Wednesday, April 1, 2015

লাঙ্গলবন্দে হতাহতের কারণ দখলবাজি ও অবহেলা:প্রথম অালো

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে তীর্থস্থানের জায়গায় দখলবাজি এবং প্রশাসনিক অবহেলাজনিত কারণে পুণ্যস্নানে পদদলিত হয়ে ১০ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর পূজা কমিটির সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পূজা উদ্যাপন পরিষদ তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সাবেক স
চিব শৈলেন মজুমদারের নেতৃত্বে ১১ সদসে্যর তদন্ত কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করে। গত ২৭ মার্চ অষ্টমীর পুণ্যস্নানে পদদলিত হয়ে ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও কমিটির নিজস্ব অনুসন্ধানে তৈরি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা এবং আহত পুণ্যার্থীদের হাসপাতালে নিতে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা ছিল না। যদিও প্রশাসনের প্রস্তুতিমূলক সভায় চারটি অ্যাম্বুলেন্স রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ছিল না ফায়ার সার্ভিস এবং তিনটি মেডিকেল দলের চিকিৎসক। সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক কাজে ব্যয় বরাদ্দও ছিল বৈষম্যমূলক। দুর্ঘটনার পর গতকাল পর্যন্ত ধর্মমন্ত্রী বা সরকারের কোনো মন্ত্রী লাঙ্গলবন্দ পরিদর্শন করেননি। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনার আগের দিন থেকে পুণ্যস্নানস্থলে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম শুরু হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা জোরালো ছিল না। প্রশাসনিক প্রস্তুতিও ছিল দুর্বল। রাত পেরিয়ে ভোর হওয়ার আগে পুণ্যার্থীদের প্রচণ্ড চাপ বাড়ে। ১৬টি ঘাটের মধ্যে ঐতিহাসিক কারণে রাজঘাটে সবচেয়ে বেশি চাপ হয়। কিন্তু এই ঘাটের প্রায় ২৫ গজ দূরে একটি এবং কিছু দূরে আরও দুটি সংকীর্ণ ও নড়বড়ে সেতু রয়েছে। দুর্ঘটনার দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে যখন লাখ লাখ মানুষ পুণ্যস্নান এবং প্রয়াত পূর্বপুরুষের তর্পণে ব্যস্ত, তখন হঠাৎই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত গুজব ওঠে যে, রাজঘাটের কাছের সেতুটি ভেঙে গেছে। এতে পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ঘটে যায় স্মরণকালের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। চরম অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক অদক্ষতায় দুর্ঘটনাটি ভয়ংকর রূপ নেয় বলে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্নানোৎসব কমিটির স্বেচ্ছাসেবক ছাড়া দুর্ঘটনার পর পুলিশ বা প্রশাসনের কেউই সেখানে ছিল না। কমিটির পর্যবেক্ষণ, সকালে এই দুর্ঘটনার আগে মেলায় সমবেত পুণ্যার্থীদের মধ্যে শিশু মৃত্যু ও লাশ ভেসে ওঠার গুজব ছড়ানো হয়। গুজব ছড়ানোর পুরো ব্যাপারটি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুণ্যার্থীদের মধ্যে একটা ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিতে ওই গুজব, সেতু ভেঙে পড়ার গুজব একটা ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এর সঙ্গে ছিল ছিনতাইকারী ও দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে নানাভাবে ভূমি জবরদখলের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে ওঠা তীর্থস্থানের রাস্তাটি সরু ও সংকুচিত হয়ে গেছে। অবৈধভাবে অনেক দোকানপাট এবং ভবন নির্মিত হয়েছে। দেবোত্তর ভূমি এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে, জাল দলিলপত্র তৈরি করে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন নির্মাণকাজ হচ্ছে। অন্নপূর্ণা ঘাট থেকে প্রেমতলী ঘাট পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই সরু রাস্তাটি সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে স্নানোৎসবের সময়। লাখ লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম এক দুঃসহ পরিবেশের সৃষ্টি করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব। উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য নিম চন্দ্র ভৌমিক, সুব্রত চৌধুরী, স্বপন কুমার সাহা প্রমুখ। আরও পড়ুন নারায়ণগঞ্জে পুণ্যস্নানে পদদলিত হয়ে নিহত ১০ তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

No comments:

Post a Comment