Saturday, March 14, 2015

শত কোটি টাকা ক্ষতি পুলিশের:কালের কন্ঠ

সরকারের প্রতিপক্ষ ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধের ৬৭ দিনে নাশকতাকারীদের প্রতিরোধ ও জনগণের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে পুলিশের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ। নাশকতাকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশের শতাধিক যানবাহন; আহত হয়েছেন দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ঢাকায় একজনের মৃত্যুও হয়েছে। অতিরিক্ত ডিউটি করায় ওভারটাইম দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত কাজের চাপে অনেক পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং তাঁদের
চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে বাড়তি অর্থ। গাড়ির জ্বালানি তেল ও অতিরিক্ত ডিউটিরত সদস্যদের খাবারের পেছনে খরচ হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। অনেক সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের রুখতে অন্তত ১৫ হাজার রাউন্ড গুলি খরচ করতে হয়েছে পুলিশকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। তারা প্রকাশ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও হামলা চালাচ্ছে। মাঝেমধ্যে থানায়ও হামলা হচ্ছে। পুলিশের ওপর বোমা মারা হচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে পুলিশের অতিরিক্ত পরিশ্রম হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি হওয়া তো স্বাভাবিক। নাশকতার নামে বিএনপি-জামায়াত জোট সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। যানবাহনে পেট্রলবোমা মেরে ব্যাপক ক্ষতি করছে। নাশকতাকারীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। তবে দেশের পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। পুলিশ সদরের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, আন্দোলনের নামে ২০ দলীয় জোট দেশের সম্পদ নষ্ট করছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। দুর্বৃত্তদের রুখতে গিয়ে প্রায় এক শ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। তিনি আরো বলেন, মানিকগঞ্জ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, জামালপুরসহ আরো কয়েকটি জেলায় নাশকতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নাশকতাকারীদের হামলায় ২০০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ঢাকার মৎস্য ভবনের সামনে পেট্রলবোমায় কনস্টেবল শামীম মারা গেছেন। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ রাতে পল্টনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় দুই সাব-ইন্সপেক্টর আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি জোট আন্দোলনের নামে নাশকতা চালাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করছে। নাশকতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা হামলার শিকার হচ্ছেন। এর পরও পুলিশ তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে পুলিশের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতিদের আন্দোলনে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। নাশকতা করলেই কঠোর ব্যবস্থা। সিএমপিতে নাশতাবাবদ দৈনিক ব্যয় বেড়েছে লাখ টাকা : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক এস এম রানা জানান, ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালের কারণে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সদস্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। অবরোধ-হরতালে পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত নাশতা দেওয়া হয়। শুধু নাশতাবাবদ দৈনিক ব্যয় বেড়েছে এক লাখ আট হাজার ৮০০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জ্বালানি ব্যয়ও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) এ কে এম শহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, নগর পুলিশের প্রায় ১৬০০ সদস্য অবরোধ-হরতালের ডিউটি করছেন। দায়িত্বরত সদস্যদের প্রতিদিন জনপ্রতি ৬৮ টাকার নাশতা দেওয়া হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন শুধু নাশতাবাবদ ব্যয় হচ্ছে এক লাখ আট হাজার ৮০০ টাকা। সেই হিসাবে ৫২ দিনে শুধু নাশতাবাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা। জ্বালানি ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে নগর পুলিশের জ্বালানি ব্যয় ছিল প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের ছয় মাস বাকি থাকতেই ব্যয় হয়ে গেছে প্রায় সাত কোটি ১০ লাখ টাকা। এ কারণে জ্বালানি ব্যয় নির্বাহের জন্য অতিরিক্ত পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে।' বরিশালে পুলিশের ব্যয় বেড়েছে : বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক রফিকুল ইসলাম জানান, নাশকতাকারীদের রুখতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি এ সময়ে পুলিশের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার কে এম এহসানুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় জেলা পুলিশের প্রতি মাসে ৯ লাখ টাকার জ্বালানি তেল প্রয়োজন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে জ্বালানি তেল বাবদ মাসে আরো দুই লাখ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। শুকনো খাবারের জন্য বাড়তি বরাদ্দ সম্প্রতি পেয়েছেন বলে জানান তিনি। এ জন্য এখন ব্যয়ের বিষয় যথাযথভাবে বলা যাচ্ছে না। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে পুলিশের কর্তব্য পালনে প্রতি মাসে ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকার জ্বালানি তেল (পেট্রল) প্রয়োজন হতো। আর অতিরিক্ত খাবার (শুকনো) প্রয়োজন হতো না। তবে গত দেড় মাসের হরতাল-অবরোধে পুলিশের দায়িত্ব পালনে প্রায় ৩৯ লাখ টাকার জ্বালানি তেল এবং ২০ লাখ টাকার শুকনো খাবার ব্যয় হয়েছে। বগুড়ায় পুলিশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি : বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক লিমন বাসার জানান, হরতাল-অবরোধে বগুড়ায়ও পুলিশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিগত দুই মাসে বগুড়া জেলায় পুলিশের ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহনে জ্বালানি খাতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। অতিরিক্ত ডিউটি করার কারণে পুলিশ সদস্যদের খাবারের জন্য ৩৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের হামলায় পুলিশের একটি গাড়ি ও রিকুইজিশন করা একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এটি মেরামতে ব্যয় হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। হরতাল-অবরোধে ডিউটি করার সময় হামলায় আহত হন পাঁচজন পুলিশ সমস্য। তাঁদের চিকিৎসাবাবদ ব্যয় হয় এক লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, পুলিশের অতিরিক্ত ডিউটি বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত টেনশন ও ঝুঁকির কারণে অনেক পুলিশ সদস্যের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত ডিউটি করতে গিয়ে নারী সদস্যদের সমস্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এসব কারণে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।    

No comments:

Post a Comment