Tuesday, March 24, 2015

ঢাকা-চট্টগ্রামে ঝুঁকি বেশি ১৪০০ ভোটকেন্দ্রে:কালের কন্ঠ

সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাব ও পুলিশ বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়েই বেশি কৌশল নেওয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা এবং র‌্যাব-পুলিশের বিশেষ ইউনিট ঝুঁকিপূর
্ণ কেন্দ্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ গবেষণা চালায়। তিন সিটিতে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দুই হাজার ৭১০। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০টি কেন্দ্র। পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে এসব কেন্দ্রে সন্ত্রাসীরা হামলা চালাতে পারে, প্রার্থীদের কোন্দলে বিশৃঙ্খলা-সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। সহিংসতা এড়াতে নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো নজরদারির পাশাপাশি সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো কঠোর নিরাপত্তার আওতায় আনতে ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মহানগর পুলিশের কমিশনার, সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডিআইজি, র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং এপিবিএনের প্রধানের কাছে বিশেষ নির্দেশনাসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকেও অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিজিবিকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা হবে। তাদের সহায়তা করবে র‌্যাব। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২২ জন পুলিশ সদস্য ও অন্তত ১৫ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েনের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে পুলিশের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ভোটারদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীকেও মাঠে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, কঠোর নিরাপত্তায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কেউ নির্বাচন আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সেসব কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবে। কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে তাদের কঠোরহস্তে দমন করা হবে। আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চট্টগ্রামেও ভোট নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন, পাড়া-মহল্লায় জনসংযোগও শুরু করেছেন। পাশাপাশি চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে, সঙ্গে হরতাল। নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচন ঘিরে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনাও আগের চেয়ে বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সাম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র এক হাজার ৮৭টি, দক্ষিণে সাম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ৮৭৩টি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭৫০। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, 'আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো কঠোর নজরদারির আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। কেউ নির্বাচনী আইন অমান্য করলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' সূত্র জানায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৪৫। চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৫৫। নির্বাচনের দিন এসব কেন্দ্র দখল-পাল্টাদখল হতে পারে। বিশেষ করে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও তাঁদের সহযোগীরা হত্যাসহ যেকোনো সহিংস ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। প্রার্থীদের কোন্দলের জের ধরেও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ বৈঠক হয়েছে। সেখানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনার এবং জোনের উপকমিশনাররা ছিলেন। বৈঠকে র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ ইউনিটের তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা উপস্থাপন করা হয়। পরে পুলিশ কমিশনাররা আলাদাভাবে ওসিদের নিয়েও বৈঠক করেন। নির্বাচনকে পেশিশক্তিমুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। তাদের সহায়তা করবে র‌্যাব। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভোটের দিন সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে অনুরোধ করেছি নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচন কমিশনও আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, নির্বাচনের স্বার্থে যা যা করা দরকার তা-ই করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তিন সিটি এলাকায় বিশেষ অভিযান চালানো হবে। ইতিমধ্যে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করে তালিকা করেছি। নির্বাচন এলাকাগুলোতে দায়িত্বরত শীর্ষ কর্তাদের কাছ বিশেষ নির্দেশনার চিঠি পাঠানো হয়েছে।' ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে থাকবে বাড়তি নজর। শিগগির বিশেষ অভিযান চালানো হবে। কোনো সন্ত্রাসী প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।    

No comments:

Post a Comment