Wednesday, March 11, 2015

ঢাকা জেলা পরিষদের খাই খাই প্রকল্প:যুগান্তর

ঢাকা জেলা পরিষদে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সীমাহীন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি। অথচ বিল তুলে নেয়া হয়েছে। এমনকি ভুয়া প্রকল্পের ছড়াছড়ি অবস্থা। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, কবরস্থানসহ নানা প্রকল্পের নামেও অর্থ লুট করার অভিযোগ রয়েছে। এই জেলা পরিষদের অধীনে থাকা পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে দোহার ও নবাবগঞ্জে। এ রকম দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনায় এলাকাবাসীর
মধ্যে ক্ষোভের অন্ত নেই। তারা ঢাকা জেলা পরিষদের এ ধরনের ‘খাই খাই’ প্রকল্পের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ থেকে ২ লাখ টাকার প্রকল্প রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক। এসব প্রকল্পে টাকার পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই কোনো কাজ না করে বিল তুলে নেয়া হয়েছে। এ রকম ভয়াবহ দুর্নীতি হওয়ায় ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের এসব প্রকল্পকে স্থানীয় জনসাধারণ ‘হাঁটি হাঁটি খাই খাই প্রকল্প’ হিসেবে নামকরণ করেছে। দেখা গেছে, কোনো একটি গ্রামের নামের সঙ্গে মাদ্রাসার নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে। আবার ওই একই মাদ্রাসার নামের সঙ্গে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে পৃথক আরও একটি প্রকল্প দেখানো হয়েছে। এভাবে ভুয়া প্রকল্পের সংখ্যাও কম নয়। অথচ এসব ভুয়া প্রকল্পের কাজও শেষ হয়েছে বলে নথিপত্রে উল্লেখ করে বিল পরিশোধ করা হয়। এদিকে প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির বাস্তব চিত্র যাচাই করতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে নমুনা হিসেবে সম্প্রতি কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করা হয়। দেখা গেছে, এলাকার যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে তা স্থানীয়রা জানেন না। এমনকি ওই সব প্রতিষ্ঠানের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্যই নেই। অথচ তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ তুলে নেয়া হয়েছে। এ রকম তথ্য শুনে তারা হতবাক হয়ে যান। এ প্রসঙ্গে নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গ্রামের জনৈক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, তাদের এলাকার মাঝপাড়া যুবসংঘ, আগলা দক্ষিণ চৌকিঘাটা মসজিদ উন্নয়ন ও চৌকিঘাটা কবরস্থান উন্নয়নে বরাদ্দ থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। তবে বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তুইতাল মেইন রোড থেকে বাজার পর্যন্ত রাস্তায় ১৫ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ হয়। এখানেও গত এক বছর কোনো কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। এদিকে তুইতাল উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলা অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণে দুই পর্বে ৯০ (নব্বই) লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ হয়। কিন্তু সেখানে বেসমেন্ট (ভিটি) করার পর আর কোনো কাজ হয়নি। অথচ ঠিকাদার বেশিরভাগ বিল তুলে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তুইতাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, তার স্কুলের কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে কেন কাজ হচ্ছে না তা তিনি জানেন না। নয়নশ্রী ইউনিয়নের বাংলাবাজার হতে ঘোষপাড়া কালীমন্দির হয়ে উত্তর বাহ্রা রাস্তায় ইট সলিংয়ের কাজে ১৫ লাখ টাকা প্রকল্প বরাদ্দ হয়। সেখানে মাত্র ১ হাজার ফুট কাজ হয়। বাকি রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি। এলাকাবাসী জানান, গত এক বছর আগে এই রাস্তায় হতদরিদ্র সৃজনশীল কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮ লাখ টাকার কাজের প্রকল্প দেখানো হয়। জেলা পরিষদের ও সৃজনশীল বরাদ্দের অর্থে পুরো রাস্তাটি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও তার কিছুই হয়নি। নয়নশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান মো. পলাশ চৌধুরী বলেন, প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় অল্প টাকায় সম্ভব নয়। তাই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প দিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মলয় কুমার রায় বলেন, এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকায় অনেক রিপোর্ট হয়েছে। তাই নতুন করে আর কিছু বলার নেই। দোহার-নবাবগঞ্জের অনেক রাস্তার প্রকল্প চলমান রয়েছে। তা সত্ত্বেও একই রাস্তায় একাধিক সংস্থার বরাদ্দ দেখানো হয়। এলজিইডির রাস্তায় জেলা পরিষদ, কাবিখা, সৃজনশীল কর্মসূচি ও এলজিএসপির বরাদ্দ দেখানোর কথা বলা হয়েছে। এর ফলে একটি প্রকল্পের অর্থ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হলেই বাকি প্রকল্পগুলোর টাকা পকেটস্থ করা সহজ হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এভাবেই খোলামেলা দুর্নীতি চলছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে ঢাকা জেলা পরিষদসহ অন্যান্য দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জড়িত।  

No comments:

Post a Comment