ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্যপদ পেয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরায়েলের কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ার সুযোগসহ সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে এ ঘটনার। খবর এএফপি ও আল-জাজিরার। সদস্যপদের জন্য রোম সনদে স্বাক্ষর করার ঠিক ৯০ দিন পর গতকাল নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে রুদ্ধদ্বার এক অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিন আইসিসির সঙ্গে যুক্ত হলো। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলে
র সঙ্গে আলোচনায় বড় অগ্রগতি না হওয়া এবং শিগগিরই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো আশা না দেখে ফিলিস্তিন আইসিসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে। ইসরায়েল বিশেষ করে আইসিসির সদস্য হওয়ার এ চেষ্টার ঘোর বিরোধী। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালিক ওই অনুষ্ঠানে রোম সনদের প্রতীকী একটি কপি গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের জুন থেকে ফিলিস্তিন অঞ্চলে সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্তে কৌঁসুলিদের বৈধতা দিয়ে এরই মধ্যে আইসিসিতে নথিপত্র পাঠিয়েছে ফিলিস্তিন। ২০১৪ সালের জুনের ওই উত্তেজনার জেরে গত বছরের গ্রীষ্মে ইসরায়েল এবং গাজার শাসক কট্টরপন্থী সংগঠন হামাসের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। ওই সংঘাতে ২ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যার বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইসিসি কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত করেনি। গাজাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত হলে তাতে ইসরায়েলের বেসামরিক অঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার ঘটনার তদন্তও অন্তর্ভুক্ত হবে। গুরুতর অপরাধের বিচারের জন্য বিশ্বের একমাত্র স্থায়ী আদালত আইসিসি। এর সনদে ইসরায়েল স্বাক্ষর করেনি। তবে এ আদালত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচার করতে পারবে। অবশ্য ইসরায়েলের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে আইসিসি। এ আদালতের নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইসিসি তার সদস্যরাষ্ট্রের সহযোগিতার ওপরই নির্ভর করে থাকে। ফিলিস্তিন কীভাবে সুবিধা পেতে পারে: আইসিসির কার্যালয়ের কৌঁসুলি সদস্যরাষ্ট্রের বাইরে যদি কোনো অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে চান, অবশ্যই বিচারিক অনুমোদন প্রয়োজন। আইসিসির সদস্য হওয়ায় এখন কৌঁসুলির কাছে অভিযোগের বর্ণনা দিতে পারবে ফিলিস্তিন। সে ক্ষেত্রে কৌঁসুলি বিচারিক অনুমোদন ছাড়াই আনুষ্ঠানিক তদন্তের পদক্ষেপ নিতে পারবেন। শুধু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং সদস্যরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তদন্ত শুরু করার জন্য বিচারিক অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। ফিলিস্তিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের কোনো তদন্ত যদি শুরু হয় এবং তদন্তে ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনের কোনো ব্যক্তি গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আইসিসি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং তা কার্যকর করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে অনুরোধ করতে পারে। তবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা সহজ হবে না। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে দুই দফায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সত্ত্বেও সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি আইসিসি। বসতি স্থাপন অপরাধ: রোম সনদের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অঞ্চলে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড আইসিসির তদন্তের আওতায় আসতে পারে। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো অঞ্চল দখল করে বসতি স্থাপনের বিষয়টি যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য অপরাধ। আদেশের ওপর নির্ভর করতে পারে।
No comments:
Post a Comment