আন্দামান সাগরে মৃত্যুঝুঁকিতে দিনের পর দিন ভেসে চলা প্রায় সাত হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীকে সাময়িক ঠাঁই দিতে রাজি হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। অসহায় এসব মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারও। এদিকে কয়েক দিন ধরে নিখোঁজ থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশী বোঝাই নৌকাটিরও সন্ধান পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই নৌকার ৪৩৩ জন আরোহীকে। খবর বিবিসি, এএফপি ও
রয়টার্সের। সাগরে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে নৌকায় ভেসে চলা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ঠেলাঠেলিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মহলের তীব্র সমালোচনা, অব্যাহত চাপ ও আহ্বানে শেষ পর্যন্ত সাড়া মিলেছে। নমনীয় হয়েছে দেশ দুটি। গতকাল বুধবার তারা প্রস্তাব দিয়েছে, সাত হাজার ভাসমান অভিবাসন– প্রত্যাশীকে সাময়িকভাবে ঠাঁই দেবে তারা। তবে এরপর আর কাউকে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। এ প্রস্তাবের আগে চলতি মাসেই ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন তিন হাজারের বেশি অভিবাসী। অবশ্য কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক আহ্বানকে পাত্তা না দিয়ে দেশ দুটির পাশাপাশি থাইল্যান্ড ভেসে চলা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উপকূলে ভিড়তে না দিয়ে মধ্য সাগরের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। এই আশ্রয়প্রার্থীদের ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বলেছে, এই সংকট সমাধানে শুধু চাপই নয়, তাদের সহায়তা দেওয়ারও দায়দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। সংকট নিয়ে গতকাল কুয়ালালামপুরে বৈঠকে বসেন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পুনর্বাসন ও প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাব দিচ্ছেন। পুরো প্রক্রিয়া এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সারতে হবে। প্রস্তাবের ব্যাপারে মালয়েশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছি, গভীর সাগরে ভেসে চলা মানুষগুলোকেই আমরা কেবল গ্রহণ করব। কিন্তু অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আরও ঢল নামলে তাঁদের কাউকে কোনো অবস্থাতে গ্রহণ করা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, অভিবাসীদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়শিবির বসানো হবে। তবে তা থাইল্যান্ডে নয়। সাগরপথে নৌকায় করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক লোকজনের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয় থাইল্যান্ড। ত্রিদেশীয় বৈঠকের পর মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ওই যৌথ বিবৃতির বাইরে থাই কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা সাগরে ভাসমান ব্যক্তিদের তল্লাশি করবেন এবং চিকিৎসার জন্য শুধু অসুস্থ ব্যক্তিদের তীরে উঠতে দেবেন। অভিবাসীদের ব্যাপারে গতকাল ব্যাংককে থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চাঁন-ওচাঁ বলেন, ‘আমরা (আরও) অভিবাসীকে গ্রহণ করব কি করব না, সে বিষয়ে জানতে ২৯ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওই দিন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বৈঠকে মিলিত হবে।’ স্বাগত জানাল জাতিসংঘ: মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি আর বিলম্ব না করে ভাসমান ব্যক্তিদের কূলে নিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছে। প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে জেনেভায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গণহারে বাস্তুচ্যুত হওয়ার মূল অনুসন্ধান করা এবং এই মানুষদের আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষা দেওয়াসহ আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সহায়তা করবে মিয়ানমার: অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে সৃষ্ট সংকটের মূলে থাকা মিয়ানমার গতকাল বলেছে, ভাসমান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ‘মানবিক সহায়তা’ দিতে তারা প্রস্তুত। এর আগে এই সংকটের ব্যাপারে কোনো ধরনের দায়দায়িত্ব গ্রহণের কথা নাকচ করে আসছিল দেশটি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি উল্লেখ করে বলা হয়, ওই সব মানুষের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের তারাও এক অংশীদার। সাগরে যে ব্যক্তিই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছেন, তাঁকে মানবিক সহায়তা দিতে তৈরি মিয়ানমার। কয়েক শ অভিবাসী উদ্ধার: ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের উপকূল থেকে গতকাল একটি নৌকার ৪৩৩ জন বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে কর্মকর্তা ও জেলেরা জানিয়েছেন। সাদিকিন নামের এক কর্মকর্তা জানান, উদ্ধার ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ জন নারী, ৭০টি শিশু ও ২৯৩ জন পুরুষ রয়েছেন। এই ব্যক্তিদের উদ্ধারের পর সবুজ রঙের কাঠের নৌকাটিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ওঠেন। তাঁরা নিশ্চিত করেন, ঘোর বিপদে পড়ে সাহায্য চাওয়ার পর কিছুদিন ধরে আন্দামান সাগরে যে নৌকাটির আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না, সেই নৌকাই এটি।
No comments:
Post a Comment