যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কিউবার নেতা রাউল কাস্ত্রোর মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি হলো গতকাল শনিবার। পানামার রাজধানী পানামা সিটিতে গতকাল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনের (এসওএস-সামিট অব দি আমেরিকাস) দ্বিতীয় দিনের আলোচনার এক ফাঁকে দুই নেতা মুখোমুখি বৈঠকে মিলিত হন। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পর চিরবৈরী দুটি দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রথম বৈঠক এটি। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এই বৈঠ
ক দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দুই নেতা গত বছরের ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের বৈরিতা অবসানের পথে যে যাত্রা শুরু করেছেন, তাতে এক বড় পদক্ষেপ এই বৈঠক। এর আগে গত শুক্রবার কিউবার নেতা রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে ঐতিহাসিক করমর্দন হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। বহুল প্রত্যাশিত গতকালের বৈঠকের আগে ওবামা বলেন, লাতিন আমেরিকায় নাক গলানো আর নয়। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের। দুই নেতা বৈঠকের পর বারাক ওবামা প্রথম কথা বলেন। তিনি মুক্তমনা মানসিকতার জন্য রাউল কাস্ত্রোর প্রশংসা করেন। এ সময় রাউল কাস্ত্রো বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার আলোচনায় দরকার আরও বেশি ধৈর্য। রাউল বলেন, ‘আমরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের খুবই ধৈর্য ধরতে হবে।’ ওবামা ও কাস্ত্রো শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধনের আগেই করমর্দন করেছেন, করেছেন কুশল বিনিময়। পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, এতে ছিল নানা ধরনের সূক্ষ্ম সংকেত। এর আগে কেবল একবারই দুই নেতা করমর্দন করেছেন—২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেশটির কিংবদন্তি নেতা প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলার এক স্মরণসভায়। পাঁচ দশকের শীতলতার পর যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার পক্ষ থেকে সম্পর্ক উন্নয়নে গত ১৮ ডিসেম্বর যে আকস্মিক ঘোষণা এসেছিল, ওবামা-রাউল বৈঠক তাকে একধরনের সম্পূর্ণতা দেবে। ওই ঘোষণাটা আকস্মিক হলেও তা ছিল ১৮ মাস ধরে গোপন আলোচনার ফসল। মাদুরো বললেন: গতকালের সম্মেলনে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাকে (ওবামা) সম্মান করি। কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করি না।’ তারপরও উত্তেজনা প্রশমনের স্বার্থে তিনি ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে আগ্রহী বলে জানান। মাদুরোর বক্তব্যের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা উপস্থিত ছিলেন না। ওবামা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য উঠে যান। নাক গলানো আর নয়: সম্মেলনের ফাঁকে ওবামা শুক্রবার একটি আঞ্চলিক সুশীল সমাজ ফোরামে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, অতীতে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার বিষয়গুলোতে অবাধে নাক গলিয়েছে। তবে তা এখন অতীত। ওবামা লাতিন আমেরিকার নেতাদের উদ্দেশে বলেন, একটা সময় ছিল, যখন মনে করা হতো এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেও দায়মুক্তি পেয়ে যাবে। সেসব দিন এখন অতীত হয়ে গেছে। অনিষ্পন্ন ছয় ইস্যু: যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দীর্ঘ পথে কমবেশি ছয়টি বিষয়কে মোকাবিলা করতে হবে কূটনীতিকদের। এগুলো হচ্ছে: অর্থনীতি: সমাজতন্ত্রী কিউবায় এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। তারা চীনা ধাঁচের পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। জাতীয়করণকৃত সম্পদ: যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য, সম্পদ ফেলে পালিয়ে যাওয়া কিউবান-আমেরিকান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কিউবা ৭০০ কোটি ডলার ঋণী। দূতাবাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা: দুই দেশকে এখন পরস্পরের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রদূতসহ অন্য কর্মকর্তা বিনিময় করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ: যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা সন্ত্রাসবাদবিষয়ক দেশের তালিকায় এখনো কিউবার নাম রয়েছে। অবশ্য, তা বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। অবরোধ: কিউবা চায় দ্রুত তার ওপর থেকে মার্কিন অবরোধ প্রত্যাহার হোক। তবে ওয়াশিংটন বলছে, আইনে পরিবর্তন আনতে সময় লাগবে। গুয়ানতানামো বে কারাগার: কিউবার ভেতরে অবস্থিত গুয়ানতানামো বেতে অবস্থিত নৌ ঘাঁটি থেকে মার্কিন সেনাসদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার দাবি হাভানার। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা এ জন্য কিউবাকে ভাড়া দিয়ে আসছে।
No comments:
Post a Comment