Monday, April 27, 2015

বিপদ আসন্ন, জানতেন বিশেষজ্ঞরা:প্রথম অালো

মাত্র এক সপ্তাহ আগের কথা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫০ জন ভূমিকম্প ও সমাজবিদ এসেছিলেন নেপালের কাঠমান্ডুতে। উদ্দেশ্য—দরিদ্র, জনাকীর্ণ এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের শিকার এই নগরকে কীভাবে আরেকটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে তোলা যায়। বিশেষজ্ঞদের মাথায় ছিল ১৯৩৪ সালের কথা, যখন শক্তিশালী এক ভূমিকম্প সমান করে দিয়েছিল পুরো কাঠমান্ডুকে। তাঁরা জানতেন, আরেকটা বড় বিপদ আসছেই। তা জেনে তাঁর
া ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন। তবে জানতেন না, বিপদটা ঠিক কখন হানা দেবে। খবর এপির। ভূকম্পনবিদ জেমস জ্যাকসন বলেন, ‘এটা অনেকটা একটা দুঃস্বপ্নের মতোই, দুরু দুরু বুকে যা ঘটার অপেক্ষায় ছিল সবাই।’ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সায়েন্স বিভাগের প্রধান জ্যাকসন আরও বলেন, ‘বাস্তবে এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একেবারে তাই-ই ঘটল, যা ঘটবে বলে আমরা ধারণা করেছিলাম।’ তবে ‘এত তাড়াতাড়ি’ যে অতটা শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটে যাবে, তা প্রত্যাশা করেননি বিশেষজ্ঞ জ্যাকসন। ‘যে স্থানে শনিবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে, ঠিক সেই এলাকা দিয়ে আমি হেঁটে এসেছি। মনে হয়েছিল, এই এলাকাটি বিপদের পথে হাঁটছে,’ বলেন, ভূমিকম্পবিষয়ক বৈশ্বিক সংগঠন আর্থকোয়েক উইদাউট ফ্রন্টিয়ার্সের নেতৃস্থানীয় এই বিজ্ঞানী। সংগঠনটি এ ধরনের বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে এশিয়ার সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে থাকে। কাঠমান্ডু আবার বড় ভূমিকম্পের কবলে পড়তে যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। অবশ্য, কেবল ভূত্বকের টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চারণ অর্থাৎ প্রাকৃতিক কারণেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা নয়। স্থানীয় নানা অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই মনে করা হচ্ছিল, পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। একই মাত্রার ভূমিকম্প বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মাত্রায় বিপর্যয় ঘটাতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) ভাষ্য। ভবন নির্মাণের অবস্থা এবং জনসংখ্যার পার্থক্যই এ বিভিন্নতার কারণ। একই মাত্রার ভূমিকম্পে যেখানে উন্নত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতি ১০ লাখে ১০ থেকে ৩০ জন মারা যাবে, সেখানে নেপালে হয়তো প্রাণ হারাবে ১০ হাজার বা তার চেয়েও বেশি। এ হিসাব ইউএসজিএসের ভূপদার্থবিদ ডেভিড ওয়াল্ডের। কাঠমান্ডু যে ঝুঁকির মুখে রয়েছে, সে বিষয়ে বারবার সতর্কবাণী এসেছে। এবারেরটা নিয়ে সেখানে গত ২০৫ বছরে অন্তত পাঁচটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ১৯৩৪ সালের আঘাত ছিল সবচেয়ে ভয়ানক। বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সংগঠন জিওহ্যাজার্ডস ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হ্যারি ঘি বলেন, ‘নেপালিরা জানত যে একটা সমস্যা আছে। তবে এটা এতটাই প্রকট যে কোথা থেকে এবং কীভাবে শুরু করতে হবে, তা তারা জানত না।’ বিশেষজ্ঞ হ্যারি ঘি, জ্যাকসন ও ওয়াল্ড—সবাই মনে করেন, নেপাল ঝুঁকি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ক্রমে উন্নতি করছে, এটা সত্য। তবে তা যতটা দ্রুত দরকার বা যতটা বেশি পরিমাণে দরকার, তা হচ্ছে না। জিওহ্যাজার্ডস ইন্টারন্যাশনাল সর্বশেষ ১২ এপ্রিল কাঠমান্ডু উপত্যকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকির ওপরে তাদের নব্বইয়ের দশকে তৈরি করা প্রতিবেদনটি হালনাগাদ করেছে। এতে বলা হয়েছে, কাঠমান্ডুতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার সাড়ে ৬ শতাংশ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি। এই উপত্যকায় ১৫ লাখ মানুষের বাস। স্পষ্টতই কাঠমান্ডু একটি ‘মারাত্মক ও ক্রমবর্ধমান’ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এটা স্পষ্ট যে এই উপত্যকা এরপর যে বড় ধরনের ভূমিকম্পটি প্রত্যক্ষ করবে, তাতে যে প্রাণহানি, অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ও অর্থনৈতিক সমস্যা ঘটবে, তা অতীতের সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে যাবে।’

No comments:

Post a Comment