Monday, March 23, 2015

নতুন প্রতিজ্ঞায় মাশরাফিদের ফেরা:প্রথম অালো

অপেক্ষার শুরু সেই বিকেল থেকে। শেষ হলো রাত ৯টার দিকে, যখন ক্রিকেটাররা একে একে ছেড়ে গেলেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কেউ নিজের গাড়িতে, কেউ বিসিবির ব্যবস্থাপনায়। কিন্তু ক্রিকেটারদের ঘরে ফেরার পথটা একেক জনের একেক রকম হওয়ায় অতৃপ্তিতেই শেষ হলো সমর্থকদের অপেক্ষা। ‘বিশ্বকাপ-বীর’দের উদ্দেশে একবারের জন্য হাতও যে নাড়তে পারল না বিমানবন্দর সড়কে অপেক্ষমাণ জনতা। ক্রিকেটাররাও দেখতে পেলেন না সেই ভক
্ত-সমর্থকদের সারি, তাদের হাতে ধরে রাখা বর্ণিল ব্যানারগুলো। তবে যে আবেগ নিয়ে জনতার এই অপেক্ষা ছিল, সেটা নিশ্চয়ই ছুঁয়ে গেছে মাশরাফিদের? এমিরেটসের বিমানটা রানওয়ে স্পর্শ করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টারও মিনিট পনেরো পর। তবে টারমাক পেরিয়ে ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছাতে খুব দেরি হয়নি ক্রিকেটারদের। ভিআইপি লাউঞ্জ চামেলিতে তখন বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারী আর সংবাদকর্মীদের ভিড়। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা সেই ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসতেই হাততালি আর স্লোগান। ভিড়ের মধ্যেই মাশরাফির গলায় উঠল ফুলের মালা, হাতে ফুলের তোড়া। এরপর ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ আর বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসকে দুই পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বসলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, যে পর্বটা শেষটা হলো মিষ্টিমুখ দিয়ে। তা এটা মিষ্টিমুখ করার উপলক্ষই বটে! আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয়ের পর বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকেও বিদায় করেছে বিশ্বকাপ থেকে। হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার স্বপ্নপূরণ। বাজে আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে নিজেদের বাজে দিন মিলিয়ে মাশরাফিদের বিশ্বকাপটা ওখানেই হয়তো থেমে গেছে। তবে এটাই যে বিশ্বকাপ থেকে যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সেরা অর্জন নিয়ে ফেরা। মাশরাফি শুরুতেই কৃতিত্বের ভাগ দিলেন বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে, ‘কোচকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। বিশ্বকাপের দুই মাস আগে থেকে উনি আমাদের যে সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো অনুশীলন করিয়েছেন, সেগুলো অনেক কাজে লেগেছে। এ ছাড়া আমরা বিশ্বকাপ শুরুর দুই সপ্তাহ আগেই ব্রিসবেনে গিয়ে অনুশীলন ক্যাম্প করেছি। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এটার দরকার ছিল। এ রকম একটা আইডিয়ার জন্য টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ।’ কোচের ভূমিকা দেখেছেন তিনি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতেও, ‘কোচ আমাদের নিজের মতো করে খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন। ভালো পারফরম্যান্সের জন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ বিমানবন্দর সড়ক থেকে ভক্ত-সমর্থকদের স্লোগান যেমন ‘চামেলি’ পর্যন্ত পৌঁছার কথা নয়, বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশ দলের সাফল্য কামনায় দেশের মানুষ কতটা প্রার্থনামগ্ন ছিলেন সেটাও অদেখা মাশরাফিদের। তবে অধিনায়ক বললেন, ক্রিকেটের প্রতি দেশের মানুষের আবেগ-আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় নিয়েই মাঠে নামেন তাঁরা, ‘আমরা সব সময় দেশের মানুষের জন্যই খেলি, তাদের জন্যই ভালো খেলার চেষ্টা করি। ক্রিকেটের মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে কিছু দিতে চাই।’ মাশরাফিদের পক্ষ থেকে দেওয়ার পাল্লাটা এবার বেশ ভারীই ছিল। আবেগময় ব্যানার আর স্লোগানে তার কিছুটা হলেও কাল ফেরত দিতে চাইলেন সহস্রাধিক সমর্থক। বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানানোর প্রয়াস যেমন তাঁদের ছিল, ছিল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোও। কারও ব্যানারে লেখা, ‘বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না’, কেউ-বা সান্ত্বনা দিতে চাইলেন এই বলে, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে তোমরা পরাজিত হওনি, পরাজিত হয়েছে ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট।’ কিন্তু মাশরাফির দলের সেসব অদেখাই রয়ে গেল। বিমানবন্দর সড়কের যানজটের কথা ভেবে ক্লান্ত ক্রিকেটারদের বেশির ভাগই ঘরে ফিরেছেন বিকল্প পথে। কেউ গেছেন উত্তরার দিকে, কেউ-বা বেরিয়েছেন সেনানিবাস হয়ে। এতে হতাশ হয়েছেন সমর্থকেরা। বিমানবন্দরের উল্টো দিকের রাস্তায় দাঁড়ানো সমর্থকদের সারি থেকে রাগে-ক্ষোভে কেউ কেউ পথ চলতি জনতার গাড়িতে ঢিলও ছুড়েছেন। ভারতের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে ম্যাচের পরই যা বলার বলেছেন মাশরাফি। কাল সে ব্যাপারে নতুন কিছু না বলে নিজেদের ওপরও দায় নিলেন কিছুটা, ‘হেরে গেছি এটাই কষ্টদায়ক। আমরা যেভাবে পারফর্ম করতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারিনি।’ তার পরও বিশ্বকাপ থেকে যে অর্জনটুকু নিয়ে ফিরেছেন, তাতেই ভবিষ্যতের জন্য বাড়তি দায়িত্ব অনুভব করছেন অধিনায়ক, ‘এবারও আমরা কিন্তু ২৯ মার্চ পর্যন্ত খেলারই লক্ষ্য নিয়ে গিয়েছিলাম। আগামী বিশ্বকাপেও নিশ্চয়ই শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করব। সে জন্য আমাদের সবাইকেই আরও পেশাদার হতে হবে। বিসিবি এখন ক্রিকেটের জন্য যা করছে, ভালো করছে। আশা করি ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে।’ আগে বিদেশ সফর থেকে দেশে ফেরার পর ক্রিকেটারদের এ জাতীয় বক্তব্যকে মনে হতো শুধুই কথার কথা, বলার জন্য বলা। কিন্তু কাল বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখে যেন সেটাই শোনাল প্রতিজ্ঞার মতো।

No comments:

Post a Comment