Friday, April 24, 2015

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হবে নিবন্ধন পরীক্ষায়:প্রথম অালো

কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাতালিকা করে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) আদলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীনে এই পরীক্ষা ও মেধাক্রম করা হবে। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে করা এই মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ করতে হবে। নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে বেসরকারি এসব শিক্ষাপ্র
তিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতা হারাবে। বর্তমান পদ্ধতিতে নিবন্ধন পরীক্ষা হলেও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটিই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তাই নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে এ সুযোগ বন্ধ হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সারা দেশে প্রায় ১৯ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাড়ে তিন হাজার কলেজ ও সাড়ে নয় হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এসব বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে বড় এই পরিবর্তন আনতে বেসরকারি শিক্ষক পরীক্ষা গ্রহণ, নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমানেও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে এনটিআরসিএর অধীনে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন। নিয়োগের জন্য তাঁদের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধানে আরেকটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই পরীক্ষার পর পরিচালনা কমিটি শিক্ষক নিয়োগ দেয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে এই একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকায় পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে হরহামেশাই অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। সারা দেশেই একই চিত্র দেখা যায়। প্রস্তাবিত নতুন পদ্ধতিতে এনটিআরসিএর নিবন্ধন পরীক্ষাই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। এর মেধাক্রম অনুযায়ীই নিয়োগ হবে। পরিচালনা কমিটি আর কোনো পরীক্ষা নিতে পারবে না। অবশ্য মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ পরিচালনা কমিটিই দেবে। বর্তমানে সাংসদেরা নিজ নির্বাচনী এলাকার সর্বোচ্চ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে পারেন। তবে এলাকার অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিতেও সাংসদদের কর্তৃত্ব থাকে। নতুন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, আগে একেবারেই স্থানীয়ভাবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ করা হতো। পরে তাঁরা শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষা চালু করেন। শিক্ষক নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা আনতে এবং মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ও খসড়া শিক্ষা আইন অনুযায়ী নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আইন ও বিধিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর নাম পরিবর্তন করে ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) করা হতে পারে। যেভাবে পরীক্ষা ও মেধাতালিকা হবে: সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী প্রতিবছর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই জেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পদ ও বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করা হবে। এর ভিত্তিতে পরীক্ষা আহ্বান করা হবে। পরীক্ষা হবে প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি), লিখিত ও মৌখিক—এই তিন দফায়। এনটিআরসিএ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা শূন্য পদের সংখ্যা বিবেচনায় নির্ধারণ করবে। এলাকা, বিষয় ও পদভিত্তিক শিক্ষকের শূন্য পদের ভিত্তিতে ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা হবে। এর ভিত্তিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধাক্রম তালিকা করে তা প্রকাশ করা হবে। কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার উভয় ক্ষেত্রে পৃথকভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে তিনি মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হবেন না। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল পরীক্ষা নেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। তবে অনিবার্য পরিস্থিতিতে এই সময় পাঁচ দিন বাড়ানো যাবে। ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার ফল পরীক্ষা নেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। এখানে আরও ১৫ দিন সময় বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার ফল ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব বলেন, প্রস্তাবিত পদ্ধতি নিয়ে কিছুদিন ধরে কাজ চলছে। গতকালও রাজধানীর ব্যানবেইস ভবনে এ নিয়ে কর্মশালা হয়েছে। এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান আশীষ কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, শূন্য পদের চেয়ে ১০ শতাংশ কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাতালিকা করা হবে। চাহিদার ভিত্তিতে ওই তালিকা থেকে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। পরিচালনা কমিটি শুধু নিয়োগ দেওয়ার কাজটি করবে।

No comments:

Post a Comment