Sunday, January 4, 2015

এক বছরে ছাত্রলীগের হাতে ১০ খুন:নয়াদিগন্ত

বিদায়ী বছরজুড়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের বিষয়টি ছিল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। অতীতের মতো সংগঠনটির আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় অস্থির ছিল শিক্ষাঙ্গন। ছাত্রলীগের অস্ত্রের রাজনীতির কারণে ক্যাম্পাসগুলোতে নেই সহাবস্থান। তাদের একাধিপত্যে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও নামীদামি কলেজের শিক্ষাকার্যক্রমে ব্যাঘাত তৈরি হয়। জানা গেছে, ছাত্রলীগের কোন্দলে কমপক্ষে আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে। সংগঠন
টির কোন্দল আর ত্রাসের কারণে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস বন্ধ ছিল।   শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গেল বছর অকালে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী তাপস রায়। ভয়ঙ্কর ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।   ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী লাঞ্ছনাসহ নানা অভিযোগ অনেক আগ থেকেই ছিল। সম্প্রতি নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইয়াবা ব্যবসার তকমা। গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে ছাত্রলীগের নেতাদের রুম থেকে এক হাজার ২৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।   বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলের সিট দখল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিবাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, অস্ত্র ব্যবসায় ও প্রশিক্ষণ, অপহরণ, শিক্ষক লাঞ্ছনা, সন্ত্রাস থেকে শুরু করে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বছরজুড়েই লিপ্ত ছিল ছাত্রলীগ। আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে নিজ সংগঠনের কর্মীকেও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি ছাত্রলীগ। সাংবাদিক ও শিক্ষক কেউই রেহাই পাননি তাদের কাছ থেকে। ছাত্রলীগের নাম শুনলেই এখন দেশের মানুষ আঁতকে ওঠেন। গত বছর সংগঠনটির নানা অপকর্ম বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছে।   অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আধিপত্য বিস্তারে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। এ কারণে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। ফলে বেড়েছে সেশনজট। ব্যাহত হয় শিক্ষাকার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকের গায়ে এসিড নিেেপর মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের একাধিপত্য চলছে বলে অভিযোগ করছে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন।   খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের নভেম্বরের শেষ দিক থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মারা গেছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষও রয়েছেন।   তা ছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, শতাধিক উল্ল্যেখযোগ্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযোগের তীর সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অধস্তনদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।   চবিতে হত্যাকাণ্ড শুরু চবিতেই শেষ : ছাত্রলীগ গত বছরের হত্যাকাণ্ড চবিতে শুরু করে এবং সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডও ঘটায় সেখানে। গত বছরের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েয় শিবিরের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে বছরের প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটায় ছাত্রলীগ।   জানা যায়, হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির কর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মামুন হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। তিনি শাহ আমানত হল ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। সংঘর্ষকালে শিবিরের তিন কর্মীসহ আরো পাঁচজন গুরুতর আহত হন। সে সময় ছাত্রশিবির দাবি করে, ছাত্রলীগ তাদের তিন কর্মীকে হত্যা করেছে। শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, শাহ আমানত হলের সভাপতি মামুনসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। তাৎণিকভাবে লাশ গুম করে ফেলায় নিহতদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আরো ২০ জন আহত হন বলে দাবি করে শিবির।   চবির সর্বশেষ সংঘর্ষ : সর্বশেষ গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে গুলিতে মারা যান তাপস নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বেদিতে ফুল দিতে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ভিএক্স (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) এবং সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। তারা সবাই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। শ্রদ্ধা জানানোর পর সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শাহ আমানত হলের দিকে এগোতে থাকেন। এ সময় কিছু দূরে অবস্থিত শাহজালাল হল থেকে ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করলে সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের তিন কর্মী আহত হন।   এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই শাহজালাল ছাত্রাবাসের সামনে ভিএক্স পক্ষের নেতাকর্মী এবং শাহ আমানত হলের সামনে সিএফসি এবং ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে সিএফসি পক্ষের কর্মী তাপসের বুকে গুলি লাগে। তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকেরা তাপসকে মৃত ঘোষণা করেন।   রাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা : গেল বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি-বেতন ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছিল প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে পুলিশের সামনেই হামলা চালায় এবং প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতাকর্মীরা। এতে ১২ জন বুলেটবিদ্ধসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ফাঁকা গুলি ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।   এরপর ২ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাও খাওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ ২৬ জন আহত হন। ১৭ মার্চ মধ্যরাতে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের শামসুদ্দিন ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের হামলায় শিবিরের ১০ কর্মীসহ অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন।   শাবিপ্রবিতে বন্দুকযুদ্ধ : ২০ নভেম্বর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সুমনচন্দ্র দাস নামে ছাত্রলীগের একজন বহিরাগত কর্মী। গুলিবিদ্ধ হয়ে আরো কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটলে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান সুমনচন্দ্র দাস। