Friday, April 24, 2015

প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি হাতে কাউন্সিলর প্রার্থীরা:কালের কন্ঠ

আর কয়েকটি দিন বাকি। শেষ বেলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে হাজির হচ্ছেন ভোটারদের সামনে, তাঁদের মন জয় করতে; এখন এ কাজেই ব্যস্ত তাঁরা। ঘরে ঘরে গিয়ে নিজের মুখে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় রিকশা-ভ্যান-গাড়িতে প্রচারযন্ত্রে তাদের পক্ষে প্রচার চলছে; তাঁদের প্রতিশ্রুতির কথা জানানো হচ্ছে ভোটারদের। সকাল থেকে রাত পর্যন্
ত ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পরিবর্তনের সুর তুলছেন অনেকে। প্রার্থী নিজেই শুধু নন, মাঠে সক্রিয় তাঁর কর্মী-সমর্থকরাও প্রতিশ্রুতির ঝুলি খুলে ধরছে। গতকাল সকাল থেকে রোদ মাথায় নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় কর্দমাক্ত রাস্তায় হেঁটে ভোট চেয়েছেন প্রার্থীরা; বলেছেন ভাঙা রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে তিনি নির্বাচিত হলে। গতকাল সরেজমিন পর্যবেক্ষণের সময় ১, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে কেটলি প্রতীকের পোস্টার চোখে পড়ে শাহজাদপুর, নতুন বাজার, বারিধারা, উত্তরা, খিলক্ষেত, নর্দা, জোয়ার সাহারাসহ বিভিন্ন স্থানে। এ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন শাহনাজ পারভীন মিতু। পোস্টারের পাশাপাশি তাঁর প্রচারপত্রেও দেখা গেল, তিনি ভোটারদের কাছে ১১টি সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মিতুর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্ডা থানার কুতুবপুরে। বিবাহ-সূত্রে তিনি রাজধানীর খিলক্ষেতের স্থায়ী বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এই প্রার্থী ১১টি সমস্যার সমাধান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন ঘরে ঘরে। গতকাল সকাল ৬টায় বের হয়ে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টর ও আশপাশে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটে তাঁর। কড়া রোদ মাথায় নিয়েই প্রচারণা চালান তিনি। শাহনাজ পারভীন মিতুর সমর্থকরা জানায়, শাহজাদপুর, কালাচাঁদপুর, কুড়িল, অলিপাড়া লিচুবাগান, জোয়ার-সাহারা, উত্তরা, নর্দাসহ আশপাশে গণসংযোগ প্রায় শেষ করেছেন মিতু। এই ওয়ার্ডে আরো লড়ছেন মোড়া প্রতীক নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সালেহা আক্তার ও গ্লাস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনাজ মান্নান কহিনুর। পিঞ্জর প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন হাসনাহেনা, তবে সালেহার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের? জবাবে সালেহা আক্তার বলেন, 'রাস্তাঘাট পানিতে ভরে থাকে। প্রচারণায় বের হয়ে যে অবস্থা দেখেছি তাতে বিস্মিত হয়েছি। সবার আগে রাস্তাঘাট ঠিকঠাক করতে হবে।' তিনি সকাল ৯টায় প্রচারণায় বের হয়েছেন; দুপুরে খিলক্ষেতে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। শাহনাজ মান্নান কহিনুর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তিনি মাদক ও জলাবদ্ধতার সমাধান করবেন। কালের কণ্ঠকে কহিনুর বলেন, 'আমি উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে থাকি। আমার আশপাশের সব রাস্তা ডুবে যায় পানিতে। মাদকের ভয়াবহতাও আছে। তাই দুটি সমস্যার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি।' গতকাল সকাল ৮টায় তিনি গণসংযোগ শুরু করেন উত্তরার বিভিন্ন গলিতে; শেষ করেন রাতে। মিতু, সালেহা ও কহিনুরই শুধু নন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৬০০ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। অবশ্য দুই সিটিতে মোট ৮৪৬ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। অনেকে প্রচারণায় নেই দলীয় সমর্থনের প্রতি সম্মান জানিয়ে; আবার অনেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে প্রকাশ্যে নামছেন না। কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার ও প্রচারপত্র অনুযায়ী উভয় সিটি করপোরেশনের চিহ্নিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেহাল রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা, মাদক, যানজট, সন্ত্রাস, মশার উপদ্রব, আবর্জনা, পয়োনিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনা, খেলার