![](https://lh4.googleusercontent.com/-3HVV7dIQ_Iw/VKi0kL97gAI/AAAAAAAAGxY/sankE_xx5aU/1_199671.jpg)
‘গণতন্ত্রের হত্যা দিবসে’ সব বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে নামার সিদ্ধান্তে অটল খালেদা জিয়া। গুলশানের বাসা থেকে কালো পতাকাসহ গাড়িবহর নিয়ে আসবেন পল্টনে দলীয় অফিসে। কাছাকাছি সময়ে রাজধানীর দশটি স্পটে জড়ো হওয়া দলের নেতাকর্মীরাও পল্টনের দিকে এগোবেন। এতে বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের বাধা দিলে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ করা হবে। তাদের ওপর হামলা এবং গণগ্রেফতার শুরু হলে টানা হরতালের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। আত্মগোপনে থাকা
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।
![](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_uDR68NoH5JKYjndxmkylhFgOkbLs3xC7GIlK2XgqkTAhUF6ar6T5sf4gQdqvfnQeoYA0whJPmaxcZblL0QzciXJVqoIF49ELiqnVo-H1S71TYlELTmg6_3-_eAOvjVRMJ-hbprtQbDAY0g88jamOFIvd-4i7ZcaVPLvZ4C=s0-d)
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনটি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ দিনটি পালনের জন্য দলের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাপলা চত্বর অথবা পল্টনে সমাবেশ করার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চায় । কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। এদিন কমিশনার কার্যালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষে দীর্ঘ সময় বসে ছিলেন বিএনপির তিন নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবদিন ফারুক ও আবদুল লতিফ জনি। এ সময়ে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসে তাদের জানান, বিশ্ব ইজতেমার কাজে কমিশনারসহ কর্মকর্তারা ব্যস্ত রয়েছেন। উল্টো সরকারি দলের পক্ষ থেকে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলের নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগ নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে রাজপথেই নামতে দেয়া হবে না। এ পরিস্থিতিতে সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে যে কোনো মূল্যে তারা ঢাকায় সমাবেশ করবেই। এ লক্ষ্যে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন থেকে রাজপথে নেমে আসবেন। সূত্র জানায়, বাধা দেয়া আর না দেয়া এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখে ওই দিনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রথমত বাধা না দিলে সকাল থেকে নেতাকর্মীদের একটি অংশকে বাসার সামনে জড়ো হতে বলা হবে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কালো পতাকা হাতে দুপুরের দিকে নয়াপল্টনের উদ্দেশে রওনা হবেন খালেদা জিয়া। বাসার সামনে বালুর ট্রাকসহ ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হলেও তা উপেক্ষা করে বেরোনোর সিদ্ধান্ত রয়েছে তার। ৫ জানুয়ারি রাজপথে নামতে সব ধরনের চেষ্টা করবেন বলে জানা গেছে। বিএনপির হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি সফল করার জন্য এবার তারা প্রায় সব বিষয়ে গোপনীয়তার কৌশল নিয়েছেন। দলের নেতাদের গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকেই তারা কৌশলে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কর্মসূচি চূড়ান্ত করছেন। সব মিলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে দলের নেতাকর্মীরা এদিন যে কোনো মূল্যে রাজপথে নামার সিদ্ধান্তে অটল। ৫ জানুয়ারিকে তারা বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে নিয়েছেন। অনুমতির তোয়াক্কা না করে যে কোনো বাধা উপেক্ষা করে ওইদিন রাজপথে নামাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যা যা করা প্রয়োজন সব প্রস্তুতিই ইতিমধ্যে শেষ করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৫ জানুয়ারি বিএনপির জন্য টার্নিং পয়েন্ট। ওইদিন বিএনপি কি করে সেটা দেখার বিষয়। সব বাধা উপেক্ষা করে ওইদিন তারা রাজপথে নামতে পারলে পরবর্তী আন্দোলনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। চাঙ্গা হবে নেতাকর্মীরা। হামলা-মামলা আর গ্রেফতারের ভয়ে ওইদিন রাজপথে না নামতে না পারলে নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। যা কাটিয়ে পরবর্তীতে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা কঠিন হবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্তিত্ব সংকটেও পড়তে পারে দলটি। জানা গেছে, বিএনপি রাজধানীতে দশটি স্থান নির্ধারণ করেছে। ৫ জানুয়ারি মহানগর, অঙ্গসংগঠন ও জোটের নেতাকর্মীদের ওইসব স্থানে জড়ো হতে বলা হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে