Monday, March 23, 2015

গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইয়েমেন:প্রথম অালো

ইয়েমেনের হুতি মিলিশিয়া ও তাদের মিত্ররা গতকাল প্রেসিডেন্ট আবেদরাবো মানসুর আল-হাদির অনুগত বাহিনীকে হটিয়ে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহরটি দখল করে নিয়েছে। সহিংসতা বাড়তে থাকায় দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ সব ধরনের কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক করার অনুরোধ জানিয়েছেন ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিবির। ইয়েমেন
এখন কার্যত উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত। রাজধানী সানাসহ দেশের উত্তর দিকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইরান-সমর্থিত শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা। আর দেশের দক্ষিণ দিকের নিয়ন্ত্রণ প্রেসিডেন্ট হাদির অনুগত বাহিনীর হাতে। দুই পক্ষের এই অবস্থানে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দারিদ্র্যপীড়িত দেশটি। গুরুত্বপূর্ণ শহর হুতিদের দখলে: হুতি মিলিশিয়া ও তাদের মিত্ররা গতকাল দেশের মধ্যাঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর তায়েজ থেকে প্রেসিডেন্ট হাদির অনুগত বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রগুলো এ খবর দিয়েছে। সেখানে একটি বিমানবন্দরও রয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানায়, ৩০০ জনের মতো যোদ্ধা বর্তমানে তায়েজ বিমানবন্দরে মোতায়েন রয়েছে। তাদের মধ্যে উর্দি পরা হুতি মিলিশিয়াদের পাশাপাশি কথিত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে। এ ছাড়া আকাশ ও সড়কপথে সানা থেকে যোদ্ধাদের সেখানে আসা অব্যাহত রয়েছে। ওই বিশেষ বাহিনী আগে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। এ বাহিনী দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১১ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়েন সালেহ। মূলত ওই ঘটনার পর থেকেই ইয়েমেন সংকটের মধ্যে রয়েছে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে হুতি মিলিশিয়াদের হাতে রাজধানী সানার পতন হলে সংকটে নতুন মোড় নেয়। হুতি মিলিশিয়াদের প্রতি সালেহর সমর্থন রয়েছে বলেই মনে করা হয়। সালেহ নিজেও হুতিদের একটি গোত্রের সদস্য। আবার অজ্ঞাত বিমান: এডেনে প্রেসিডেন্ট হাদির বাসভবনের ওপর দিয়ে আবার অজ্ঞাত বিমান উড়ে গেছে। গত চার দিনে তিন দফা এমন ঘটনা ঘটল। এক দফায় বিমান থেকে বোমাও ফেলা হয়, যদিও তাতে কেউ হতাহত হয়নি। বিমানবিধ্বংসী কামান নিক্ষেপ করা হলে গতকালের বিমানটি দ্রুত পালিয়ে যায়। এডেনের কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় হুতিদের দায়ী করলেও তারা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। জাতিসংঘের জরুরি বৈঠক আহ্বান: হুতিদের দুটি মসজিদে গত শুক্রবার সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১৪২ ব্যক্তির প্রাণহানির পর গত রোববার প্রেসিডেন্ট হাদি নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানান। পরিষদকে লেখা এক চিঠিতে তিনি হুতি মিলিশিয়া ও তাদের অনুসরীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হুতিরা কেবল ইয়েমেনের শান্তিকেই হুমকিতে ফেলেনি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে তারা।...বৈধ কর্তৃপক্ষকে অবজ্ঞা করার লক্ষ্যে শুরু করা এই আগ্রাসন থামাতে আমি জরুরি ভিত্তিতে সব ধরনের হস্তক্ষেপ করতে আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ ইয়েমেন সংকট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের গতকালই জরুরি বৈঠকে বসার কথা ছিল। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মার্কিন কর্মীদের: ইয়েমেনে মার্কিন বিমানঘাঁটি আল-আনাদ থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই ঘাঁটির আশপাশে আল-কায়েদার জঙ্গিদের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের লড়াইয়ে অন্তত ২৯ জনের প্রাণহানির পর ওই মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র গতকাল জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে তাদের সব কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে এ পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেফ রাথকে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শোচনীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার সব কর্মীকে ইয়েমেন থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে নিয়েছে।’

No comments:

Post a Comment