Tuesday, April 14, 2015

প্রার্থী নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের টানাপোড়েন:প্রথম অালো

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কের টানাপোড়েন ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে কোনো আলোচনা বা সমন্বয় না করায় এ টানাপোড়েনের সৃষ্টি। এ অবস্থায় ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ ঢাকার দুই সিটির সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট-সমর্থিত ১১৪ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করলেও জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক জামায়াতে ইসলামীও ২৬ জন প্
রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে মেয়র প্রার্থী নিয়েও জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো পর্যায়ে আলোচনা বা বোঝাপড়া হয়নি বলে দল দুটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। সেখানে ৫৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলে ১০টি ওয়ার্ড জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এর একটিতে বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। পাল্টা হিসেবে জামায়াতও তিনটি ওয়ার্ডে বিএনপির পাশাপাশি তিন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থী বিশিষ্ট নাগরিক ও ব্যক্তিদের সংগঠন ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ গত শুক্রবার ২০-দলীয় জোট-সমর্থিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। তাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ৯৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৮৫ জন এবং দুই সিটির ৩১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২৯ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, জামায়াত যে ২৬টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে, তার ২৩টিতেই বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আছেন। অবশ্য, প্রকাশিত তালিকার বাইরে ওই তিনটি ওয়ার্ডেও বিএনপিদলীয় প্রার্থী রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন ২০-দলীয় জোটের বরাত দিয়ে যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, সে সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। এটি কোত্থেকে কীভাবে এল, তা আমাদের জানা নেই।’ নুরুল ইসলাম ঢাকা সিটিতে জামায়াতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক। তাঁর দাবি, জোটের কাউন্সিলর প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের কোনো যোগাযোগ বা আলোচনা হয়নি। জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের যোগাযোগ নেই। সিটি নির্বাচনের কৌশল ও প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে জামায়াত একাধিকবার বৈঠকের আগ্রহ দেখালেও বিএনপি বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় জামায়াত তাদের কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলেনি। অবশ্য এ বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্ব পালন করেন, এমন একজন বিএনপি নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় মেয়র প্রার্থী ঠিক করা এবং উত্তরে দলের দুই প্রার্থীর আদালতে ছুটোছুটি নিয়ে নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ কারণে জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নয়জন ও দক্ষিণে ১০ জন জামায়াত-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। তাঁরা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রাফুল আলম, লস্কর মো. তাসলিম (ওয়ার্ড ৪), এনায়েত হোসেন (ওয়ার্ড ১৩), তারেক রেজা তুহিন (ওয়ার্ড ১৪), মোস্তাফিজুর রহমান (ওয়ার্ড ২২), মো. ইকবাল (ওয়ার্ড ২৯), মনজুরুল আলম (ওয়ার্ড ৩৫), সালেহ সিদ্দিকী (ওয়ার্ড ৩৬), শরীফ মিজানুর রহমান (ওয়ার্ড ২৬)। ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে কবির আহমেদ, ৩ নম্বরে শহীদুল ইসলাম, ৫ নম্বরে উমর ফারুক মজুমদার, ৬ নম্বরে গোলাম শাফি মহিউদ্দিন, ১১ নম্বরে মোশাররফ হোসেন, ১৩ নম্বরে আঞ্জুমান আরা রব, ৩৯ নম্বরে আতাহার আলী, ৪৬ নম্বরে আবদুল মান্নান, ৫২ নম্বরে শফিকুল ইসলাম ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে আহমাদ হাসান। এ ছাড়া ঢাকা উত্তরে চারজন ও দক্ষিণে তিনজন নারীকে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থন দিয়েছে। তাঁরা হলেন উত্তরে উম্মে সালমা (৪, ১৫, ১৬ ওয়ার্ড), মাসুদা আক্তার (১২, ১৩, ১৪ ওয়ার্ড), আমেনা বেগম (২২, ২৩, ৩৬ ওয়ার্ড), কাওসার জাহান (২৯, ৩০, ৩২ ওয়ার্ড); দক্ষিণে শামিমা আকতার (২, ৩, ৪ ওয়ার্ড), দিলারা বেগম (১৩, ১৯, ২০ ওয়ার্ড) ও হাসনা হেনা (৫২, ৫৩, ৫৪ ওয়ার্ড)। ঢাকা উত্তরের রমনা ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে জামায়াত-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন সালেহ সিদ্দিকী। এই ওয়ার্ডের ২০-দলীয় জোটের বরাতে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ প্রার্থী দিয়েছে সাজেদা আলী হেলেনকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাজেদা আলী হেলেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সালেহ সিদ্দিকীর প্রার্থিতাকে সমস্যা মনে করি না। কারণ, তিনি যে জামায়াতের প্রার্থী তা স্বীকার করেন না। আমরা তাঁকে চিনিও না। জামায়াতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক থাকতে পারে, তিনি জামায়াতের কোনো পরিচিত নেতা নন।’

No comments:

Post a Comment