সাকিব বা মুশফিক যদি আরেকটু সময় উইকেটে থাকতেন! আর ১০-১৫ রান যদি বেশি হতো! রুবেলের ওভার দুটি কি সাকিব কাজে লাগালে ভালো করতেন? ভেট্টোরির ক্যাচটি যদি হাতে জমাতে পারতেন নাসির! যদি এটা হতো কিংবা ওটা...এমন অনেক অনেক ‘যদি’ মিলিয়ে শেষের প্রাপ্তি বড় একটা ‘ইশ্’। অল্পের জন্য হলো না! নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হেরে গেলে এমন ‘যদি’ ও ‘ইশ্’ ভিড় করে সব সময়ই। বাংলাদেশের কালকের হারও ব্যতিক্রম নয়। ন
িউজিল্যান্ডকে মওকামতো পেয়েও হারাতে না পারার আক্ষেপ থাকছে। কিউইদের অপরাজেয় যাত্রা থামিয়ে বিশ্বকাপকে আরেকটি বিস্ময় উপহার দিতে না পারার হতাশাও আছে। তবে আক্ষেপ-হতাশা এবার ডালপালা মেলছে না। বরং তা ঢাকা পড়ছে প্রাপ্তির ছায়ায়। ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে যে দল, হারিয়েছে সহ-স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকেও, সেই দলকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে কজন ভাবতে পেরেছিল! আগের ৫ ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছিল কিউই বোলাররা। পারেনি বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিতে। আগের ৫ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই শ ছাড়াতে পেরেছিল কেবল শ্রীলঙ্কা, ২৩৩। বাংলাদেশ কাল সেখানে করেছে ২৮৮! অ্যান্ডারসন-ব্রড, জনসন-স্টার্ক-মালিঙ্গাদের তুলাধোনা করেছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। এক স্কটল্যান্ড ম্যাচটি ছাড়া আর সব ম্যাচেই দলকে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। সেই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানকে এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবার দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে (৮) আউট করেছে বাংলাদেশ, স্ট্রাইক রেটও এই প্রথম এক শর বেশি নয়! ম্যাচ শেষে ম্যাককালাম স্বীকারও করলেন, বাংলাদেশ তাদের যথেষ্টই অস্বস্তিতে রেখেছিল ম্যাচজুড়ে। বাংলাদেশ দল ও মাহমুদউল্লাহকে প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতেও ভোলেননি কিউই অধিনায়ক। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি অবশ্যই মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের জন্য এই বিশ্বকাপ নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ। মাহমুদউল্লাহ দেখিয়ে যাচ্ছেন, সেই চ্যালেঞ্জ কীভাবে জিততে হয়। প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ২৩, পরের ম্যাচে ২৮, এরপর ৬২, ১০৩ ও অপরাজিত ১২৮! দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সঙ্গী একগুচ্ছ রেকর্ড। বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট বোদ্ধাদের স্তুতি। কাল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে যখন আকাশে উড়ছেন মাহমুদউল্লাহ, ধারাভাষ্যকক্ষে তখন ইয়ান স্মিথের চারপাশ কাঁপানো উচ্চারণ, ‘মাহমুদউল্লাহ ইজ আ সুপারস্টার অব দিস ওয়ার্ল্ড কাপ!’ এই ‘সুপারস্টার’-এর আশপাশের তারারাও কম উজ্জ্বল নয়। সৌম্য সরকারের কথাই ধরুন। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করে উইকেট ছুড়ে এসেছেন। কিন্তু ৫১ রানের যে ইনিংসটি খেলেছেন, সংখ্যার সামর্থ্য নেই সেটির গুরুত্ব বোঝানোর। বোল্ট-সাউদির সুইং যেভাবে সামলেছেন, সুইং নিষ্ক্রিয় করতে যেভাবে ‘শাফল’ করে খেলেছেন, ধুঁকতে থাকা ইনিংসকে পাল্টা-আক্রমণে যেভাবে গতি দিয়েছেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের একখণ্ড প্রামাণ্যচিত্রও তুলে ধরেছেন তাতে। শুধু কালই অবশ্য নয়, আগের ম্যাচগুলোতেও ২৮, ২৫, ৪০ রানের ছোট ইনিংসগুলোও দলকে দিয়েছিল গতি। ‘ফিনিশার’ হিসেবে নিজেকে আরও একবার মেলে ধরেছেন সাব্বির রহমান। সাড়ে তিন বছর পর দলকে নেতৃত্ব দিতে নেমে সাকিব আল হাসান দেখিয়েছেন, চর্চার অভাবে নেতৃত্ব প্রতিভায় মরচে খুব বেশি ধরেনি। বল হাতেও টুর্নামেন্টে প্রথমবার চিনিয়েছেন নিজেকে। স্লগ ওভারে এত ভালো বোলিং করতে পারেন, নাসির হেসেন নিজেও কি তা জানতেন! তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে আসলে আরেকটি প্রাপ্তি। স্কোরকার্ডে যেটি থাকবে না, থাকবে নিজেদের আর প্রতিপক্ষের মনে। একটি বার্তা—এই বাংলাদেশ নির্ভীক! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রচণ্ড চাপের ম্যাচে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্নায়ু ধরে রেখেছিল। কাল নতুন বলে বোল্ট-সাউদি মেলে ধরেছিলেন সুইং বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনী। রানের চাকা ছিল থমকে, দুই ওপেনারও বিদায় নিয়েছেন দ্রুতই। ফিল্ডিং কখনো কখনো ছিল টেস্টের মতো, ঘিরে থাকা ফিল্ডারদের মুখ চলেছে সমানে। এভাবে চাপে ফেলে অস্ট্রেলিয়ান, ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের গুঁড়িয়ে দিয়েছে কিউই বোলাররা। কিন্তু বাংলাদেশ ভড়কে যায়নি। পাল্টা জবাব দিয়েছে। রান তুলেছে তিন শ ছুঁই-ছুঁই। রান তাড়ায় নতুন বল হাতে ১ ওভারে ১৬ হজম করেও নিজেকে সরিয়ে নেননি সাকিব। নিউজিল্যান্ড যখন ২ উইকেটে তুলেছে ১৬৪, হাল ছাড়েনি তখনো। ঠিকই নাভিশ্বাস ছুটেছে কিউইদের। এই বাংলাদেশ অন্য রকম। পরাজয়ে প্রাপ্তি হাতড়ে বেড়াতে হয় না। বরং এই বাংলাদেশের প্রাপ্তিগুলোই উজ্জ্বল হয়ে মেলে ধরে নিজেদের!
No comments:
Post a Comment