‘নিজের পকেটের টাকায় কখনো শেরাটন হোটেলে খেয়েছেন? খাননি। তাহলে কোম্পানির এজিএম শেরাটনে করলেন কেন? ভোক্তার টাকায় উল্লাস করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে!’ জনগণের টাকায় বিলাসিতার কঠোর সমালোচনা করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান। গতকাল জিটিসিএলের গ্যাসের সঞ্চালনমূল্য বাড়ানোর ওপর গণশুনান
ির আয়োজন করে বিইআরসি। রাজধানীতে বিইআরসির শুনানিকক্ষে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাহী আদেশের পরিবর্তে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবারই প্রথম চালু করেছে বিইআরসি। বিইআরসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেন কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, মাকসুদুল হক ও রহমান মুরশেদ। এ ছাড়া ভোক্তাদের পক্ষে দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন জ্বালানিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। গণশুনানিতে জানা যায়, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন মাশুল ১৩ পয়সা হলেই কোম্পানি লাভজনক হয় সেখানে নেয়া হচ্ছে ৩২ পয়সা। গত অর্থবছরে ৪২৫ কোটি টাকা লাভ করেছে। লাভের টাকায় কোম্পানিটির স্থায়ী আমানত (এফডিআর) বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এফডিআরের পরিমাণ ৯৪৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে (২০১২-১৩) ছিল ৮১৮ কোটি টাকা। কোম্পানির কর্মকর্তারা প্রতি বছর বেশি বেশি বোনাস নিচ্ছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছাড়া কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই প্রতি বছর বোনাস হিসেবে প্রায় চার লাখ টাকা নিচ্ছেন। এ ছাড়া বার্ষিক সাধরণ সভার (এজিএম) নামে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। যেমনÑ এজিএম করা হয় পাঁচতারকা হোটেলে। এমনি পরিস্থিতিতে গ্যাস সঞ্চালনমূল্য আরো ১৫ পয়সা বাড়িয়ে ৪৭ পয়সা করতে চায় কোম্পানিটি। কেন সঞ্চালনমূল্য বাড়াতে চায় এরও কোনো সদুত্তর নেই কোম্পানিটির কাছে। শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা প্রশ্ন করেন, ধারাবাহিকভাবে মুনাফা বাড়ছে; তাহলে কেন দাম বাড়াতে হবে। এর জবাবে জিটিসিএলের প থেকে বলা হয়, আগামীতে অনেক বিনিয়োগ দরকার হবে তাই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালনমূল্য শুধু ১৩ পয়সা হলেই কোম্পানিটি ভালোভাবে চলতে পারে। কিন্তু বিদ্যমান মূল্যেই জিটিসিএল প্রতি ঘনমিটারে প্রয়োজনের অতিরিক্তি ১৯ পয়সা নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন জিটিসিএলের সঞ্চালনমূল্য ১৩ পয়সা করার সুপারিশ করেছে। শুনানিতে জিটিসিএল ছাড়া সবাই মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর কড়া সমালোচনা করেন। বাদ যাননি বিইআরসির চেয়ারম্যানও। তিনি কোম্পানির অপচয়ের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি কর্মকর্তাদের ল করে বলেন, নিজের পকেটের টাকায় কখনো শেরাটন হোটেলে খেয়েছেন? খাননি। তাহলে কোম্পানির এজিএম শেরাটনে করলেন কেন? ভোক্তার টাকায় উল্লাস করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে। জিটিসিএল পরিচালক (অর্থ) শরিফুর রহমান জানান, প্রত্যেক বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিতির জন্য বোর্ড সদস্যদের ছয় হাজার টাকা করে দেয়া হয়। কমিশন জানতে চেয়েছে বোর্ড মিটিংয়ের সম্মানী পাওয়ার জন্য অপ্রয়োজনে বোর্ড মিটিং হয় কি না। তবে বছরে ক’টি বোর্ড মিটিং হয় সে তথ্য জানাতে পারেননি শরীফুর রহমান। এ ছাড়া শুনানিতে উঠে আসে কোম্পানিটি বিইআরসির নির্দেশনা মানছে না। ২০০৯ সালে কমিশন হুইলিং চার্জ ২৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও জিটিসিএল ২০১০ সাল থেকে ৩২ পয়সা করে নিচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়। জিটিসিএলকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলেছে কমিশন।
No comments:
Post a Comment