Thursday, March 19, 2015

সেমির স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ:প্রথম অালো

কোহলি, ধোনি, রায়না, ধাওয়ান... সাকিব, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ, তামিম... কাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ল্যাংহাম হোটেলের সামনে উৎসুক জটলা থেকে নামগুলো পাওয়া গেল। ছয়-সাতজন ভারতীয়র সঙ্গে বাংলাদেশেরও তিন-চারজন। জাতীয়তা ভিন্ন, তবে উদ্দেশ্য এক। প্রিয় তারকাকে যদি এক ঝলক দেখা যায়! ঠিক ১৭ ঘণ্টা পর এমসিজিতে মহাপ্রতীক্ষিত উপমহাদেশীয় লড়াই শুরু। প্রতিটি মিনিটই যেন ‘ঘণ্টা’ বলে মনে হচ্ছে ওই জটলাটার কাছে। তাদের কাছেই
রাখা হলো প্রশ্নটা—প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল থেকে যে চারটি নাম সবার আগে মনে আসে, বলুন তো? যেটির উত্তর শুরুতেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার পছন্দের সঙ্গে হয়তো মিলেছে, হয়তো মেলেনি। এটা কোনো বড় সমস্যা নয়। সমস্যা হলো, এই ম্যাচ নিয়ে আলোচনায় ধোনি-মাশরাফিদেরও ছাপিয়ে কখনো কখনো একটি ‘উপদ্রব’-এর বড় হয়ে ওঠা। তার নাম বৃষ্টি। এসব দেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মানে পোপের বাণী! সেই পূর্বাভাস বলছে, ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ‘উনি’ অবশ্যই নামবেন। অস্ট্রেলিয়ার সরকারি আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ৬টা থেকে ১০টার মধ্যে বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা ৭০ ভাগ। তা ২ থেকে ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তার চেয়েও শঙ্কার কথা, বৃষ্টি একা না এসে বজ্রকেও সঙ্গী করে নিয়ে আসতে পারেন। এই ম্যাচ নিয়ে দুই দলের গেমপ্ল্যানেই তাই বৃষ্টির অনিবার্য ছায়া। ভারতীয় দলের খোঁজখবর পাওয়া কঠিন। তবে দুই দিন আগেই বাংলাদেশের একরকম চূড়ান্ত একাদশ কাল বিকেলের টিম মিটিংয়ে ১১ থেকে ১২ হয়ে গেল। যোগ হলো শফিউলের নাম। আজ সকালে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি আরেকটু বুঝে-সুঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বৃষ্টি অনিবার্য মনে হলে নাসির হোসেনের বদলে শফিউল। শেষ পর্যন্ত যদি তা-ই হয়, একটা ‘বিপ্লব’ই হয়ে যাবে। বাংলাদেশ মাঠে নামবে চার পেসার নিয়ে! এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিয়ে যত আলোচনা, তাতে ঘুরে-ফিরে আসছে পেস-বিপ্লব। কাল ধোনির বদলে ভারতীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা সুরেশ রায়নার একটা কথা তো রীতিমতো চমকে দিল। বাংলাদেশের স্পিনারদের নিয়ে কী একটা প্রশ্নের জবাবে রায়না ওই সাংবাদিককে সংশোধন করে দিলেন, ‘ওদের তো ফাস্ট বোলিং অ্যাটাক।’ বাংলাদেশ দল সম্পর্কে এমন কথা কস্মিনকালেও কেউ শোনেনি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের এই বিশ্বকাপ অবাক করা এমন আরও অনেক কিছুই উপহার দিচ্ছে। রায়নাই বলছিলেন, বিশ্বকাপের আগে নতুন আইন, দুই নতুন বল, কন্ডিশন, উপমহাদেশীয় দলগুলোর এখানে ভালো করার মতো অলরাউন্ডার নেই...