Thursday, April 23, 2015

‘আরও বদলাবে বাংলাদেশ’:প্রথম অালো

তাহলে ৩-০ হওয়ারই অপেক্ষা ছিল! যে উৎসব দেখতে উন্মুখ ছিল গোটা দেশ, কাল রাতে সেই উৎসবে আলোকিত মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। এক ম্যাচ বাকি থাকতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়েও তৃপ্ত ছিলেন না মাশরাফি বিন মুর্তজারা। কিন্তু কাল আজহার আলীর দলকে ‘বাংলাওয়াশ’ করার পর বোধ হয় ঘুচে গেল ১৬ বছরের অতৃপ্তিই। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর জয় মিলছিল না পাকিস্তানের বিপক্ষে। এবার তো সেই জয় এলই, টানা তিন ওয়ানডেতেই জিতে বাংলাদেশ দ
ল যেন জানিয়ে দিল, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ আসলেই বদলে দিয়েছে তাদের। অধিনায়ক মাশরাফির ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও কাল বারবার উচ্চারিত হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশের কথা। তবে মাশরাফির চিন্তায় বদলের অর্থ আরও বড়, ব্যাপক; যার সীমানায় এখনো ঢুকতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ‘আমি মনে করি, আমরা এখনো পুরোপুরি বদলাইনি। আমরা আরও বদলাতে পারি, আরও ভালো করতে পারি। সেটা করতে পারলে এভাবে নিয়মিতই বড় দলকে হারাতে পারব। আমরা সে পথেই আছি’—বলছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রথম দুই ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির পর কাল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিম তো ধারাবাহিক ছিলেন পুরো সিরিজেই। দলে এত পারফরমার, মাশরাফি কি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা দলটা নিয়েই দুমড়ে-মুচড়ে দিলেন পাকিস্তানকে? অধিনায়ক মনে করিয়ে দিলেন, ‘বিশ্বকাপের আগেই আমি বলেছিলাম এই দলটা এখন পর্যন্ত আমাদের সম্ভাব্য সেরা দল। বিশ্বকাপের দল থেকে এই দলে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। প্রায় সেই দলই আছে...।’ সৌম্যর কথা আলাদা করেই বলতে হয়। নিজের দশম ওয়ানডেতে খেলা সেঞ্চুরির ইনিংসটা মন ভরিয়ে দিয়েছে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেরও। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে উদ্দাম আনন্দে জয় উদ্যাপনের এক ফাঁকে কোচ নাকি বলছিলেন, জীবনে অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি দেখেছেন। কিন্তু সৌম্য যে ইনিংস খেললেন, তেমন ইনিংস দেখেননি কারও ব্যাটেই। সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিও প্রশংসায় ভেজালেন পাশে বসে থাকা ম্যান অব দ্য ম্যাচ সৌম্যকে, ‘অস্ট্রেলিয়ার বাবু ভাইকে (প্রবাসী বাংলাদেশি ইকরাম বাবু) আপনারা অনেকেই চেনেন। বিশ্বকাপের সময় উনি দুষ্টুমি করে বলেছিলেন, সৌম্য যে রকম ব্যাটিং করছে, আগামী বিশ্বকাপে নিশ্চয়ই সে তার প্রথম সেঞ্চুরিটা করে ফেলবে। কিন্তু সৌম্য তো আজই (গতকাল) সেটা করে ফেলল!’ শুধু খেলায় নয়, বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ দলের শরীরী ভাষাতেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। দলের কাছে মাশরাফির চাওয়া ছিল সেটিই, ‘আমি শুরু থেকেই শরীরী ভাষা ঠিক করার ওপর জোর দিয়েছি। ছোটখাটো অনেক জিনিসই আছে, যেগুলো পুরো খেলার চিত্র বদলে দেয়। আজ (গতকাল) যেমন নাসিরের ক্যাচটা (ফাওয়াদ আলমের ক্যাচ) ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে।’ মাশরাফির বলে মিড উইকেট থেকে দৌড়ে স্কয়ার লেগে ফাওয়াদের ওই দুর্দান্ত ক্যাচটা নিয়েছেন নাসির। সেটির গুরুত্ব অধিনায়কের কাছে এতই যে, সিরিজ জয়ের চেয়েও এগিয়ে রাখছেন শেষ ওয়ানডে জয়ের আনন্দকে, ‘পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা এবং শেষ ম্যাচে খারাপ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জেতা, দুটোই আনন্দের। তবে খারাপ অবস্থা থেকে ফিরে আসাকেই বেশি এগিয়ে রাখব।’ ব্যাখ্যা করলেন কারণটাও, ‘একটা সময় মনে হচ্ছিল ওরা ৩২০-৩৩০ করে ফেলবে। সেখান থেকে আমরা যেভাবে ফিরে এলাম, এ রকম পেশাদার মনোভাব নিয়ে খেললে বড় দলের বিপক্ষে আরও জয় আসবে।’ মাশরাফি হয়তো তখনই মানবেন, বদলে গেছে বাংলাদেশ দল। কিংবা কে জানে, হয়তো অপেক্ষায় থাকবেন আরও বড় কোনো রূপান্তরের। আবারও বলবেন, এখানেই শেষ নয়।

No comments:

Post a Comment