নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোনোক্রমেই মূল ঋণ বা আসল মওকুফ করতে পারবে না। তবে শর্তসাপেক্ষে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত মন্দ বা ক্ষতিজনক হিসেবে চিহ্নিত ঋণ অবলোপন (রাইট অফ বা প্রতিষ্ঠানের মূল হিসাব থেকে বাদ দেয়া) করতে পারবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজ পরিচালকদের মন্দ ঋণ অবলোপন করতে পারবে না। পরিচালকদের ঋণ অবলোপন করতে হলে আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হব
ে। এ বিষয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার পর তা মন্দ বা ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর যদি ওই ঋণ আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকে তবে ওই ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখে অবলোপন করতে হবে। অবলোপনের আগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া কোনো ঋণ অবলোপন করা যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ঋণ অবলোপন করতে হলে ওই গ্রাহকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে হবে। আদালতে মামলা দায়ের ছাড়া সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার ঋণ অবলোপন করা যাবে। অবলোপন করা ঋণ আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া অবলোপন করা ঋণ-সম্পর্কিত মামলা নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করতে বা অবলোপ করা ঋণ আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৃতীয় কোনো পক্ষকে নিয়োগ দিতে পারবে। এতে বলা হয়, ঋণ অবলোপনের পর সংশিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে খেলাপি হিসেবে উল্লেখপূর্বক তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) রির্পোট করতে হবে। এ ছাড়া প্রতি ত্রৈমাসিকে ঋণ অবলোপনের প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে সার্কুলারে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের ঋণ অবলোপন করা হলেও তিনি ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ঋণ অবলোপন করা হলেও সেগুলো আলাদা একটি হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এ তথ্য প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক স্থিতিপত্রে উল্লেখ করতে হবে। ঋণ অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ করার মানে হল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মূল ব্যালান্স শিট থেকে ওই ঋণকে অন্য আরেকটি লেজারে বা হিসাবে সরিয়ে নেয়া। খেলাপি ঋণ শ্রেণীকরণে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। এগুলো হল- নিম্নমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ ঋণ। কোনো খেলাপি ঋণ দুই বছরের মধ্যে পরিশোধ না হলে তা মন্দ হিসেবে চিহ্নিত হবে। অর্থাৎ কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার দুই বছর পর তা অবলোপন করা যাবে। ঋণ অবলোপন করা হলে প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম কমে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা ভালো দেখানো সম্ভব হয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ অবলোপন করছে। অবলোপনের আগে প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফা থেকে প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন রাখতে হলে তারা শেয়ারহোল্ডারদের ভালো মুনাফা দিতে পারে না। একই সঙ্গে কমাতে পারে না তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বা কস্ট অব ফান্ড। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বাড়লে শেয়ারহোল্ডার ও উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এদিকে ব্যাংকের ঋণ অবলোপনের নীতিমালায় মূল ঋণ মওকুফ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, যেটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেয়া হয়নি। এ কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানত নিতে পারে। তাদের তহবিলের বড় অংশই আসে ঋণ থেকে। ফলে ঋণের অর্থ মওকুফ করা হলে প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল সংকটে পড়বে।
No comments:
Post a Comment