মাঠের অভাব প্রভৃতি। সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা এসব সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন। তাঁরা নিজে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, দলে দলে সমর্থকদেরও পাঠাচ্ছেন। কালাচাঁদপুর, নর্দা, শাহজাদপুর, বাড্ডা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। জোয়ার-সাহারা থেকে হেঁটে চলতে চলতেই চোখে পড়ল কর্দমাক্ত পিচহীন রাস্তা- যেন জমি চাষ করা হয়েছে। রাস্তার ওপর এপারে-ওপারে দড়িতে টানানো হচ্ছিল বিভিন্ন প্রার্থীর পলিথিনে মোড়া সাদাকালো পোস্টার। জাকির হোসেন বাবুলের পোস্টার টানানোর দৃশ্য দেখতে দেখতেই স্থানীয় ভোটার মরিয়ম বেগম বললেন, 'যত দিন যাইতাছে খালি পোস্টার বাড়তাছে। আগে কেউ আসে নাই। অহন খালি কয় এইডা দিমু, এইডা করমু। ইলেকশনের পরে আইবো তো?' পরে আসবেন কি না এ নিয়ে সংশয় থাকলেও প্রার্থীরা এখন ঠিকই আসা-যাওয়া করছেন। কালাচাঁদপুর উত্তরপাড়ায় পানের দোকানি মো. শাওন শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাবুল ভাইয়ের লোকেরা এসেছিলেন। তাঁরা বলছেন, বাবুল ভাই জিতলে রাস্তাঘাট ঠিক হয়ে যাবে।' ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী জাকির হোসেন বাবুল। ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন তাঁরই চাচা মো. আফরোজ হাবীব। বাবুল ও হাবীবের পোস্টারে ছেয়ে গেছে ওয়ার্ডের অলিগলি। আফরোজ হাবীব তাঁর প্রচারপত্রে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভালোর সঙ্গে থাকুন, পরিবর্তন আনুন। বাবুলের সমর্থকরা বলছেন, বাবুল ১২ বছর ধরে এলাকাবাসীর সুখে দুঃখে আছেন। আর হাবীবের সমর্থকরা বলছেন, হাবীবই পরিবর্তন আনতে পারবেন। ওয়ার্ডে বাবুল ও হাবীব ছাড়াও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। 'ঝুড়ি' প্রতীক নিয়ে কাজী আবদুল লতিফ আটটি সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী করা, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা আধুনিক করা, জলাবদ্ধতা দূর করা, কমিউনিটি হল নির্মাণ, খেলার মাঠ ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মুল করা, মশা নিধন প্রভৃতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যান মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হক। সেখানকার আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শফিউল্লাহ শফি কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে তাঁর সঙ্গে গণসংযোগ করেন। শফি বলেন, 'তেজগাঁও এলাকা সন্ত্রাস এবং মাদকমুক্ত করা হবে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। ওয়ার্ডেক ওয়াই-ফাই জোনের আওতায় নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। বুধবার রাত ১১টায় ঢাকা উত্তরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফোরকান হোসেন বিএনপি বস্তিতে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এত রাতে প্রচারণায় ভোটাররা বিরক্ত হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বস্তিতে অনেক ধরনের ভোটার আছে, অনেকে সকালে কাজে বেরিয়ে রাতে ফেরে। তাদের কাছে ভোট চাইতেই বস্তিতে গিয়েছিলেন তিনি। ফোরকান প্রতিশ্রুতি দেন, 'বস্তিবাসীর জন্য বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে। স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। বস্তি যেন পরিচ্ছন্ন থাকে তারও ব্যবস্থা করা হবে। কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ফোরকানের প্রস্থানের পর কথা হয় ভোটার আজিমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ভোটের জন্য তাগোর সকালও নাই, রাইতও নাই। ছুইট্টা আসে আমাগো কাছে। ভোট শ্যাষ হইলেই তাদের আর মিলব না।' বস্তির বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, 'বস্তিতে বিদ্যুৎ ও পানির বিলের নামে একটি সিন্ডিকেট অত্যাচার ও জুলুম চালাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমরা বাঁচতে চাই।' বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব উদ্দিন জসিম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এলাকায় খেলার মাঠ নেই, কমিউনিটি সেন্টার নেই- নির্বাচিত হলে এসবের ব্যবস্থা করবেন। মশা মারার এবং রাস্তা ঠিক করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।    

No comments:

Post a Comment