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়।   একই দিনে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।   গত ১৩ নভেম্বর দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কমিটি গঠন নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে তিন মাস সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। এর আগের দিন সোমবার ঢাকা সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়।   জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর গোপালগঞ্জ জেলায় সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন দুইজন। আহত হন আরো ১৩ জন। একই দিন কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যকার গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হন ১১ জন।   অস্ত্র প্রশিক্ষণে ইবি ছাত্রলীগ : আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ছাত্রলীগ! গত ৭ সেপ্টেম্বর রোববার কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুইজন নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে পিস্তল ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রশিক্ষণকালে ধারণ করা ছবিসংবলিত খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে আলোচনার শীর্ষে আসে ছাত্রলীগ।   জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা সজীবের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিণ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক মতিয়ার রহমান। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। এ ধরনের আরো একটি ছবিতে দেখা গেছে, সজীবের কাছ থেকে প্রশিণ নিয়ে নাইন এমএম পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক শিক আজিজুর রহমান মামুন। বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার (ইকোনমি) পদে কর্মরত। তার বাড়ি গাজীপুর জেলায়। ছবিগুলোতে সজীবের অস্ত্রবাহক ছাত্রলীগ কর্মী সালাউদ্দিনকেও দেখা গেছে। তিনি ইবির আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের ২০১১-১২ শিাবর্ষের ছাত্র।   সংবাদ ছাপানোর পর ছাত্রলীগের দুইজনকে বহিষ্কারের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ডিপোতে হামলা চালিয়ে পাঁচটি বাস ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। বহিষ্কারের ঘটনায় ছাত্রলীগ বাস ভাঙচুর করে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন ইবি প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান। এরপর ইবি ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেয় কর্তৃপক্ষ।   কমিটি গঠন নিয়ে ভাঙচুর : কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কলেজের মূল ফটকে তালা দিয়ে ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে বিােভ করে। ফলে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি শিার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিতরা মিছিল নিয়ে কলেজের গেটের সামনের সড়কে প্রায় অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর করে।   একই দিনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে পূর্বঘোষিত সম্মেলনে সংঘর্ষ হয়। এতে করে সিলেট সার্কিট হাউজে ভাঙচুর করা হয়। সেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম উপস্থিত ছিলেন।   ইয়াবা ব্যবসায় ছাত্রলীগ : গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মাকসুদ রানা মিঠুসহ কয়েকজনের রুম থেকে এক হাজার ২৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাটি ফের আলোচনার জন্ম দেয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেটে জড়িত।   অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেসামাল হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে বছরজুড়ে ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষার্থীসহ নিহত হয়েছেন ৯ জন।   চলতি বছরের ৩১ আগস্ট রাজধানীতে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশ ছিল। সারা দেশ থেকেই নেতাকর্মী এসেছিলেন ঢাকায়। সে দিনই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে হত্যা করা হয় নিজ সংগঠনের কর্মী তৌকিরকে। সমাবেশে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের ২৫ জন ছাত্রীকে রুমে তালাবদ্ধ করে চালানো হয় নির্যাতন।   ১৪ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজ দলের নেতাকর্মীদের উপর্যুপরি আঘাতে মারা যান নাঈমুল নামে একজন শিক্ষার্থী। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।   ৪ জুন মারা যান সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা তাওহীদুল ইসলাম। তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবারবন্দী দিয়েছেন ছাত্রলীগের মেডিক্যাল কলেজ সভাপতি সৌমেন দে।   কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রভর্তিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতা সালেহ আহমেদ রাসেল ও জহিরুল ইসলামের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে ২৯ মে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী আহসান হাবিব।   গত ৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ নেতা রুস্তম আলী আকন্দ। পাশের রুমের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন রুস্তম।   এর আগে ৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্মম পিটুনিতে মারা যান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ময়মনসিংহ) ছাত্র সায়াদ ইবনে মোমতাজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।   এ ছাড়া গত বছরের ২৯ নভেম্বর ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন সাধারণ ছাত্র ফারুক।   ছাত্রলীগের যত অন্যায় কর্মকাণ্ড : হত্যাকাণ্ড ছাড়াও এ বছর ভর্তিবাণিজ্যে লিপ্ত ছিল ছাত্রলীগ। বিভিন্ন সরকারি কলেজে নিজেদের পছন্দ মতো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে ছাত্রলীগ। এ বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের ভর্তিবাণিজ্যের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়ে যায়। বন্ধ হওয়া কলেজগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, ময়মনসিংস মমিনুন্নেছা কলেজ, বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ উল্লেখযোগ্য।   ছাত্রলীগের একাধিপত্য: ছাত্রলীগের বন্ধুপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ছাত্রলীগ আবার ভয়ঙ্কর অবস্থায় চলে এসেছে। এভাবে চলতে পারে না। ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই, দখলদারিত্ব এবং টেন্ডারবাজি চর্চার কারণে ছাত্রলীগ অস্ত্রের রাজনীতি করে নিজেরা- নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে হলে এ ধরনের অস্ত্রের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।   সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

No comments:

Post a Comment