স্থানগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি। শুধু দলীয় কর্মীদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। সময়মতো তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। তবে নেতার যে ধরনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাতে সংশ্লিষ্টরা অনুমান করছেন, নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে এসব স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্পট থেকে সবাই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে রওনা হবেন। কোথাও বাধা দিলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলারও প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। ইতিমধ্যে জোট, দল ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরেও ওই দিন রাজপথে থাকতে নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে, ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে নামতে না দেয়াসহ রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানীর ১৬টি পয়েন্টে নেতাকর্মীদের জমায়েত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব। ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ফারুক জানান, ‘গত বৃহস্পতিবারের মতো আজও (শনিবার) একই অবস্থা হয়েছে। আমরা ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারোর দেখা পাইনি। অর্থাৎ আমরা এখনও সোমবারের জনসভার অনুমতি পাইনি।’ অনুমতি না পেলে কী করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, সেজন্য বারবার অনুমতির জন্য আসছি। তারা এখনও প্রত্যাশা করছেন, অনুমতি পাবেন। অনুমতি না পেলে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করবেনই। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, ৫ জানুয়ারি তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, যত বাধাই দেয়া হোক ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন তারা। সূত্র জানায়, বিগত কয়েকদিন ধরে গোয়েন্দা নজর এড়িয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। এ নিয়ে তারা একাধিক বৈঠকও করেন। বৈঠকের এসব সিদ্ধান্ত কাউকে জানানো হয়নি। শনিবার থেকে সংশ্লিষ্টদের নানা মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির পরিকল্পনার বিষয়ে আভাস দেয়া হচ্ছে। আজ রোববার রাতে তাদের চূড়ান্ত করণীয় জানিয়ে দেয়া হবে। এদিকে ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কারা কোন পয়েন্টে থাকবেন তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে করণীয় কি হবে সে নির্দেশনাও দেয়া হয়। সূত্র জানায়, জোটগত ছাড়া ওই দিনকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের রয়েছে আলাদা প্রস্তুতি। ৫ জানুয়ারিতে শিবির একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। তবে জোটের বাইরে নেয়া প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির হাইকমান্ডকেও জানায়নি জামায়াত। সংশ্লিষ্টদের মতে, গাজীপুরে জনসভা করতে না পারায় কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে বিএনপি। যে কোনো মূল্যে জনসভা হবে এমন ঘোষণা দেয়ার পরও শেষ পর্যায়ে সেখান থেকে পিছু হটে তারা। কৌশলগত কারণে পিছু হটলেও ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি নেতাকর্মীরা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দেয় হতাশা ও ক্ষোভ। ওই অবস্থা থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি সফল করতে মরিয়া দলের হাইকমান্ড। ৫ জানুয়ারির আগে রাজপথে কোনো ধরনের সহিংসতা না করার সিদ্ধান্ত হয়। ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন ব্যাপক লোক সমাগমের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ওইদিন কোনো ধরনের সহিংসতা করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। সবশেষ ৫ জানুয়ারি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার কৌশল হিসেবে গাজীপুর থেকে পিছু হটে বিএনপি। শুধু তাই নয়, গাজীপুরে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে হরতাল ডাকা হলেও নেতাকর্মীদের সহিংসতা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। সহিংসতার অজুহাতে যাতে কাউকে গ্রেফতার করতে না পারে সেজন্যই নেয়া হয় এ কৌশল। গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচি সফলের প্রস্তুতি হিসেবে স্থগিত করা হয় ছাত্রদলের সমাবেশ। ৫ জানুয়ারির আগে কোনো ধরনের শক্তি ক্ষয় না করার সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু সরকার হার্ডলাইনে রয়েছে তাই কোনো ধরনের সহিংসতা হলেই চালাতে পারে গণগ্রেফতার। এ আশংকায় সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়।
No comments:
Post a Comment