Tuesday, February 3, 2015

পুঁজি ভেঙে চলছে মানুষ:যুগান্তর

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যাপক হারে কমেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এতে আয় কমেছে সব শ্রেণীর মানুষের। কৃষকের সবজি ক্ষেতেই পচছে। ক্ষুদ্র দোকানপাটে ব্যবসা লাটে উঠেছে। লেনদেন কমেছে শেয়ারবাজারে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং নিু ও মধ্যবিত্তরা পুঁজি ভাঙিয়ে দিন পার করছেন।
m.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=780&n=acd94d5f' border='0' alt='' /> ঢাকা চেম্বারের হিসাবমতে, একদিনের হরতাল ও অবরোধে শুধু আর্থিক ক্ষতি হয় ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। ওই হিসাবে ২৯ দিনে ক্ষতি ৬৬ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র মাঝারি বড়- সব ধরনের ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, কৃষক ও সাধারণ মানুষের আয় থেকে যাচ্ছে তা। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘ হলে অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় বয়ে আনবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। যে কারণে মানুষের আয় কমেছে। এতে বেশি সমস্যা নিু আয়ের মানুষের। তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে যাদের পুঁজি আছে তারা তা ভেঙে খাবে, আর পুঁজি না থাকলে কষ্ট হবে। এ অর্থনীতিবিদের মতে, অস্থিরতার কারণে উৎপাদন এবং বণ্টন দুই ব্যবস্থাই ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা কীভাবে চলছেন তা অনুসন্ধানে নামে যুগান্তর। পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা : টানা অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দেশব্যাপী প্রায় ২৫ লাখ দোকান রয়েছে। এসব দোকানে প্রায় পৌনে এক কোটি কর্মচারী রয়েছেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৩শ’ কোটি টাকা। বিক্রি কমার কারণে কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। বাধ্য হয়ে অনেক দোকানি মূলধন ভেঙে খাচ্ছেন। বিদেশী পোশাকের পাইকারি ব্যবসায়ী আমেদুল কবির জাকির বলেন, এক মাসে ১০ হাজার টাকাও লাভ হয়নি। অথচ প্রতিদিন দোকান খোলার পর ৩ থেকে ৪শ’ টাকা খরচ হচ্ছে। এখন মূলধনে হাত পড়েছে। জেলা থেকে পাইকার ও ব্যবসায়ী আসা বন্ধ হওয়ায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চকবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী কেন্দ্রে। সু মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস খান যুগান্তরকে বলেন, জেলা থেকে কোনো পাইকার চকবাজারে আসতে পারছেন না। জুতার ব্যবসার সঙ্গে ক্ষুদ্র ৫শ’ ব্যবসায়ী আছেন। ব্যবসা শূন্যের কোটায় নেমে যাওয়ায় মূলধন ভেঙে চলছেন তারা। জুতা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ১৫ হাজার ক্ষুদ্র কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার অধিকাংশ কেরানীগঞ্জ, লালবাগ ও আশপাশের এলাকায়। পণ্য আনা-নেয়া বন্ধ থাকায় এসব ছোট ছোট কারখানাতেও কাজ নেই। চামড়া রেকসিন পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির প্রেসিডেন্ট সোহেল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, পরিস্থিতি প্রকাশ করার মতো নয়। বন্দরে আমার নিজের মাল ২০ দিন ধরে আটকে আছে। দোকানে পণ্য তুলতে পারছি না। একদিকে বন্দরের ক্ষতিপূরণ প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের সুদ, সব মিলিয়ে আমার পুঁজি শেষ করে দিচ্ছে। জুতার ক্ষুদ্র দোকানিদের একই অবস্থা। আয়-ব্যয়ে তাল মিলছে না ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের : পুঁজিবাজারে প্রতিদিন শেয়ারের দাম কমছে। অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এ বাজার থেকে প্রতিদিনের মুনাফা দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু টানা অবরোধে এসব বিনিয়োগকারী মুনাফা দেখছেন না। ফলে একদিকে বাজারে থেকে পুঁজি হারাচ্ছেন, অন্যদিকে পুঁজি ভেঙে এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন। আইসিবির ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার ব্যবসা করেন জিল্লুর রহমান। পেনশন এবং জমানো কিছু টাকা দিয়ে তিনি শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। সংসার খরচের বড় অংশই আসে লভ্যাংশ থেকে। এক বছর আগে তার পোর্টফোলিওর ভ্যালু ছিল ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েছেন ৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু রোববার তার পোর্টফোলিও ভ্যালু ৬৭ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক খাজা গোলাম রসুলের মূল ব্যবসাই শেয়ারবাজার। কিন্তু এখন তার প্রতিষ্ঠানের আয় একেবারে কমে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। কিন্তু ব্যবসা দূরের কথা ব্রোকারেজ থেকে যে টাকা আয় হয়েছে, তাতে কর্মচারীদের বেতনের অর্ধেকও হবে না। তারমতে, সব কোম্পানির একই অবস্থা। পুঁজি হারিয়ে ঋণগ্রস্ত কৃষক : মৌসুমের সবজি খেয়েছে অবরোধ। পরিবহনের অভাবে কৃষকরা তা বাজারজাত করতে পারছেন না। লালমনিরহাট মোঘল হাটের কৃষক হামিদুল ইসলাম ও আনসার আলী ঢাকার কারওয়ান বাজারে কপি নিয়ে আসেন। তারা বলেন, একটি কপির উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪-৫ টাকা। কিন্তু লালমনিরহাটে ২ টাকাও মূল্য পাচ্ছেন না। বহু কষ্টে ট্রাক ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ১৭ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া দিয়েছেন ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু এরপরও এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আরেক কৃষক নবাব রেজা মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ৩৫১ শতক জমিতে কপি লাগাতে গিয়ে খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকার বেশি। বিক্রি করে পাওয়া গেছে মাত্র এক লাখ ৮ হাজার টাকা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও এর আশপাশের এলাকার টমেটো চাষীরা চলতি মৌসুমে শত কোটি টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। অবরোধের আগে এখানে প্রতি মণ পাকা টমেটো ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন টমেটোই কিনছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ চাষী তাই গাছসহ হাল চাষ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, পরিস্থিতির কারণেই মানুষের আয় কমেছে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না। এ অবস্থায় পুঁজি ভেঙে খাওয়াই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, দিন যত যাবে, বেশি মানুষ তাতে আক্রান্ত হবে। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে। দুই রাজনৈতিক দলের শুভবুদ্ধির উদয়ের আশায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ।  

No comments:

Post a Comment