Monday, March 23, 2015

ওয়ার্ডপ্রতি ভোটার উত্তরে দ্বিগুণ:কালের কন্ঠ

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ডপ্রতি ভোটারসংখ্যায় তারতম্য ব্যাপক। সবচেয়ে বেশি ভোটার উত্তরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডের ভোটার এক লাখ ১৫ হাজার ৫৩৬ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার দক্ষিণের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডের ভোটার মাত্র ১২ হাজার ৯৬ জন। গড়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ওয়ার্ডগুলোর ভোটারসংখ্যা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভোটারসংখ্যার দ্বিগুণ। উত্তরে প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৬৬ হাজার ৬২৩
জন ভোটার; আর দক্ষিণে গড়ে ৩৩ হাজার ১৭৪ জন। ভোটারের এ ব্যবধান নিয়েই আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন। নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটারসংখ্যার তারতম্যের কারণে ঢাকার দুই সিটির আসন্ন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা জামানত, নির্বাচনী ব্যয়- এসব ক্ষেত্রেও সমান অবস্থানে থাকবেন না। ভোটারসংখ্যার অনুপাতে প্রার্থীর জামানত ও নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারিত থাকায় কম ভোটারের ওয়ার্ডের প্রার্থীদের কম টাকা ব্যয় করতে হবে। কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগ করার সময় জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে ওয়ার্ডের সীমানাবিন্যাস করা হয়নি। এ কারণেই ভোটারসংখ্যার এ ব্যবধান। সীমানাবিন্যাসের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন-২০০৯-এর ২৯ ধারা অনুসারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য জনসংখ্যার সর্বশেষ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ওয়ার্ডের সংখ্যা ও সীমানা নির্ধারণ করার কথা। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের সীমানা সর্বশেষ বিন্যাস করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এরপর ২০০১ ও ২০১১ সালে আদমশুমারি হলেও ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগকে একাধিকবার তাগিদ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ করা হয়। ঢাকা উত্তরে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৬ এবং ঢাকা দক্ষিণে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৬ নির্ধারণ করা হয়। পরে দক্ষিণে আরো একটি ওয়ার্ড যোগ করে ৫৭টি করা হয়। এতে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় উত্তরে ১২টি এবং দক্ষিণে ১৯টি। স্থানীয় সরকার বিভাগ দুই সিটির জন্য আগের ওয়ার্ডগুলোর সীমানা অপরিবর্তিত রেখে শুধু নতুন ওয়ার্ড নম্বর নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় দক্ষিণের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা পাড়া ও মহল্লার ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণ না করায়। ফলে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিনেও তা করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন গত বছর স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানাবিষয়ক গেজেট-প্রজ্ঞাপনে এলাকার অখণ্ডতা বজায় রাখা হয়নি। এ তিন ওয়ার্ডের সীমানা পাড়া ও মহল্লাভিত্তিক না হওয়ায় বিষয়টির পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। কমিশনের এ সুপারিশ অনুসারে গত ২৬ জানুয়ারি ওই তিন ওয়োর্ডের সীমানা পাড়া ও মহল্লার ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গেজেটের কপিসহ চিঠি পায় কমিশন। তবে জনসংখ্যার সর্বশেষ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ওয়ার্ডের সংখ্যা ও সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়ে যায়। ভোটারসংখ্যায় তারতম্য : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুসারে উত্তর ঢাকার ৩৬টি ওয়ার্ডের আটটিতে ভোটারসংখ্যা ৮০ হাজার থেকে প্রায় এক লাখ। বাকি ২৮টিতে ৩১ থেকে ৮০ হাজারের মধ্যে। সর্বাধিক এক লাখ ১৫ হাজার ৫৩৬ জন ভোটার রয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সর্বনিম্ন ৩১ হাজার ৭৭৭ জন ভোটার রয়েছে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। দক্ষিণ ঢাকার ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টি ওয়ার্ডের ভোটার ৫০ থেকে ৭৫ হাজারের মধ্যে। বাকি ৫১টি ওয়ার্ডের ভোটার ১২ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে। ১৬ হাজারের নিচে ভোটার রয়েছে চারটি ওয়ার্ডে। সর্বাধিক ৭৫ হাজার ১৭৫ জন ভোটার রয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সবচেয়ে কম ভোটার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে, মাত্র ১২ হাজার ৯৬ জন। ইসি সূত্র জানায়, ভোটারসংখ্যা কিছু এদিক-ওদিক হতে পারে। এ হিসাব কয়েক দিন আগের। বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : ভোটার বা জনসংখ্যার এই ব্যবধানকে সমস্যা বলতে চান না নগর গবেষক ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, দক্ষিণের ভোটারসংখ্যার সঙ্গে উত্তরের ভোটারসংখ্যার তুলনা করার প্রয়োজন নেই। ঢাকার দুই সিটি আলাদা। আলাদা সত্তা হিসেবেই দুই সিটিকে বিবেচনায় নিতে হবে। যে সিটির যে বাস্তবতা সে অনুসারেই ব্যবস্থা নিতে হবে। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, উত্তর সিটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এখানে বনানী, বারিধারা ও গুলশানের মতো এলকা রয়েছে। সেখানে উচ্চবিত্তের লোকজনের বাস। উত্তরায় মধ্যবিত্তের অবস্থান। মিরপুরে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত উভয়ই রয়েছে। মহাখালী, করাইল মোহাম্মদপুর, আদাবরে প্রচুর বস্তিবাসী রয়েছে। তেজগাঁও, মিরপুর, উত্তরায় অনেক শিল্প-কারখানা রয়েছে। এ সিটির মধ্যে রয়েছে সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাসস্থান এবং সিটি করপোরেশনের আওতার বাইরে সেনানিবাস। নগরপিতা যিনি হবেন, তাঁকে এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্তের জীবনমান উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তাঁকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গঠিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব ড. শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশন কম ওয়ার্ড নিয়েও যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে দক্ষিণের পক্ষে তা সম্ভব হবে না। উত্তরা, গুলশান, বারিধারার বাড়ির মালিকরা সিটি করপোরেশনকে ট্যাক্স পরিশোধ করে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পরিস্থিতিটা কিছু জটিল। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করার সময় বলা হয়েছিল, এতে এলাকা কমে যাওযায় প্রশাসনিক সুবিধা এবং নাগরিক সেবা দুটোই বাড়বে। নির্বাচনের পর দেখতে হবে, সেটা সত্যিই হয় কি না।    

No comments:

Post a Comment