Thursday, January 15, 2015

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ছে:নয়াদিগন্ত

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বৃদ্ধি করছে সরকার। তবে এবার আর সরাসরি ভারত সরকারের কাছ থেকে নয়। খোলাবাজার থেকে ৩০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। এ জন্য নিয়োগ হয়েছে একজন ট্রেডিং এজেন্ট। গতকাল সচিবালয়ে ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এটিসহ আরো আটটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।   বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব
মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের সরকারি সংস্থা এনভিভিএন-কে এক বছরের জন্য ট্রেডিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ জন্য তাদের কমিশন দিতে হবে।   প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে এজেন্ট কমিশন বাবদ প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য অতিরিক্ত সারচার্জের বাইরে এনভিভিএন-কে বছরে দুই কোটি ১৭ লাখ টাকা কমিশন দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।   যুগ্মসচিব বলেন, ভারতের খোলাবাজারে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য প্রতি ১৫ মিনিট পরপর পরিবর্তনশীল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ‘ডে এহেড শিডিউল’ পদ্ধতিতে ভারতের খোলাবাজারে বিদ্যুতের সর্বনি¤œ দর ছিল ভারতীয় মুদ্রায় ১ দশমিক ৭১ রুপি এবং সর্বোচ্চ দর ছিল ৪ দশমিক ১৮ রুপি। এর সাথে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের অতিরিক্ত সারচার্জ ছিল দশমিক ০৩৯৭ রুপি। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ হচ্ছে দশমিক ০৪৯৬ টাকা। ক্রয় কমিটির বৈঠকে এ দরটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।   ক্রয় প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একচেঞ্জ ট্রেডিং মার্জিনের ওপর প্রযোজ্য কর বিবেচনায় আনা হয়নি। বিদ্যুৎ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রযোজ্য সব কর ও শুল্ক ক্রয়মূল্যের অতিরিক্ত হিসেবে পরিশোধ করবে।   সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ভারতের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা গ্রিড উপকেন্দ্রে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সহযোগী কনজাম্পশন ও ট্রান্সমিশন সিস্টেম লসের কারণে ৩০ মেগাওয়াট থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমদানিকৃত বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে ভারতের খোলাবাজার থেকে ‘ডে এহেড শিডিউল’ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।   ক্রয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য ক্রয়প্রস্তাবের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গভর্নেন্স ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।   নোয়াখালীর নতুন ও পুরনো ডাকাতিয়া-ছোট ফেনী নদীর ওপর ‘মুছাপুর কোজার’ নির্মাণ এবং মুছাপুর রেগুলেটরের সংযোগ খাল আবার খননের জন্য একক উৎস হিসেবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড’-কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ এ কাজে মোট ব্যয় হবে ১৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।   ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সেতু নির্মাণকাজের প্যাকেজ বি-২-এর আওতায় লালপুল সেতু (২২ দশমিক ৭৭৫ মিটার), লেমুয়া সেতু (৯৩ দশমিক ৩০ মিটার), মহরী সেতু (১৮৮ দশমিক ৬০ মিটার), ধুমঘাট সেতু (২১৫ দশমিক ৭০ মিটার) ও চট্টগ্রাম রেল ক্রসিংয়ের ওপর ওভার-পাস (৩১ দশমিক ৯৩৭ মিটার) নির্মাণকাজের ভেরিয়েশন অর্ডার-১ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে আগের চেয়ে ২৮ কোটি ৭২ লাখ ব্যয় বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।   ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের জন্য দুই হাজার ৮৩১টি ল্যাপটপ ও সমসংখ্যক মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুটো মিলিয়ে মোট ব্যয় হবে ৩২ কোটি টাকা।   ‘দশটি ড্রেজার, ক্রেনবোট, ট্যাগবোট, অফিসার্স হাউজবোট ও ক্রু-হাউজবোটসহ সরঞ্জামাদি/যন্ত্রপাতি সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দু’টি ট্যাগবোট ও একটি বয়া টেন্ডার ভ্যাসেল ক্রয় করা হবে। এটি সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে ভোস্তা এলএমজি-কর্ণফুলী কোম্পানি। এতে ব্যয় হবে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।   আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে প্যাকেজ-৪-এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গমক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন গমের মূল্য ২৭৯ দশমিক ৭৫ ডলার হিসেবে এতে মোট ব্যয় হবে ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।   এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সংযোগসড়ক নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সংযোগসড়কটি নির্মাণ করবে তমা কনস্ট্রাকশন।   শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টে ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেম সংযোজন   প্রকল্প গ্রহণের পাঁচ বছর পর গ্যাসভিত্তিক শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেম সংযোজনের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। মোট ২৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ পাওয়ার প্ল্যান্টে ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেম সংযোজনের কাজটি পেয়েছে যৌথভাবে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘ফুজিয়ান ইলেকট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি’ ও ‘সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং’। জানা গেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তহবিল থেকে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এ দিকে পাঁচ বছর কালক্ষেপণের কারণে প্রকল্পব্যয় বেড়ে গেছে পাঁচ গুণেরও বেশি।

No comments:

Post a Comment