৩ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল। গুনে গুনে ৯২টি দিন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের নিজের ঘর ছেড়ে থেকেছেন কর্মস্থলে। ৬ জানুয়ারি থেকে ডেকেছেন সরকারবিরোধী আন্দোলন। ৯০টি দিন টানা অবরোধ; সপ্তাহে পাঁচ দিন করে হরতালসহ চলেছে নানা কর্মসূচি। দাবি ছিল, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচন ও আরো কিছু। এসব দাবি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে সহিংসতা আর নাশকতায় প্রাণহানি ঘটেছে ব্যাপক, সম্পদহানি হয়েছে নজিরবিহীন, ক্ষ
য়ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। কিন্তু দাবি আদায় হয়নি একটিও। অবশেষে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেতা খালেদা জিয়া গতকাল রবিবার শুধু জামিন আদায় করে ঘরে ফিরে গেছেন। মাঝের তিনটি মাস দেশবাসীর যাপিত জীবনে আঁচড় কেটেছে দুঃসহ কষ্ট, সীমাহীন শোক আর অসহনীয় ভোগান্তির দিনলিপি। আর সরকারবিরোধী নেত্রীর এই একরকম শূন্য হাতে ঘরে ফেরার ঘটনায় এখন আত্মসমালোচনার ঝড় বইছে বিএনপিতে। বলা হচ্ছে, এবারও বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো, কর্মকৌশলে ভুল ছিল কি না, কী প্রাপ্তি ঘটল আন্দোলনে, আর এসব ব্যর্থতার জন্য কারাই বা দায়ী- এসব নিয়ে দলে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, তিন মাসের আন্দোলনে প্রায় দেড় শ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা তাহলে কী কারণে? আন্দোলন সফল করতে না পেরে গোপন সমঝোতা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে- এমন সন্দেহ করছেন অনেকে। দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীর গুম ও প্রাণহানির ঘটনার এখন জবাব কী- এসব কথা এখন ঘুরেফিরে বারবার উঠছে। বলা হচ্ছে, আন্দোলন করতে গিয়ে দলের হাজার হাজার লোক এলাকাছাড়া। রোষানলে পড়ে বিএনপি সমর্থক অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস বা ক্ষয়ক্ষতির দায়ই বা কার! সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মারার সংস্কৃতি কারা আমদানি করেছে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের পরস্পরবিরোধী নেতাদের এক গ্রুপ এ জন্য অন্য গ্রুপকে দায়ী করছে। কেউ বলছে, মহানগরীর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস এ জন্য দায়ী। কারণ এবার আন্দোলন শুরুর আগে কর্মকৌশল আব্বাস ও তাঁর সমর্থকরাই তৈরি করেছেন। আন্দোলন শুরুর আগে খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার ঢাকা পারবে। এর আগে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য সাদেক হোসেন খোকাকে দায়ী করা হতো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একজন অন্যজনকে আড়ালে 'বেইমান' বলতেও ছাড়ছেন না। কারো কারো মতে, বিএনপির 'ফরেন পলিসি ফেল' করেছে। সব মিলিয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা মুষড়ে পড়েছে। আর এ ঘটনায় সামাজিক গণমাধ্যমে চলছে টক-ঝাল আলোচনার ঝড়। এদিকে কেউ কেউ অভিযোগের আঙুল তুলছেন বিএনপিপন্থী সুধীসমাজের দিকে। কারণ তাদের পরামর্শেই বিএনপি শেষ পর্যন্ত সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে না গেলে বিএনপির কী করার ছিল তা নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে কোনো দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ ছিল না। ফলে শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে গোপন 'ডিল' বা সমঝোতা করে আপাতত 'এক্সিট' নেওয়া হয়েছে এমনটিই মনে করছেন দলটির বেশির ভাগ নেতা। তাঁদের মতে, তিন মাস গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করে শেষ পর্যন্ত নেত্রীর বাসায় ফিরে যাওয়ার ফলে প্রথমত, বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ এটা প্রমাণিত হলো। দ্বিতীয়ত, আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন নমনীয় হতে বাধ্য হয়েছেন। তৃতীয়ত, আওয়ামী লীগের অধীনে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অর্থ বর্তমান সরকারকে স্বীকার করে নেওয়া বা তাদের বৈধতা স্বীকার করা। চতুর্থত, এর পরে ২০১৯ সালের আগে বিএনপি আর কার্যকর আন্দোলন কিংবা নির্বাচনের দাবি তুলে তা সমর্থনযোগ্য করে তুলতে পারবে বলে কেউ মনে করে না। সবচেয়ে বড় কথা, সমর্থকনির্ভর বড় দল হলেও রাজপথে বিএনপি শক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে; যা ভবিষ্যৎ সরকারবিরোধী আন্দোলনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ দু-দুবার আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মনোবল অনেকটাই ভেঙে গেছে। