ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পড়েছেন ব্যাপক সেশনজটে। একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই থেকে তিন বর্ষ এগিয়ে গেছেন। এক শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার জের ধরে গত বছরের ২৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা প্রায় ৩৪টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর বন্ধ রয়েছ
ে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনেকের ভাষ্য, বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অবিলম্বে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানান। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার বিষয়ে উপাচার্য আবদুল হাকিম সরকারের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সহ-উপাচার্য শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার পক্ষে। দূরত্বগত কারণে পরিবহন চালাতে না পারায় সমস্যা হচ্ছে।’ সেশনজটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বাড়তি ক্লাস নিয়ে ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গত বছরের ২৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা প্রায় ৩৪টি বাস আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর ১ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৩৭ দিন বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। ৭ জানুয়ারি খুললেও এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসিসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে যাতায়াত করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে থাকেন। এসব শিক্ষার্থী পুরোটাই পরিবহননির্ভর হয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। আরও আছেন কয়েক শ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁদেরও একই অবস্থায় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে হয়। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি সেমিস্টার পরীক্ষার মৌসুম। এই মাসগুলোতেই ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক জায়গায় অবস্থিত, যেখানে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। তা ছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই জেলার (ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া) প্রশাসন ক্যাম্পাস নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকে। সব দিক বিবেচনা করে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য: সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাহিন রেজা থাকেন কুষ্টিয়া শহরের একটি মেসে। তিনি ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। ক্যাম্পাস দফায় দফায় বন্ধ থাকায় এখনো তিনি দ্বিতীয় বর্ষেই রয়ে গেছেন। একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বন্ধুরা তৃতীয় বর্ষ শেষ করে ফেলেছেন। শিক্ষাজীবন আজ অনিশ্চিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নবীয়েল হারামাইন বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা এক ধাপ করে পিছিয়ে যাচ্ছি। আর দেশ পেছাচ্ছে দুই ধাপ।’ বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন মনে করেন, ইচ্ছা করলেই এ অবস্থার অবসান ঘটানো যায়। ছুটিগুলো কমাতে হবে। শিক্ষক ও প্রশাসনকে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। তাহলে কিছুটা পোষানো সম্ভব। শিক্ষক সমিতির সাবেক ও বর্তমান দুই নেতার ভাষ্য: জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর রাশিদ আসকারী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট ভয়ংকর বেড়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শতভাগ পরিবহন নির্ভরতাই সমস্ত সমস্যার মূল কারণ। এর কারণেই অন্য সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে। পরিবহননির্ভরতা কমানো অথবা শতভাগ আবাসিক করা ছাড়া এ সমস্যা থেকে বের হওয়া কঠিন বলে মত দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন বলেন, এভাবে চলতে পারে না। উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরুর কথা বলা হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে। তার অভিযোগ, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো চিন্তা করে না। প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে। অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, মাথাব্যথা হলে মাথা কাটা ঠিক না। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রশাসন শক্ত থাকলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দল আছে, মত আছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সবার বিবেচনা করা উচিত।
No comments:
Post a Comment