ্ন। পরীক্ষা পেছালে প্রস্তুতিতে বাধার সৃষ্টি হবে। তাই সরকার যদি একরোখা আচরণ করেও তাহলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বিএনপিকেই সহনীয় হতে হবে। যদি হরতাল-অবরোধ স্থগিত করা সম্ভব নাও নয় তাহলেও অন্তত পরীক্ষার সব কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখতে হবে।' কিন্তু মাঠ পর্যায়ের একজন নেতার এমন মনোভাব থাকলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে অবরোধের সঙ্গে হরতাল দিয়েই আন্দোলনকে তাঁরা চাঙ্গা করতে চাইছেন। কারণ এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে গ্রহণ করাই এখন সরকারের দুর্বল দিক হিসেবে তাঁরা বিবেচনা করছেন। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করেই বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। শিক্ষাবিদ, সুধীসমাজ, শিক্ষকসহ দেশের সব মানুষ পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যানপরনাই বিরক্ত। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব কিছুর ভিকটিম আমরা। যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা পাবলিক না। তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু তাঁরা জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বোঝেন না। জাতির ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের তাঁরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিলেন। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দুর্ভোগ তাঁরা বোঝেন না। পাবলিকের সমর্থনেও তাঁদের কিছু আসে যায় না। তাহলে তাঁরা সহিংসতার পথ পরিহার করতেন। ক্ষমতায় থাকা আর যাওয়াই তাঁদের কাছে বড় ব্যাপার।' গণসাক্ষরতা অভিযানের এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'আমার মনে হয়, এই সময়ে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া রাজনীতিবিদদের সন্তানরা মূলধারায় পড়ে না। তাই তাঁরা আমাদের সন্তানদের দুঃখ বোঝেন না। তাঁরা অন্যান্য বিষয়ে একমত হতে না পারলেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে অন্তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখতে হবে।' রাজধানীর আরমানিটোলা স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে রাফসান। তার বাবা সোহেল তালুকদার গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুপুরে যখন তাঁতীবাজারে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা জানতে পারলাম, তখনই মনের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেশি করে বাসা বেঁধেছে। মনে হচ্ছে, ছেলেকে কি পরীক্ষা দিতে পাঠাব? ছেলেটা বারবার ফোন দিচ্ছে, বাবা এখন কী হবে? বাংলা পড়ব না ইংরেজি পড়ব? অভিভাবক হিসেবে আমি নিজেই আজ অসহায়। ছেলেকে কী উত্তর দেব?' জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, একটা অমানবিক অবস্থান নিল বিএনপি। দেশবাসী আশা করেছিল, পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার হবে। সেটা না করে তারা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করল। বিএনপি ড্রয়িং রুম থেকে হরতাল-অবরোধ দেয় আর এর বোঝা বহন করতে হয় জনগণকে। আর সরকার যেভাবে বল প্রয়োগের দিকে যাচ্ছে সেটাও গণতন্ত্রের উপযোগী নয়।    

No comments:

Post a Comment