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবারও সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি নামতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আলোচনা হচ্ছে আরেকটি কথা- বিএনপির আন্দোলনের দ্বিতীয় দফার এই ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে সরকারে স্বস্তি ফিরে এসেছে; যা বিএনপির অনেকেও সরকারের 'বিজয়' বলে মানতে বাধ্য হয়েছে। তাদের মতে, দমন-পীড়ন বা কৌশল যে করেই হোক, শেষ পর্যন্ত সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। আর এজন্য খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে নির্বিঘ্নে বাসায় পৌঁছে দেওয়া খুব বড় ছাড় নয়। বরং বিএনপির নেতৃত্বই ব্যর্থ এটা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বর্তমান এই পরিস্থিতিকে এ সরকারের আমলে বিএনপির জন্য দ্বিতীয়বারের মতো বড় বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর ব্যর্থ আন্দোলনকে তাঁরা প্রথম বিপর্যয় বলে বিবেচনা করেন। তবে আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপির অধিকাংশ নেতা তাঁদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান স্বীকার করেন, 'কৌশলগত ভুল হয়তো কিছু ছিল। কিন্তু বিএনপি পরাজিত হয়েছে একথা আমি মেনে নিতে রাজি নই।' তাঁর মতে, প্রথমত বিএনপি নেত্রী জামিন পেলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বাসার কাজ বাসায় এবং অফিসের কাজ অফিসে করার সুযোগ পেলেন। দেশে স্বস্তি এলো। স্বস্তি বিএনপি, নাকি সরকার পেয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সেনাপ্রধান হেসে বলেন, সবাই পেয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলনে 'অর্জন অনেক' এমন দাবি করে তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাসবাসীকে আন্দোলনের ব্যাপারে জানান দিতে পেরেছি। তবে এটা ঠিক যে, কী কারণে আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতি পায়নি তা পর্যালোচনা হওয়া দরকার।' মাহবুব ছাড়া দলের একাধিক নেতার সঙ্গে এ প্রতিনিধির কথা হলে তাঁরা বলেন, মন্তব্য করে আর কী লাভ! দলের কৌশল ভুল ছিল। এ ছাড়া সরকার এমন দমন-পীড়নের পথ বেছে নেবে তাও তাঁরা বুঝতে পারেননি। বিএনপিপন্থী সুধীসমাজের প্রতিনিধি 'শত নাগরিক' সভাপতি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। এটি কৌশলগত 'এক্সিট'। তাঁর মতে, সিটি নির্বাচনে অন্তত দুটিতে জয়লাভ করলেও পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে আত্মসমর্পণ করা কখনোই ভুল বা পরাজয় হতে পারে না। সারা বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতা আদালতে গিয়ে তাঁদের আরজির কথা জানান। তবে গুলশান কার্যালয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করা বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে স্বীকার করেন প্রবীণ এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। শত নাগরিক কমিটির আরেকজন সদস্য বলেন, আন্দোলন করতে গেলে ব্যাপক জনগণকে আকর্ষণ করতে হয়। বলতে হয় একটি দল ক্ষমতায় গেলে কী কী কাজ করবে। বিএনপি এসব স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। মানুষকে তারা স্বপ্ন দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। তা ছাড়া পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই হুট করে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। বিএনপিপন্থী ওই বুদ্ধিজীবী বলেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। দেশের মানুষ সব কিছু থেকে নির্মোহ হয়ে গেছে। তা ছাড়া আগের তুলনায় মানুষ অনেকটাই সচেতন। নিজেকে নিয়ে তারা ব্যস্ত। তাই আন্দোলনে নেমে বিপদগ্রস্ত হতে রাজি নয় তারা। সরকার-বিএনপি গোপন সমঝোতা? : দুই দিন ধরে চলা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক দৃশ্যপট দেখে সরকার ও বিএনপির মধ্যে গোপন সমঝোতা হয়েছে বলে দেশের সর্বত্র গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ত্যাগ, আদালতে হাজির হওয়া, জামিন লাভ করা; সর্বোপরি নির্বিঘ্নে তাঁর বাসায় ফিরে যাওয়ার শান্তিপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ দেখে সমঝোতার এই বিশ্বাস জনমনে আরো প্রবল হয়েছে। তা ছাড়া বিএনপির গুলশান কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে- এমন আশঙ্কাও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উপরন্তু শনিবার সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। ওই কার্যালয়ে গতকাল থেকে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করেও 'সমঝোতার ধারণা' পাওয়া গেছে। মন্ত্রী পর্যায়ের সরকারি দলের প্রভাবশালী একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেছেন, 'এক ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছা গেছে। এখন দেখা যাক কী হয়।' বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, "সমগ্র