Monday, March 16, 2015

কাঁটাতার-প্রাচীরে ঘেরা হচ্ছে রেললাইন:যুগান্তর

রেলওয়েতে নাশকতা প্রতিরোধ ও রেলওয়ের সম্পদ দখল ঠেকাতে রেললাইনের দু’পাশ ও স্টেশন এলাকায় কাঁটাতার ও প্রাচীর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সব কয়টি স্টেশনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ স্ক্যানিং মেশিন স্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে টঙ্গী-ঢাকা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ও স্টেশন এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। এ জন্য প্রায় ২২ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়ে
ছে। টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের ২১ কিলোমিটার লাইনে কাঁটাতার ও প্রাচীর নির্মাণের কাজ আগামী এপ্রিল মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু হবে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বাকি রেলপথ ও স্টেশন এলাকায় বেড়া ও প্রাচীরের কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু হবে। আগামী ২ মাসের মধ্যেই রেললাইন ও স্টেশন এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হবে জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি যুগান্তরকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে লাইন ও স্টেশন এলাকায় বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথমে টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে কাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো রেলওয়েতে বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন স্টেশনে সিসি ক্যামেরা ও স্ক্যানিং মেশিন বসানো হবে। বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণ করা হলে রেলওয়েতে নাশকতা প্রতিরোধসহ, রেলওয়ে সম্পদ, যাত্রীদের জানমাল রক্ষাসহ যাত্রী সেবা বাড়বে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যে কোনো মূল্যেই লাইনের দু’পাশ, স্টেশন এলাকা ও বেদখলে থাকা রেলওয়ের সম্পদ উদ্ধার করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে নাশকতাকারীরা রেলপথকে বেঁচে নিচ্ছে। চোরাগোপ্তা হামলার অংশ হিসেবে নাশকতাকারীরা রেললাইন উপড়ে ফেলা, ব্রিজের পয়েন্ট খুলে ফেলা, স্টেশন ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। প্রতিরোধকারী সংস্থার শত প্রতিরোধেও নাশকতা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, রেলপথ ও স্টেশনসমূহ উন্মুক্ত থাকায় নাশকতাকারীরা সহজেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে। একই সঙ্গে রেলওয়ে সম্পদ দখলে নিয়ে দোকানপাটসহ কোথাও কোথাও বাসাবাড়িও নির্মাণ করছেন। টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে কাঁটাতারের বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণে প্রায় ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে জানিয়ে রেলওয়ে সচিব মো. মুনসুর আলী সিকদার যুগান্তরকে জানান, গত বছরের ২৩ অক্টোম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করতে এসে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, রেলপথে কাঁটাতারের বেড়া ও স্টেশন এলাকায় প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে পুরো রেললাইন কাঁটাতারের বেড়া ও প্রাচীর দিয়ে ঘেরে দেয়ার। তিনি বলেন, মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের ২১ কিলোমিটার রেলপথে কাঁটাতারের বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। সরেজমিন টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রেলপথ ঘুরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় প্রাচীর রয়েছে। বাকি রেললাইন ও স্টেশনসমূহের কোনোটিতেই প্রাচীর নেই। বর্তমান রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, সাবেক রেলপথমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদের বিশেষ করে টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত লাইনের দু’পাশে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিলেন। কিন্তু! উচ্ছেদের পরপরই তা আবার দখল হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকালে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত লাইনের দু’পাশে কাঁটাতারের বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু! রেলওয়ের নিয়োগ কেলেঙ্কারির ঘটনায় তিনি পদত্যাগ করায় ওই সময় তা বাস্তবায়ন হয়নি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন যুগান্তরকে জানান, লাইন ও স্টেশন উন্মুক্ত থাকায় চোরাগোপ্তা হামলা যথাযথ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসীরা রেলওয়েতে নাশকতা চালাচ্ছে। লাইনের দু’পাশ ও স্টেশন এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণ হলে নাশকতা প্রতিরোধের পাশাপাশি রেলওয়ের সম্পদও রক্ষা করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, শুরুতে টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ রুটে বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তারপর বিশেষ করে তার অঞ্চলের (পূর্বাঞ্চল রেলপথ) গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যায়ক্রমে বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে রেললাইনের দু’পাশে বেড়া ও প্রাচীর নির্মিত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যে হারে নাশকতা চালানো হচ্ছে, তা ঠেকাতেই লাইনের দু’পাশে বেড়া ও প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাইনের দু’পাশে বেড়া, প্রাচীর নির্মাণ হলে যাত্রীসেবা বাড়ার পাশাপাশি ট্রেনের গতিও বাড়বে বলে তিনি জানান।  

No comments:

Post a Comment