Wednesday, January 21, 2015

‘আপনারা এসব বন্ধ করুন’:প্রথম অালো

আড়াই বছরের একটা ছোট্টো শিশু কেঁদেই চলেছে। যেন শুধু একটিবারের জন্য বাবা-মায়ের কোলে উঠতে পারলেই পোড়া শরীরের যন্ত্রণা ঘুচবে। অক্ষম বাবা-মা তাকিয়ে আছেন ফ্যালফ্যাল করে। কাঁদছেন কখনো। কখনো শোনাচ্ছেন ছেলেভোলানো ছড়া। শুধু ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের চিত্র এটি। কোলে ওঠার জন্য কখনো কাকুতি-মিনতি, কখনো রাগ, কখনো অভিমান, কখনো কাঁদতে
থাকা শিশুটির নাম সাফির। চিকিৎসক দম্পতি সাইফুল ইসলাম ও শারমিন সিদ্দিকার বড় ছেলে। গত রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয় সে। মাথা, মুখ, গলা, ডান হাত, দুই পা পোড়া ওর। গোটা শরীর ব্যান্ডেজে মোড়া। বাবা সাইফুল ইসলামের দুই হাত পোড়া। মায়ের হাত ভাঙা। তাই সন্তানকে কোলে নিতে পারছেন না। সাফির কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ছে, ঘুম থেকে উঠে আবার কাঁদছে। তার কান্না দেখে কখনো কাঁদছেন বাবা-মা। কখনো রাগে অস্থির হচ্ছেন। কোথায় যাবেন নালিশ জানাতে তাঁরা জানেন না। সে কারণেই হয়তো অজানার উদ্দেশে মা শারমিন সিদ্দিকা একবার বললেন, ‘আপনারা এসব বন্ধ করুন।’ তারপর প্রথম আলোর প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আপনারা শুধু আমার বাচ্চা না, সব বাচ্চার কষ্টের কথা লেখেন। ওদের কষ্ট সবাই দেখুক।’ বাবা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক পোড়া পুড়েছি। আর পুড়তে চাই না। যেটাই করেন, এসব বন্ধ করেন। আমরা একটু বাঁচতে চাই।’ সিটি হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান পরামর্শক মো. শহিদুল বারী বলেন, ‘সাফির যে আশঙ্কামুক্ত, তা বলা যাবে না। তবে অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ঘটনার পরপরই দ্রুত ঢাকায় চলে আসার ফলে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত লাইফ সাপোর্ট লাগেনি। যে পা আগে পুড়েছিল, সেই পা আবার পুড়েছে। সেই পায়ে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ১৭: বার্ন ইউনিটে হরতাল-অবরোধে দগ্ধ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, এনজিও কর্মী, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, রিকশাচালক, বাসচালকের সহকারীসহ মোট ১৭ জন চিকিৎসাধীন আছেন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন সিদ্দিক (৪০), মোরশেদ আলম (৪৫), আবু তাহের (৭০), বিল্লাল (২৬) কারও অবস্থারই কোনো উন্নতি নেই।

No comments:

Post a Comment