জানুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ৪ হাজার ঘণ্টা হরতাল পালন করেছে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ২০ দলীয় জোটের ডাকে ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা অবরোধের মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক আলাদা আলাদা এ হরতালের ডাক দেন বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতারা। গড় হিসাবে প্রতি জেলায় ৬২ ঘণ্টা হরতাল পালিত হয়েছে। এর বাইরে ২০ দলীয় জোট কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশে তিন দফায় ৭২ ঘণ্টা বা ৪ দিন একযোগে হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে। জা
নুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ বগুড়াতে পালিত হয়েছে ১৫ দিন হরতাল। কম যায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশ বানচালে গত ৪ ও ৫ জানুয়ারি সারা দেশে অঘোষিত হরতাল পালন করে ক্ষমতাসীনরা। ওই সময়ে দলীয় নেতাকর্মী ও আইনশৃংখলা বাহিনী যানবাহনের পাশাপাশি মানুষের চলাচলে এক ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করে। সবমিলিয়ে পুরো জানুয়ারি মাসে হরতাল-অবরোধে আটকা পড়েছেন সাধারণ মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনযাত্রা। এ অবস্থায় চরম অনশ্চিয়তা ও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন দেশবাসী। এ অবস্থায় আজ রোববার থেকে আবারও শুরু হচ্ছে টানা ৭২ ঘণ্টা হরতাল। আগামীকাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের। জানুয়ারি মাসের হরতাল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে জেলা ও বিভাগভিত্তিক ধাপে ধাপে হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয় স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত। কখনও জোটগতভাবে আবারও কখনও এককভাবে হরতালের ডাক দেয় দল দুটি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অবরোধের মধ্যে কর্মীদের চাঙ্গা রাখার কৌশল হিসেবে জেলা ও বিভাগভিত্তিক আলাদাভাবে এসব হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে ২০ দলীয় জোট। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ায় সর্বোচ্চ হরতাল পালন করা হয়। স্থানীয় নেতাদের ডাকে ৭ দফায় ১১ দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরও ৪ দিন মোট ১৫ দিন হরতাল হয়েছে এ জেলায়। এ জেলায় হরতাল হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ও বিজিবির পাহারায় গাড়ি চলাচলের উদ্যোগ নিলেও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। বিএনপি ও জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ দুই জেলায় স্থানীয় নেতাদের ডাকে ৫ দফায় ৮ দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরও ৪ দিন মোট ১২ দিন হরতাল পালিত হয়েছে। সবচেয়ে কম হরতাল হয়েছে বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে। এ পাঁচ জেলায় স্থানীয় নেতাদের ডাকে একদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরও চার দিন হরতাল হয়েছে। জেলা ও বিভাগভিত্তিক হরতাল পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্থানীয় নেতাকর্মীদের ডাকে সবচেয়ে বেশি হরতাল পালিত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগের ৮ জেলায় সবমিলিয়ে ১ হাজার ৫৬ ঘণ্টা হরতাল হয়েছে। গড়ে প্রতি জেলায় ১৩২ ঘণ্টা হরতাল পালন করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরও চার দিন হরতাল পালন হয় এ বিভাগে। স্থানীয়ভাবে ডাকা হরতালে বগুড়ায় ২২৮ ঘণ্টা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪৪ ঘণ্টা, সিরাজগঞ্জে ১৩২ ঘণ্টা এবং জয়পুরহাট ও নওগাঁয় ১২০ ঘণ্টা করে হরতাল পালিত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। স্থানীয় নেতাদের ডাকে এ বিভাগে ১ হাজার ১১০ ঘণ্টা হরতাল পালিত হয়েছে। গড়ে ৬৫ দশমিক ২৯ ঘণ্টা। ঢাকা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় ৮৪ ঘণ্টা করে হরতাল হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হয়েছে এ বিভাগে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। স্থানীয় নেতাদের ডাকে এ বিভাগের ৮ জেলায় সবমিলিয়ে ৫০৪ ঘণ্টা হরতাল পালিত হয়েছে। জেলাপ্রতি গড় ৬৩ ঘণ্টা। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে ডাকা ৮ দিন করে হরতাল হয়েছে রংপুর ও লালমনিরহাটে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় স্থানীয়দের ডাকে হরতাল হয়েছে ৫৫২ ঘণ্টা। গড়ে ৫৫ দশমিক ২ ঘণ্টা। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় স্থানীয়ভাবে ৫৫২ ঘণ্টা হরতাল পালিত হয়েছে। গড় হরতাল ৫০ ঘণ্টার বেশি। এ বিভাগে কুমিল্লা ও নোয়াখালী এবং ফেনীতে বেশি হরতাল হয়েছে। কুমিল্লায় ৬, নোয়াখালীতে ৫ ও ফেনীতে ৪ দিন হরতাল হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল পালিত হয়েছে। অপরদিকে বরিশাল বিভাগে স্থানীয়দের ডাকে ৬ জেলায় মাত্র ১০২ ঘণ্টা হরতাল হয়েছে। গড় ১৭ ঘণ্টা হরতাল। সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় স্থানীয়ভাবে ৮৪ ঘণ্টা হরতাল হয়েছে। সর্বোচ্চ তিন দিন হরতাল হয়েছে সিলেটে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত হরতাল পালন করেছে দলটি।
No comments:
Post a Comment