দৃশ্যপট দেখলে মনে হয় 'কিছু একটা' হয়েছে। সবাই বিশ্বাস করে যে আড়ালে এক ধরনের সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।" এদিকে বিএনপিপন্থী সুধীসমাজের নেতা অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন, সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও বিএনপিপন্থী নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এটাকে ঠিক 'ডিল' বলা যাবে না; আলাপ-আলোচনা বলা যেতে পারে। তাঁর মতে, স্বাধীন এই বাংলাদেশে আমরা যাতে নিজেদের ঘর সামলাতে পারি সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিএনপিকে সিটি নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।" তিনি বলেন, সরকারপক্ষে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই আমার ছাত্র; যাঁরা রাজনৈতিক নেতা। কেউ কেউ সুধীসমাজের প্রতিনিধিও আছেন। সবাই মিলে সংকট থেকে উত্তরণের একটি পথ বের করা হয়েছে। সেটি হলো সিটি নির্বাচন। ৯২ দিন পর ঘরে ফেরা : গাড়ি থেকে নেমেই সমবেত মিডিয়াকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়লেন। শরীরটা আগের মতো নেই। তাই শিরিনের হাত ধরে হাসি মুখেই এগোলেন বসার ঘরের দিকে। পা দুটো ফেললেন নরম কার্পেটে। বসলেন নিজের চেয়ারটায়। একপলক এদিক-ওদিক তাকালেন। এরপর চোখ মুদলেন। কিছুক্ষণ। এরপর ডান হাতের মধ্যমা দিয়ে চিবুক ঘষলেন। চোখ খুলে দেখলেন, সামনে দাঁড়িয়ে বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে থাকা রুহুল-ইউনুসরা আর নিরাপত্তারক্ষীরা। হাসলেন। মজা করে বললেন, 'আমাকে কষ্টে রেখে তোমরা আরামেই ছিলে।' জবাব নেই কারো মুখে, শুধু কষ্টের হাসি। তাঁরা কতটা ভালো ছিলেন তা বাড়ির কর্ত্রীও জানেন। ৯২ দিন পর। দুপুর তখন ১২টা ১৮ মিনিট। নিজ বাসা 'ফিরোজা'য় ফিরেছেন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া। চারদিকে খুশির উৎসব। চিবুকে হাত বুলাতে বুলাতে আবার হাসিমুখে তাকান আশপাশে জড়ো হওয়া মানুষগুলোর দিকে। একে একে ঘরে আসতে শুরু করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। জুড়ে দেন গল্প। উঠি উঠি করে ঘণ্টা দেড়েক সেখানেই কাটিয়ে দেন তাঁরা। এরই মধ্যে যোগ দেন সেজো বোন। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ফলের রস খান। গুলশান কার্যালয়ে টানা ৯২ দিন অবস্থানের অনেক স্মৃতি ও অনেক ঘটনা উঠে আসে আলোচনায়। সকালে বাজার করে দুপুরের খাবার বাসায় রান্না করা হয়েছে। রুহুল সকাল থেকেই ব্যস্ত। খালেদা জিয়ার পছন্দের ভাতের চাল, শাক ভাজি, মাছের তরকারি বাজার থেকে কিনে এনেছেন। রান্না হয়েছে। খালেদা জিয়া দুপুরে খাবার খান না। যদি হঠাৎ খেতে চান তাই এ ব্যবস্থা। তবে বরাবরের মতো গতকালও খাননি। বাসায় অবস্থান নেওয়া সেলিমা রহমান, শিরিন সুলতানা, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে বলেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। পাশের টেবিলে রাখা ঘড়ি দেখলেন খালেদা জিয়া। ২টা ৫০-এর কাছাকাছি। উঠে দাঁড়িয়ে নজর বুলালেন ঘরের চারপাশে। সেজো বোন সেলিনা ইসলামসহ দুজন আত্মীয়কে নিয়ে রওনা দেন দোতলায়। পাশের রুমে তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা সেরে চলে যান নিজের শয়নকক্ষে। বিশ্রাম নেবেন। অথচ গতকালের সকালটা এতটা সহজ ছিল না। শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। পরে দেখা করতে আসেন দুই আইনজীবী। সকালে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা। সকাল থেকেই কার্যালয় ত্যাগ ও আদালতে গমনকে কেন্দ্র করে গুলশান ও সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। আদালতে যাওয়ার জন্য বিশেষ প্রটোকলের গাড়িও তৈরি। ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে প্রস্তুত করেন খালেদা জিয়া। বের হওয়ার আগে সেরে নেন হালকা নাশতা। ঘড়ির কাঁটায় ৯টা ৫৫ মিনিট। অফ হোয়াইটের গোলাপি কারুকাজ করা ছাপা শাড়ি পরা বেগম জিয়া কার্যালয়ের দোতলা থেকে নেমে আসেন। গাড়ি তৈরি। গন্তব্য রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন তিনি। খালেদার সঙ্গে এ সময় গাড়ির পেছনের সিটে ছিলেন দলের নেত্রী সেলিমা রহমান ও শিরিন সুলতানা। আর সামনে শিমুল বিশ্বাস। বাড়ির কর্ত্রী বাড়িতে ফিরবেন, তাই তাঁকে বরণ করে নিতেও প্রস্তুতির কমতি ছিল না। সকাল সাড়ে ১০টায় বাসায় আসেন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। হাতে ফুলের তোড়া। গত শুক্র ও শনিবার পুরো বাড়ি ঝাড়পোঁছ করে পরিষ্কার করা হয়েছিল। এর পরও আরেক দফা পরিষ্কার করান তিনি। বাড়ির লনে নতুন করে লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ। বাড়ির ছাদে খালেদা জিয়া মৌসুমি সবজির চাষ করেন। অযত্নে নষ্ট হয়ে যাওয়া গাছগুলো পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment