Sunday, February 1, 2015

‘মৃত’ ঘোষণার দুই ঘণ্টা পর নড়ে উঠল নবজাতক:প্রথম অালো

চিকিৎসক ‘মৃত’ ঘোষণার দুই ঘণ্টা পর দাফনের প্রস্তুতিকালে নবজাতক নড়ে উঠে জানান দিল সে জীবিত। গতকাল শনিবার সকাল আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে তাকে ‘মৃত ঘোষণা করে মৃত্যুসনদ’ দেওয়া হয়েছিল। বতর্মানে নবজাতকটি ঢাকা মেডিকেলের নবজাতক ওয়ার্ডের ইনকিউেবটরে রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এর আগে গত ৬ ডিসেম
্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীকে (৪৫) মৃত ঘোষণার চার ঘণ্টা পর দেখা গেছে, তিনি বেঁচে আছেন। অবশ্য ২৬ ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়। নবজাতকটির বাবা জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে জানান, চিকিৎসকেরা না দেখেই তাঁর জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে জানান এবং মৃত্যুসনদ দেন। এ কারণে বাচ্চার জীবন এখন সংকটাপন্ন। এখন যাতে তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁর বাচ্চাকে বাঁচিয়ে তোলেন, সেই আবেদন করেন তিনি। এ ঘটনায় গতকাল বেলা একটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান হাসপাতালের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। তিনি জানান, নবজাতককে না দেখে সহকারী রেজিস্ট্রারের মৃত্যুসনদ দেওয়াটা ভুল হয়েছে। ঘটনা তদন্তে সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ বি এম জামালকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পরিচালক আরও জানান, হাসপাতালের ইনকিউবেটর খালি না থাকায় রাতে নবজাতককে সেখানে রাখা যায়নি। চিকিৎসকেরা অন্য হাসপাতালের ইনকিউবেটরে নিয়ে যেতে বললেও সংগতি না থাকায় তার বাবা নিয়ে যাননি। বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত চলা সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকেরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে শিশুরোগ বিভাগের আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ গঠন হওয়ার আগেই শিশুটি জন্ম নেয়। তার কখনো হৃৎস্পন্দন আসে আবার কখনো থাকে না। এ কারণে শিশুটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তবে তাকে সুস্থ করাটা কঠিন হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর আলম রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জের চুনকুটিয়ার বাসিন্দা। স্ত্রী সুলতানা আক্তারকে শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালে গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুলতানা পুত্রসন্তান জন্ম দেন। এরপর মা ও নবজাতককে ২১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। নবজাতকের নানি হনুফা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, জন্মের কিছুক্ষণ পর তার নাতি নড়াচড়া করছে না দেখে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানান। চিকিৎসক বলেন, ‘বাচ্চার অবস্থা ভালো নয়, এখানে বাচ্চা রাখার ইনকিউবেটর খালি নেই। অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।’ এরপর ওই অবস্থায় নবজাতকের রাত কাটে সেখানে। হনুফা বেগম জানান, সকালেও তাঁর নাতি নড়চড়া করছিল না। সকাল আটটার দিকে (শনিবার) আবার চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি বাচ্চাটি না দেখেই বলেন বাচ্চা মারা গেছে। এরপর বাচ্চাটিকে দাফনের জন্য নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক। নবজাতকের বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, চিকিৎসকের মৃত্যুসনদ নিয়ে তিনি বাচ্চাটি সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের জন্য যান। কবরের স্থানও ঠিক করা হয়। বাচ্চাটি একটি বেঞ্চের ওপর রেখে তাকে গোসল করানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় কবর জিয়ারত করতে আসা ১০-১২ জন কলেজছাত্র বাচ্চার মৃত্যুর কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে বলেন, ‘আপনার বাচ্চা তো জীবিত, নড়াচড়া করছে।’ এ সময় তিনি (জাহাঙ্গীর) দেখেন বাচ্চার হাত-পা নড়ছে। মুখও নড়ছে। ওই ছাত্রদের সহযোগিতায় পরে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। তিনি তাঁর বাচ্চার মৃত্যুর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসককে দায়ী করেন। এ ব্যাপারে গাইনি বিভাগের প্রধান ফেরদৌসী ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে ছয় মাসে বাচ্চাটি জন্ম নেয়। গর্ভের পানি ভেঙে যাওয়ার পর সুলতানাকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি এর আগে কখনো চিকিৎসককে দেখাননি। আল্ট্রাসনোগ্রাফি দেখে ধারণা করা যায়, তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী ছিলেন। ফেরদৌসী ইসলাম আরও বলেন, জন্মের পর শিশুর স্বাভাবিক ওজন থাকে আড়াই-থেকে তিন কেজি। তবে নবজাতকের ওজন ছিল মাত্র এক কেজি ২০০ গ্রাম। প্রথমে তার হৃৎস্পন্দন পাওয়া যায়নি। হঠাৎ করে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ‘এ ধরনের শিশুকে আমরা ক্লিনিক্যাল ডেড মনে করি।’ ইনকিউবেটরে কৃত্রিম উপায়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা হয়েছে। তবে হাসপাতালে থাকা নবজাতকের মা সুস্থ আছেন।

No comments:

Post a Comment