কত কথাই না হয়েছে। অথচ উপমহাদেশের চারটি দলই কোয়ার্টার ফাইনালে। বাংলাদেশকে এ জন্য অভিনন্দন জানানোটাও কর্তব্য বলে মনে হলো তাঁর। এশিয়ার চার দলের একটি কাল যেভাবে খসে পড়ল, সেটিও তো ক্রিকেটীয় বোধবুদ্ধিকে বুড়ো আঙুল দেখানোর মতোই। ‘চোকার্স’ দক্ষিণ আফ্রিকার নকআউট ম্যাচে চোকিংয়ের ইতিহাস একদিন না একদিন শেষ হতোই। কাল সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় তাই বিস্ময় নয়, কিন্তু সেই জয়ে দুই স্পিনারের ৭ উইকেটকে বিস্ময় বললেও কম বলা হয়। উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে স্পিন খেলায় শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদেরই যেখানে এগিয়ে রাখা হয়, তাদেরকেই কিনা স্পিন দিয়ে ধসিয়ে দিচ্ছে পেসারদের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা! এই ম্যাচের আগে এমন কথা বললে ইমরান তাহিরও তা বিশ্বাস করতেন বলে মনে হয় না। আর ডুমিনিকে হ্যাটট্রিক-ট্যাটট্রিকের কথা বললে তো তাঁকে নিয়ে রসিকতা করা হচ্ছে ভেবে নির্ঘাত চটে যেতেন। অবিশ্বাস্য নাটকীয়তা দিয়ে শুরু নকআউট পর্ব আরও কী কী বিস্ময় জমা রেখেছে, কে জানে! তার একটি কি বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উঠে যাওয়া হতে পারে না? স্বপ্নটা মনে আছে, কিন্তু মুখে তা বলতে ভয় পান মাশরাফি বিন মুর্তজা। জীবন তাঁকে নিয়ে এমন খেলাই খেলেছে যে, বেশি কিছু চাইতে সাহস হয় না। যখনই ফর্মের চূড়া ছুঁয়েছেন, তখনই আততায়ী হয়ে এসেছে চোট। সেদিনই বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের সব মানুষ চায় আমরা যেন জিতি। সে জন্যই আসলে খুব মন চায় যে, এই ম্যাচটাতে যদি তাদেরকে জয় উপহার দিতে পারতাম। সঙ্গে সঙ্গেই আবার মনে হয়, বেশি চেয়ে ফেলছি না তো!’ কাল দুপুরে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলন। তাতে সেমিফাইনাল নিয়ে প্রশ্ন তো হবেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ছুঁয়ে যাচ্ছে কি না প্রশ্নের জবাবে উত্তরটা দিলেন খুব সুন্দর, ‘স্বপ্নের তো শেষ নাই। প্রথমে ছিল আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারব কি না, এখন সেমিফাইনালে যেতে পারব কি না।’ কাজটা কঠিন, এ তো সবারই জানা। তবে নকআউটে অসম্ভব বলেও কিছু নেই। কেভিন পিটারসেনের কথা শুনে যেমন মনে হলো, এমসিজিতেও এসসিজির মতোই নাটকীয় কিছুর অপেক্ষায় আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের বিরতির সময় ফক্স স্পোর্টসে আলোচনায় সাবেক ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান একটা সমীকরণও দাঁড় করিয়ে দিলেন। বাংলাদেশ যদি আগে ব্যাটিং করে ২৮০-৯০ করে ফেলতে পারে...। ভারতের এই ব্যাটিং লাইন আপের কাছে ২৮০-৯০ এমনিতে ব্যাপার হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এটি যে নকআউট ম্যাচ! রান তাড়া করার সময় বোলিংয়ের সঙ্গে ‘চাপ’-ও থাকবে অদৃশ্য প্রতিপক্ষ হয়ে। মাশরাফি-সাকিব নন, আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ‘বোলারের’ নামও ওটাই। চাপ!

No comments:

Post a Comment