নির্বাচনের দিনে সেনাবাহিনীর ব্যারাকে অবস্থান কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলে মেনে নেয়া যায় না। সেনাবাহিনী রাখা না রাখার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এমন দোদুল্যমান সিদ্ধান্ত না দিলেই পারত। সিটি কর্পোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে মন্তব্যের সুযোগ থাকবে- এ ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হলে তাতে সাধারণের মধ্যে সংশয় বাড়ায় এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এমন সংশয়পূর্ণ পরিবেশ ও উদ্বেগের মধ্যে অনুষ্ঠিত
ব্য নির্বাচন সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। যা ভোটারের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা স্বাভাবিকভাবেই ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে দিতে পারে। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়াকির্ং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) কর্মকর্তারা এ মন্তব্য করেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৫ প্রচারকাল (৭-২৩ এপ্রিল) পর্যবেক্ষণের ওপর বিবৃতি প্রকাশ উপলক্ষে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে ইডব্লিউজির বিবৃতি পড়ে শোনান সংস্থার পরিচালক ড. মো. আবদুল আলীম। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এএইচএম নোমান ও ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রধান নির্বাহী তালেয়া রেহমান প্রমুখ। সম্মেলনে দাবি করা হয়, তিন সিটিতেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালার লংঘনের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে ইডিব্লউজি। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণে। সেখানে মেয়র প্রার্থীরা ১৭ ধরনের এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারে ১৯ ধরনের রাজনৈতিক বিষয়ের ব্যবহার ঘটিয়েছেন, যা আচরণ বিধি লংঘনের আওতায় পড়ে। এ সংখ্যা ঢাকা উত্তরে ৮টি। চট্টগ্রামে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের চারটি করে ৮টি। আচরণ বিধি লংঘনের ঘটনা প্রতীয়মান হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নজির তেমন দেখাতে পারেনি। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ইডব্লিউজি ঢাকা উত্তরে ১৮, দক্ষিণে ২৮ এবং চট্টগ্রামে ২১ জনসহ মোট ৬৭ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে এবং ২টি করে ওয়ার্ডের বিশদ চেকলিস্ট থেকে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষের প্রচারকারীদের কাছ থেকে সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যও তারা ব্যবহার করেছেন। আচরণ বিধি লংঘনের এসব অভিযোগ আনা হলেও ইলেকশন ওয়াকির্ং গ্রুপ নিজেই দাবি করেছে এর বেশিরভাগই ছোট ছোট। তবে এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কোন দলের কোন প্রার্থী কোন প্রতীক নিয়ে বা রাজনৈতিক ব্যবহার অথবা লোক সমাগম ঘটিয়ে আচরণ বিধি লংঘন করেছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করতে পারেনি সংস্থাটি। এক প্রশ্নের জবাবে এএইচএম নোমান ও তালেয়া রেহমান বলেন, আমাদের সংগঠনে অনেক (২৮) প্রতিষ্ঠান। একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অনেকের ভিন্ন মতামত থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে তারা কেউ এ বিবৃতি প্রকাশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। প্রচারসামগ্রী ব্যবহারে বিধি লংঘন : ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষণে দাবি করা হয়েছে, তিন সিটিতেই নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় আকারের বিপুল পরিমাণ পোস্টার দেখতে পেয়েছেন। এছাড়া দেয়ালে, যানবাহনে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, ছাদের উপরিভাগে এবং সড়কবিভাজনকারী দেযালে পোস্টার সাঁটানো নিষিদ্ধ সত্ত্বেও ওইসব স্থানে ব্যাপক সংখ্যায় মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার এবং স্টিকার দেখা গেছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণে কমপক্ষে ৪০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর এ ধরনের পোস্টার ওইসব স্থানে দেখা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে এ সংখ্যা ৩০ ও ১২। মাইক্রোফোন এবং লাউডস্পিকার ব্যবহার : আচরণ বিধি অনুযায়ী মাইক্রোফোন এবং লাউডস্পিকার ব্যবহারের নির্ধারিত সময় হল দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষণে এ ধরনের ২৫টি ঘটনা চোখে পড়েছে যেখানে প্রার্থীরা তাদের পক্ষের প্রচার নির্ধারিত সময়ের বাইরে মাইক্রোফোন এবং লাউডস্পিকার ব্যবহার করেছেন। জনসভা আয়োজন : তারা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কমপক্ষে ৮৪টি জনসভা আয়োজন করতে দেখেছেন যেসব জনসভার ৪২ শতাংশ হিসাবে ৩৬টি ঢাকা দক্ষিণে আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচনী ক্ষেত্র কি সবার জন্য সমতল? : অনেক প্রার্থী ইডব্লিউজির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা গ্রেফতার হতে পারেন বা রাজনৈতিক মামলার কারণে পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে পারেন। অনেক প্রার্থীই প্রচার চালাতে পারেনি। অন্যান্য প্রার্থীর তুলনায় বিশেষ কোনো রাজনৈতিক সমর্থিত দলের প্রার্থীদের প্রচারসামগ্রী কম দেখেছেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত গাড়িসহ সমর্থকদের আরও কিছু গাড়ির ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং ভাংচুর করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা : প্রার্থী বা তাদের পক্ষে অন্য কারও দ্বারা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লংঘনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন ঢাকা উত্তরে মোট ৯টি ও দক্ষিণে ১৪টি এবং চট্টগামে ১০টি মোবাইল কোর্ট নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এসব কোর্ট কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা সামান্য অর্থদণ্ড বা সতর্ক নোটিশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আচরণ বিধি লংঘনের কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাও অনুরূপভাবে কারণ দর্শানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যদিও নির্বাচন কমিশন আচরণ বিধি লংঘনের কারণে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে। ভোটের নিরাপত্তা : নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে নিরাপদে উপস্থিত হতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ইডব্লিউজি। নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনী ব্যারাকে অবস্থান করলে সহিংসতা বাড়তে পারে। যা কমিয়ে দেবে ভোটার উপস্থিতি।
No comments:
Post a Comment